কত কী যে হয়! ছানা দিয়ে তৈরি কালী হাতে নিয়ে অবাক তিনি

মান রাখল মিহিদানা-সীতাভোগ। ভাল ব্যাট করল ল্যাংচাও। অতএব, আগের বার খসে পড়লেও এ বার আর তেমন বিপত্তি ঘটল না! ব্র্যান্ড বর্ধমানের এই তিন মিষ্টি দিয়েই বেশ শক্তপোক্ত ‘কার্জন গেট’ তৈরি করে মুখ্যমন্ত্রীর হাতে তুলে দিল ‘সীতাভোগ ও মিহিদানা ট্রেডার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:২০
Share:

‘মিষ্টি-কালী’ উপহার মুখ্যমন্ত্রীকে। সোমবার মাটি উৎসবে। ছবি: উদিত সিংহ

মান রাখল মিহিদানা-সীতাভোগ। ভাল ব্যাট করল ল্যাংচাও। অতএব, আগের বার খসে পড়লেও এ বার আর তেমন বিপত্তি ঘটল না!

Advertisement

ব্র্যান্ড বর্ধমানের এই তিন মিষ্টি দিয়েই বেশ শক্তপোক্ত ‘কার্জন গেট’ তৈরি করে মুখ্যমন্ত্রীর হাতে তুলে দিল ‘সীতাভোগ ও মিহিদানা ট্রেডার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন। সোমবার বিকেলে ‘মাটি মঞ্চ’-এ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই বড়সড় ‘মিষ্টি তোরণ’ হাতে নিতেই তাতে জ্বলে উঠল সবজে এলইডি আলো! বেজে উঠল রবীন্দ্রসঙ্গীত। মমতার মুখে তখন একগাল হাসি।

বর্ধমান মানেই যেমন মিহিদানা-সীতাভোগ, তেমনই বর্ধমান মানে কার্জন গেট বা বিজয় তোরণ। তাই, এক বছর আগেও এই মাটি উৎসবের মঞ্চেই মুখ্যমন্ত্রীর হাতে উপহার হিসাবে মিহিদানা-সীতাভোগের ‘কার্জন গেট’ তুলে দিয়েছিলেন ওই মিষ্টান্ন সমিতির কর্মকর্তারা। কিন্তু, মমতা হাতে নিতেই তোরণ খসে পড়ে গিয়েছিল। এ বার তাই আঁটঘাট বেঁধে নেমেছিলেন তাঁরা। অ্যাসোসিয়েশনের কর্তারা জানালেন, মিষ্টির তৈরি কার্জন গেটটি লম্বায় সাড়ে তিন ফুট। চওড়া তিন ফুট। তৈরি করতে ১৬ কেজি সীতাভোগ, ১০ কেজি মিহিদানা লেগেছে। কার্জন গেটের থাম শক্তপোক্ত করতে ব্যবহার করা হয়েছে বর্ধমানের বিখ্যাত ল্যাংচা। সমিতির অন্যতম কর্তা সৌমেন দাস, দিলীপ ভগতদের কথায়, “টানা দু’দিন চার জন কারিগর মিলে তৈরি করেছেন এই বিজয় তোরণ।’’ কিন্তু এ বার তো খসে পড়ল না? সহ-সম্পাদক প্রসিদ্ধ সিংহ জানালেন, এ বার বিশেষ প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে তৈরি করা হয়েছে। সে জন্য গত বারের মতো অবস্থা হয়নি।

Advertisement

ওই উপহার হাতে পেয়েই ‘মিষ্টি বাংলা হাব’ সম্পর্কে খোঁজ নিলেন মুখ্যমন্ত্রী। জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিলেন মার্চের মধ্যে ওই হাবের কাজ শেষ করতে হবে। ১৪ মার্চ, তিনি কৃষক-সম্মানের দিন তিনি উদ্বোধন করতে চান। মমতার নির্দেশ, “আর যেন দেরি না হয়।”

গত বছর বর্ধমানের সাধনপুরের কৃষি খামারে তৈরি হওয়া ‘মাটি তীর্থে’ এসে ‘ল্যাংচা হাব’ তৈরির ঘোষণা করেছিলেন মমতা। কিন্তু জায়গার সমস্যার জন্য অগস্টে প্রশাসনিক বৈঠকে এসে মুখ্যমন্ত্রী ‘মিষ্টি বাংলা হাব’ গড়ে তুলবেন বলে ঘোষণা করেন। সেই মতো বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার স্পেশালিটি (অনাময়) শাখার পাশেই মিষ্টি বাংলা হাব তৈরির জন্য নির্মাণকাজ শুরু করেছিল প্রশাসন। কিন্তু জমিদাতাদের আপত্তিতে কাজ শুরু করতে পারেনি প্রশাসন। মুখ্যমন্ত্রী মিষ্টি হাব সরানোর জন্য জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেন। বলেছিলেন, ‘‘যেখানে লোকে চাইবে না, সেখানে কেন হবে (হাব)!’’ এর পরেই শহরের উপকন্ঠ বামচাঁদাই বটতলায় একটি জায়গা দেখে মিষ্টি হাবের কাজ শুরু করেছে প্রশাসন। তবে, এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর বলে দেওয়া ১৪ মার্চের মধ্যে কাজ শেষ হওয়া নিয়ে সংশয়ে প্রশাসনের কর্তারাই। তাঁদের কথায়, “এখনও পর্যন্ত ৩০ শতাংশ কাজ হয়েছে। বাকি কাজ কী ভাবে দেড় মাসের মধ্যে শেষ হবে?”

এ দিনের অনুষ্ঠানে ‘কার্জন গেট’ ছাড়াও মুখ্যমন্ত্রীর হাতে ক্রিমের তৈরি তৃণমূলের দলীয় পতাকা এবং ক্ষীরের কালীমূর্তি তুলে দেওয়া হয়। তৃণমূলের পতাকা তৈরি করতে দুই কেজি ক্রিম ও কালীর জন্য আড়াই কেজি ক্ষীর লেগেছে বলে জানিয়েছে ‘সীতাভোগ ও মিহিদানা ট্রেডার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন। সমিতির কর্তারা জানালেন, দ্বিতীয় দফায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে কালীঘাটের বাড়িতেও পতাকা ও মূর্তি তৈরি করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু সে সবও সব খসে পড়েছিল।

এ দিন আর তা হয়নি। বরং মুখ্যমন্ত্রী বললেন, “ছানা দিয়ে কালীমূর্তি! কত কী যে হয়!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন