ফাইল চিত্র।
তৃণমূলের পাঁচ প্রতিনিধি যে দিন জিটিএ-র সদস্য হিসেবে শপথ নিলেন, সে দিন, দার্জিলিঙের সেই মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘আমি দখল নিতে আসব না। ভালবাসার টানেই পাহাড়ে আসি। গোটা পাহাড় সব সময় হাসুক, এটাই চাই।’’ তার পরে যোগ করেন, ‘‘শান্তি থাকুক। পাহাড়ের উন্নয়ন হোক।’’
এ বারে অনীত থাপার প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার অন্যতম সহযোগী হিসেবে জিটিএ ভোটে লড়েছিল তৃণমূল। সরাসরি জোট না হলেও দু’দলের শীর্ষ নেতৃত্ব মেনে নিয়েছেন, সমঝোতা হয়েছিল তাঁদের। সেখানে দশটি আসন প্রার্থী দিয়ে পাঁচটিতে জেতে তৃণমূল। গত কয়েক দশকে সমতলের কোনও দল পাহাড়ে এত ভাল ফল করতে পারেনি। মঙ্গলবার জিটিএ-র জয়ী সদস্যদের শপথগ্রহণ হল দার্জিলিং ম্যালে। সেই অনুষ্ঠানের মঞ্চে দাঁড়িয়ে রাজ্য ভাগ প্রসঙ্গে সরাসরি একটিও কথা না বললেও মুখ্যমন্ত্রী পাহাড়ে অশান্তি এবং তার ফলে উন্নয়নের গতি স্তব্ধ হয়ে থাকার কথা বারবার বলেন।
পাহাড়ে অশান্তির ইতিহাস দীর্ঘ। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বাইরের রাজ্যগুলি থেকে প্রচুর লোক বাংলায় আসেন। কারণ, এখানে শান্তি বজায় থাকে। পাহাড়েও শান্তি বজায় রাখতে হবে।’’ এর পরে তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘শান্তি থাকলেই অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব।’’ কী ধরনের উন্নয়ন? মুখ্যমন্ত্রী বিভিন্ন প্রকল্পের তালিকা দেন। একই সঙ্গে বলেন, নতুন করে ৪টি স্কিল প্রশিক্ষণ কলেজ করা হবে। অশান্তি বন্ধ, তাই এ বারে যেন তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলিও পাহাড়ে বিনিয়োগ করেন, অনুরোধ জানান মুখ্যমন্ত্রী। এই উন্নয়নের কাজ যে জিটিএ-র মাধ্যমেই হবে, তা স্পষ্ট করে দিয়ে তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘গত ১০ বছরের জিটিএকে আমরা সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা দিয়েছি। আরও টাকা আছে।’’ এবং এ ক্ষেত্রেও তিনি পুরনো আমলের দিকে পরোক্ষে আঙুল তুলে বলেন, ‘‘পুরনো কথা আর বলতে চাই না। কিন্তু গড়বড় করলে চলবে না। শান্তি বজায় রেখে কাজ করে যেতে হবে।’’ নতুন সদস্যদের তিনি অভিনন্দনও জানান।
বিরোধীরা মুখ্যমন্ত্রীর এই পাহাড় সফরকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। এক দিকে বলা হয়, মুখ্যমন্ত্রী যে অনীত থাপার আমন্ত্রণে এ দিন এসেছেন, সেই প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার প্রধানই জিটিএ-র প্রথম বৈঠকে আলাদা গোর্খাল্যান্ড রাজ্য গঠনের রূপরেখা তৈরির প্রস্তাব করতে চান। তৃণমূল সূত্রে বলা হয়েছে, সে জন্য আপাতত জিটিএ বোর্ডে না গিয়ে অনীতদের বাইরে থেকে সমর্থন জানাবে তৃণমূল। বিজেপির মুখপাত্র তথা দার্জিলিঙের সাংসদ রাজু বিস্তা বলেন, ‘‘উনি ভাষণ ছাড়া পাহাড়ের জন্য কিছু করেননি। আমি টাকার হিসেবের জন্য সরকারকে চ্যালেঞ্জ করছি। কেন্দ্রের প্রকল্প নিজেদের বলে চালানো আর ক্ষমতা দখল করাই ওঁর কাজ।’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর কটাক্ষ, মুখ্যমন্ত্রী ‘প্রলোভনের ফাঁদে দার্জিলিংয়ের মানুষকে ম্যানেজ করছেন’।