Mamata Banerjee

Rampurhat Clash: দ্রুত বেআইনি অস্ত্র উদ্ধারের নির্দেশ, প্রশ্ন অপেক্ষা কেন!

সম্প্রতি পুলিশের সঙ্গে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের একাংশের যোগসাজশের অভিযোগ বারবার তুলেছেন বিরোধীরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২২ ০৫:০১
Share:

বগটুই গ্রামে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।

রাজ্যে যেখানে যত বেআইনি অস্ত্র, বোমা রয়েছে, অবিলম্বে তল্লাশি অভিযান চালিয়ে তার সমস্ত বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রামপুরহাট-কাণ্ডে নিহতদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে বগটুই গ্রামে পৌঁছে দুপুরে সেখানকার মাটিতে দাঁড়িয়েই এই নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। যার পরে বৃহস্পতিবার বিকেলেই এই সংক্রান্ত লিখিত নির্দেশিকা পাঠানো হল ডিজি মনোজ মালবীয়ের দফতর থেকে।

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘সারা বাংলায় যেখানে যত বোমা, বন্দুক, গুলি আছে, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তা উদ্ধার করে নষ্ট করতে হবে।... যে পুলিশ ফূর্তি করবে, তাদের পুলিশে থাকার দরকার নেই। কয়েক জন পুলিশের জন্য গোটা ডিপার্টমেন্টের বদনাম হবে, এটা আমি মেনে নেব না।’’

স্থানীয়দের একাংশের অভিযোগ, বগটুইয়ে বেছে বেছে বাড়িতে আগুন লাগানোর আগে ব্যাপক বোমাবাজি করা হয়েছিল। তার আগে এখানে খুন হয়েছেন তৃণমূলশাসিত পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ভাদু শেখ। রাজ্যে সাড়া ফেলেছে সম্প্রতি গুলিতে দুই কাউন্সিলর খুন হওয়া এবং দোলের সময়ে খাস কলকাতায় গুলিতে হত্যার ঘটনাও। নদিয়াতেও গুলিবিদ্ধ হয়েছেন এক তৃণমূল নেতা। সব মিলিয়ে, বারবার প্রশ্ন উঠছে, এত অস্ত্র এত সহজে এত জনের হাতে পৌঁছচ্ছে কী ভাবে? সেই প্রেক্ষাপটে এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ তাৎপর্যপূর্ণ হলেও অনেকের জিজ্ঞাসা, বেআইনি অস্ত্র বাজেয়াপ্ত করা তো পুলিশের রুটিন কাজ! তা করতে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের অপেক্ষা করতে হবে কেন?

Advertisement

সম্প্রতি পুলিশের সঙ্গে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের একাংশের যোগসাজশের অভিযোগ বারবার তুলেছেন বিরোধীরা। তাঁদের বক্তব্য, অস্ত্র মূলত তাঁদের আশ্রিত দুষ্কৃতীদের হাতে। ফলে এখানেও প্রশ্ন, সেই যোগসাজশ কি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, পুলিশ সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর সবুজ সঙ্কেত ছাড়া পদক্ষেপে অপারগ?

এ দিন মমতার নির্দেশের পরে সমস্ত পুলিশ সুপার এবং পুলিশ কমিশনারকে (কলকাতা বাদে) ডিজি-র নির্দেশ, অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র-গুলি-বোমা উদ্ধারে নিবিড় অভিযান চালাতে হবে। রেঞ্জ ডিআইজি, জ়োনাল আইজি-এডিজিরাও জেলায় জেলায় ওই অভিযানের তত্ত্বাবধান করবেন। তার তথ্য পৃথক ভাবে জানাতেও হবে।

ডিজি-র আরও নির্দেশ, রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে সংঘর্ষ অথবা রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠী সংঘর্ষ ঠেকাতে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগকে আরও বেশি তৎপর হতে হবে। প্রতিটি থানা এলাকায় চিহ্নিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে হবে। দু’দিনের মধ্যে করতে হবে ‘রোগ-রেজিস্টারের’ পরিমার্জন। রেঞ্জ ডিআইজি, জ়োনাল আইজি, এডিজি-রা অপরাধ তত্ত্বাবধানের নথি তৈরি করবেন। আগামী ১০ দিন ওই সব অপরাধ এবং পদক্ষেপের তথ্য রিপোর্ট আকারে তৈরি করতে হবে।

এ ছাড়াও গোয়েন্দা তথ্য জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন। এলাকার স্পর্শকাতরতার উপরে নির্ভর করে ওয়ার্ড এবং গ্রাম পঞ্চায়েতগুলির সম্পর্কে তথ্য তৈরি করতে হবে এবং সেই অনুসারে জেলা পুলিশ সুপার, ওসিদের মাধ্যমে পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। সিনিয়র অফিসারদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। নবান্নের নির্দেশ, কলকাতার নিকটবর্তী জেলা এবং কমিশনারেটের আওতায় থাকা পদস্থ পুলিশ কর্তারা বিনা অনুমতিতে এলাকা ছাড়তে পারবেন না।

এক পুলিশ কর্তা জানান, কোথায় কোথায় রাজনৈতিক সংঘর্ষ হয়েছে বা সেই সম্ভবনা রয়েছে, তার তালিকা তৈরি হবে। জেলার এসপি এবং সিপিদের এই বিষয়ে জেলার গোয়েন্দাদের অবগত করে তা নিয়ে বিস্তারিত তথ্য জোগাড় করতে বলা হয়েছে। এর ভিত্তিতে এসপির নজরদারিতে থানাগুলি যাতে সতর্ক হতে পারে, পুলিশের শীর্ষকর্তা সেই নির্দেশ জারি করেছেন।

পুলিশের একটি অংশের মতে, রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় যে গোলমাল হচ্ছে, তার বেশির ভাগ হয় রাজনৈতিক দলের মধ্যে সংঘর্ষ, নয়তো শাসক দলের অভ্যন্তরীণ গোলমাল। এ দিনই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে রামপুরহাটে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি আনারুল হুসেনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশের একাংশের মতে, গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের ক্ষেত্রেও ব্যবস্থা নেওয়ার মতো ‘সাহস’ সব ক্ষেত্রে জেলা পুলিশের নেই। এখন সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী বলে দেওয়ার পরে তবে শুরু হয়েছে তৎপরতা। অভিযোগ, শাসক দলের সঙ্গে অত্যধিক ‘ঘনিষ্ঠতার’ ফলেই পুলিশের একটি অংশ গভীরে ঢুকে তথ্য জোগাড় করতে চাইছে না। ফলে গোলমালের আগাম খবর পুলিশের নিচুতলার কাছে থাকছে না।

রাজ্য পুলিশ সূত্রের দাবি, বৃহস্পতিবার থেকে রাজ্যের থানাগুলিকে নিজের এলাকার দুষ্কৃতীদের তালিকা (রাফ রেজিস্টার) তৈরি করতে বলা হয়েছে। তাদের বর্তমান ঠিকানা লিখে রাখতে হবে। ওই রাফ রেজিস্টার থানাগুলি মানছে কি না, তা এসপিদের দেখতে বলা হয়েছে। এলাকায় শান্তি বজায় রাখতে দুষ্কৃতীদের কাছ থেকে মুচলেকা লিখিয়ে নিতেও বলা হয়েছে। ভোটের আগে এলাকায় শান্তি বজায় রাখতে অনেক সময়ে যা করা হয়।

রাজ্য পুলিশের একটি অংশের মতে, আগে জেলাগুলির সঙ্গে সিআইডি রাজ্য জুড়ে বেআইনি অস্ত্রের বিরুদ্ধে অভিযান চালাত। ফলে রাজ্য জুড়ে নিয়মিত বেআইনি অস্ত্র ধরা পড়ত। অভিযোগ, সিআইডি এখন ওই অভিযান নিয়মিত করে না। রাজ্য পুলিশের এসটিএফ মাঝেমধ্যে অস্ত্রের বিরুদ্ধে অভিযান করলেও, সাধারণ দুষ্কৃতীদের হাতে পৌঁছে যাওয়া অস্ত্র উদ্ধার মূলত জেলা পুলিশ করে। উত্তরবঙ্গের এক পুলিশ অফিসারের কথায়, সময়ের সঙ্গে দুষ্কৃতীদের সঙ্গে রাজনৈতিক যোগ বেড়েছে। আর এর জেরেই পুলিশের একটি অংশের সক্রিয়তা কমে গিয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement