তিন বছরের মেয়ের প্রচুর খরচ, মেরেই দিল বাবা

মেয়ে হওয়ার পর থেকেই বাড়িতে টানা অশান্তি। মানসিক অবসাদে ভুগতে ভুগতে তিন বছরের মৌসুমীকে কারণে-অকারণে পেটাত তার বাবা রঘুনাথ সিংহ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৭ ০২:৫৯
Share:

ধৃত: রঘুনাথ সিংহ। —নিজস্ব চিত্র।

মেয়ে হওয়ার পর থেকেই বাড়িতে টানা অশান্তি। মানসিক অবসাদে ভুগতে ভুগতে তিন বছরের মৌসুমীকে কারণে-অকারণে পেটাত তার বাবা রঘুনাথ সিংহ। আর স্ত্রী সন্ধ্যাকে বলত, ‘‘টানাটানির সংসারে ছেলে হলে রোজগার বাড়ত। মেয়ের বিয়ে দিতে অনেক টাকা লাগবে। এর থেকে ওকে গলা টিপে মেরে দিতে পারলে ভাল হতো।’’

Advertisement

শনিবার রাতে সেই মেয়েকে যখন অচৈতন্য অবস্থায় ঝাড়গ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়, তখন তার নরম গলায় দগদগে আঙুলের ছাপ। আনার একটু পরেই চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেছিলেন তাকে। কিন্তু রঘুনাথের মুখের কথা বিশ্বাস করেননি। সে বলেছিল, কীটনাশক খেয়ে ফেলেছে মেয়ে। গলার দাগটা দেখে সন্দেহ হওয়ায় রঘুনাথকে আটকে রেখে পুলিশ ডেকেছিলেন ডাক্তারেরা। রাতের দিকে পুলিশি জেরার মুখে রঘুনাথ স্বীকার করে, মেয়ে হয়ে জন্মেছিল বলেই মৌসুমীকে মেরে ফেলেছে সে।

শনিবার রাতেই বেলিয়াবেড়া থানায় রঘুনাথের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন তার স্ত্রী। পেটবিন্ধি পঞ্চায়েত এলাকার কলাবেড়িয়া গ্রামের দিনমজুর রঘুনাথের সঙ্গে সন্ধ্যার বিয়ে হয়েছিল বছর চারেক আগে। রঘুনাথ কী ভাবে মেয়েকে গলা টিপে মারার কথা বারবার বলত, সন্ধ্যাই তা পুলিশকে জানিয়েছেন। সন্ধ্যার দাবি, শনিবার বিকেলে কাজের জন্য বাড়ির বাইরে গিয়েছিলেন তিনি। ফিরে এসে দেখেন, মেঝেতে পড়ে রয়েছে মৌসুমী। কী হয়েছে জানতে চাইলে স্বামী বলেছিল, মেয়ে কীটনাশক খেয়েছে। পড়িমরি করে মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে ছোটেন মা। সঙ্গে যায় রঘুনাথও। সেখানেই ফাঁস হয়ে যায় আসল ঘটনা।

Advertisement

আরও পড়ুন: রাজীব-স্মরণ ঘিরে রাজধানীতে বিরোধী ঐক্যের সুর

ঝাড়গ্রামের এসপি অভিষেক গুপ্ত জানান, খুন ও তথ্য-প্রমাণ লোপাটের অভিযোগে মামলা হয়েছে রঘুনাথের বিরুদ্ধে। রবিবার ভারপ্রাপ্ত এসিজেএম সঞ্জীব রায়ের এজলাসে তোলা হলে তার পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।

এই ঘটনায় স্তম্ভিত গোটা জেলা। ঝাড়গ্রামের এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সম্পাদিকা স্বাতী দত্ত বলেন, ‘‘বাস্তব এটাই। রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকার যতই চেষ্টা করুক, আটকানো যাচ্ছে না বাল্যবিবাহ, কন্যাভ্রূণ হত্যা। এই ঘটনা তো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, মেয়েরা কোথায় দাঁড়িয়ে।’’

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কন্যাশ্রী প্রকল্প, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’ আহ্বান— কোনও কিছুই কাজে লাগল না মৌসুমীর। তিন বছরের ছোট্ট জীবনটা শেষ হয়ে গেল শুধু মেয়ে হওয়ার ‘অপরাধেই’!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন