পাহাড়ে সব দলকে ডাক মুখ্যমন্ত্রীর

মঙ্গলবার উত্তর দিনাজপুর জেলার প্রশাসনিক বৈঠকের আগে এক জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘পাহাড়ের বেশির ভাগ মানুষই সরল মনের। তাঁরা বন্‌ধ, অশান্তি, হিংসা চান না। উন্নয়ন চান।

Advertisement

কিশোর সাহা

চোপড়া (উত্তর দিনাজপুর) শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৭ ০৫:২৯
Share:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ফাইল চিত্র।

শুধু গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা নয়, দার্জিলিঙের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পাহাড়ের সব দলকে উদ্যোগী হওয়ার বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবং এমন একটা দিনে তিনি এই ডাক দিলেন, যে দিন দিল্লিতে পাহাড়ের দলগুলির সর্বদল বৈঠকেও বন্‌ধ তুলে নেওয়ার দাবি উঠল।

Advertisement

মঙ্গলবার উত্তর দিনাজপুর জেলার প্রশাসনিক বৈঠকের আগে এক জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘পাহাড়ের বেশির ভাগ মানুষই সরল মনের। তাঁরা বন্‌ধ, অশান্তি, হিংসা চান না। উন্নয়ন চান। কিন্তু, এখন পাহাড়বাসীদের অনেকের বুক ফাটলেও মুখ ফুটে তাঁরা কিছু বলতে পারছেন না। এই ভোগান্তি দূর করতে পাহাড়ের সব দলকে আগে জনজীবন স্বাভাবিক রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।’’ একই সঙ্গে তিনি জানান, দার্জিলিঙের জনজীবন স্বাভাবিক করে পাহাড়ের দলগুলি যদি তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে আলোচনায় বসতে চায়, তা হলেও তিনি রাজি। তবে তাঁর স্পষ্ট কথা, ‘‘জীবন চলে গেলেও বাংলাকে ভাগ হতে দেব না।’’

পাহাড়ে মোর্চার ডাকা বন‌্ধ ৪৮ দিনে পড়ল। হালে পুলিশি কড়াকড়িতে পাহাড়ে হিংসাত্মক ঘটনাপ্রবাহ কিছুটা কমেছে। সমতলে আন্দোলন ছড়াতে গিয়েও কোনও কোনও ক্ষেত্রে জনতার প্রতিরোধের মুখে পিছু হটছে মোর্চা। উপরন্তু, বন‌্ধ তুলে নিয়ে আলোচনায় বসার জন্য পাহাড়ের সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী, চা শিল্প মহলের তরফেও চাপ বাড়ানো হয়েছে।

Advertisement


আদর: উত্তর দিনাজপুরে কালাগছে এক অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

এই অবস্থায় মুখ্যমন্ত্রী এ দিন ফের আলোচনায় বসার বার্তা দিলেন। আর এ দিনই দিল্লিতে সর্বদল বৈঠকে এনসিপি, বিজেপির মতো জাতীয় দলের প্রতিনিধিরা বন্‌ধ প্রত্যাহারের দাবি তুললেন। সেই দাবিকে সমর্থন করল পাহাড়ের কিছু ছোট দলও। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে মীমাংসার জন্য ফোন যায় মোর্চা প্রধান বিমল গুরুঙ্গের কাছে। কিন্তু গুরুঙ্গ তাঁর পুরনো অবস্থান থেকে সরতে চাননি। তিনি জানান, এখন বন্‌ধ তুলে নিলে আন্দোলন দুর্বল হয়ে পড়বে। পাহাড়ে আধাসেনা ও রাজ্য প্রশাসন চেপে বসবে। এর পরেই ধর্মঘট চালানোর সিদ্ধান্তে সিলমোহর দেয় গোর্খাল্যান্ড সমন্বয় কমিটি।

আরও পড়ুন:মেয়ে হওয়ায় বঁটির কোপ, অ্যাসিড

বন্‌ধ শিথিল করা নিয়ে মোর্চার মধ্যেও চাপ কম নয়। দলের নিচুতলার অনেকেই চাইছেন, স্বাধীনতা দিবসের আগে সাময়িক ভাবে স্বাভাবিক হোক পরিস্থিতি। মোর্চার কয়েক জন নেতাও রফা সূত্র খুঁজছেন। কারণ, পাহাড়ে যুব মোর্চার যে সদস্যরা অনশনে বসেছেন, তাঁদের শারীরিক অবস্থা নিয়ে দলের অনেকেই চিন্তিত। সূত্রের খবর, ওই সদস্যদের অবস্থার অবনতি হচ্ছে ক্রমশই। মোর্চা নেতারা তাই চাইছেন, অন্তত এই যুবকদের কথা ভেবে মধ্যস্থতার কথা বলুক কেন্দ্র। আলোচনার দরজা খোলা হোক। একই সঙ্গে মোর্চা নেতারা জানেন, আলোচনার টেবিলে বসলে তাঁদেরও দম ফেলার জন্য কিছুটা সময় মিলবে।

এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা তাই উড়িয়ে দিতে পারেনি মোর্চা। মোর্চার সহকারী সম্পাদক জ্যোতিকুমার রাই বলেন, ‘‘আমাদের দাবির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরুর আশ্বাস দিলেই তো পাহাড় ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে যাবে। মনে রাখতে হবে, পাহাড়ে কোনও নৈরাজ্য চলছে না। যা হচ্ছে রাজনৈতিক আন্দোলন। রাজনৈতিক ভাবেই সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করতে হবে সব পক্ষকে।’’

তাই স্বাধীনতা দিবসের আগে পাহাড়ের সমস্যার বরফ কিছুটা হলেও গলবে বলে আশায় বুক বেঁধেছেন পাহাড় ও সমতলের অনেকেই।

(সহ-প্রতিবেদন: অনমিত্র সেনগুপ্ত)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন