‘বেচাল আর বরদাস্ত করব না’, দলীয় দ্বন্দ্বের কাঁটা তুলতে কড়া মমতা

সুখের সংসার এখন তাঁর। তার মধ্যেও যেটুকু কাঁটা রয়েছে প্রথম দিন থেকেই তা নির্মূল করার বার্তা দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিধানসভা ভোটে বিপুল সাফল্যের পর শুক্রবারই কালীঘাটের বাড়িতে দলের নব নির্বাচিত বিধায়কদের নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন মমতা।

Advertisement

দেবারতি সিংহচৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৬ ০৩:৫৮
Share:

অভিনন্দন। দ্বিতীয় বার জয়ের পরে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার। —নিজস্ব চিত্র।

সুখের সংসার এখন তাঁর। তার মধ্যেও যেটুকু কাঁটা রয়েছে প্রথম দিন থেকেই তা নির্মূল করার বার্তা দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

বিধানসভা ভোটে বিপুল সাফল্যের পর শুক্রবারই কালীঘাটের বাড়িতে দলের নব নির্বাচিত বিধায়কদের নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন মমতা। পরিষদীয় দলের বৈঠক ডেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে তাঁকে নেতা নির্বাচিত করার কথা ছিল। ভাবা হয়েছিল, নেত্রী বুঝি থাকবেন খুশির মেজাজে। ছিলেনও তাই। কিন্তু একই সঙ্গে নেত্রী এ দিন কঠোরও। তাঁর কথা অনুযায়ী ২৯৪টি আসনে তিনিই প্রার্থী ছিলেন। জিতেছেন ২১১টায়। তা হলে বাকি আসনগুলির কী হল? সেই কাঁটা যেমন তাঁকে এখনও বিঁধছে, তেমনই বিঁধছে ভোট চলাকালীন দলের কিছু নেতার ভাবগতিক। কেউ ভরা ভোটের মাঝেই দুর্নীতি নিয়ে সরব হয়ে দলের মুখ পুড়িয়েছেন। কেউ সতীর্থকে পরাস্ত করতে পিছন থেকে কলকাঠি নেড়েছেন। কারও কারও ঔদ্ধত্য নিয়ে দলের মধ্যেই ক্ষোভ রয়েছে। আর কিছু জেলায় দলের নেতারা পারস্পরিক দ্বন্দ্বে এতটাই লিপ্ত ছিলেন যে, তাতে কোথাও ক্ষতি হয়েছে, কোথাও বা ক্ষতি হতে হতে বেঁচে গিয়েছে! ধরে ধরে সেই ঘটনাগুলি সামনে রেখে মমতা এদিন স্পষ্ট বলে দেন, এ সব বেচাল আর বরদাস্ত করবেন না।

সূত্রের মতে, মমতার হিট লিস্টের প্রথমেই ছিলেন ব্যারাকপুরের সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদী। ভরা ভোটের মাঝে নারদ কাণ্ড নিয়ে দীনেশের মন্তব্য ঘোর অস্বস্তিতে ফেলেছিল তৃণমূল নেত্রীকে। দীনেশ বলেছিলেন, তিনি দলের সভাপতি হলে নারদ অভিযুক্তদের ঘরে বসিয়ে দিতেন। এ দিন তাঁর নাম মুখে আনেননি মমতা। কিন্তু বলেন, দলের প্রবীণ কোনও সাংসদ বা নেতা যদি ভোট চলাকালীন ‘উল্টোপাল্টা’ বলে বেড়ান তার থেকে বড় দলবিরোধী কাজ আর কিছুই হতে পারে না। এ ধরনের আচরণ ভবিষ্যতে বরদাস্ত করা হবে না। বস্তুত তৃণমূলের অনেকের মত, দীনেশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র। সংসদে রেল মন্ত্রক সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির এখন চেয়ারম্যান তিনি। সেটা এ বার হাতছাড়া হতে পারে দীনেশের।

Advertisement

বারবার সতর্ক করা সত্ত্বেও এ বার ভোটে মালদহ ও দক্ষিণ দিনাজপুরে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে রাশ টানা যায়নি। ভোটগ্রহণের দিন পর্যন্ত দক্ষিণ দিনাজপুরে তার প্রতিফলন দেখা গিয়েছে। এ দিন সেই প্রসঙ্গ তুলে মমতা বলেন, ‘‘নিজেদের মধ্যে লড়াই করলে কী হাল হয় তা তো দেখতেই পেলেন!’’ তৃণমূলের একটি সূত্রের মতে ইংলিশবাজারের প্রাক্তন বিধায়ক কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী সম্পর্কে তিনি এ দিন বলেন, ‘‘অন্যকে হারাতে গিয়ে ও নিজেই হেরে গিয়েছে। বাকিরাও হেরেছেন।’’ রাজ্য জুড়ে এই বিপুল সাফল্য সত্ত্বেও দার্জিলিং ও মালদহে এ বার খাতা খুলতেই পারেনি তৃণমূল। এ জন্য মালদহের নেতাদের ওপর চটে রয়েছেন নেত্রী। তিনি জানান, এ বার কলকাতা থেকে একজন সর্বক্ষণের পর্যবেক্ষক মালদহে রাখা হবে।

শুধু মালদহ নয়, শিলিগুড়িতে দলের পরাজয়ের জন্যও মমতা এ দিন কৈফিয়ত চান উত্তরবঙ্গের নেতা গৌতম দেবের কাছে। সূত্রের খবর, নেত্রী তাঁকে জানিয়ে দেন, সেখানকার যে সব নেতা প্রোমোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেন তাঁদের সবাইকে এ বার সাংগঠনিক দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেবেন। নদিয়া ও পূর্ব মেদিনীপুরে ফল মোটামুটি ভাল হলেও সেখানেও আসন ধরে ধরে ব্যর্থতার কারণ খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন মমতা। কেন শান্তিপুরে হারতে হয়েছে, তা নদিয়ার জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্তকে পর্যালোচনা করার নির্দেশ দেন। একই ভাবে শুভেন্দু অধিকারীকে বলেন, ‘‘তুমি দেখো কেন হলদিয়ায় আমরা হেরে গেলাম। তমলুক, পাঁশকুড়াতেই বা কেন হারলাম।’’ ভাঙড়ের প্রসঙ্গও তোলেন মমতা। বলেন, ‘‘আমি জানি আরাবুল রেজ্জাকদাকে হারানোর চেষ্টা করেছিল। এ সবেরই ব্যবস্থা হবে।’’

তবে শুধু শাসন নয়। যাঁরা লড়াই করে জিতেছেন, তাঁদের প্রশংসাও করেছেন নেত্রী। তাঁদের মধ্যে অন্যতম নারায়ণগড় থেকে জেতা প্রদ্যোৎ ঘোষ, ডোমজুড়ের প্রার্থী তথা প্রাক্তন মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, তালড্যাংরা থেকে জয়ী সমীর চক্রবর্তী। কেশপুর থেকে জেতার জন্য শিউলি সাহাকেও অভিনন্দন জানান মমতা। বলেন, ‘‘জায়গাটা ভাল নয়, সাবধানে থেকো।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন