CPM

CPM: বিমান-শ্যামলদের বদলে বাংলা থেকে নতুন কেন্দ্রীয় কমিটিতে কারা, নানা অঙ্ক সিপিএমে

সিপিএমের বিদায়ী পলিটবুরোয় বাঙালি মুখের সংখ্যা ছিল যথেষ্টই ভারী। মোট ১৭ জনের পলিটবুরোয়া বাঙালি নেতা ৭ জন।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২২ ০৫:১৩
Share:

ফাইল চিত্র।

বাংলায় রাজ্য নেতৃত্ব থেকে এক লপ্তে সরে গিয়েছেন পুরনোদের অনেকে। রাজ্য কমিটিতে উঠে এসেছে পরবর্তী প্রজন্মের এক ঝাঁক মুখ। কিন্তু এ বার বাংলা থেকে সিপিএমের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটিতে কারা যাবেন বা থাকবেন, সেই প্রশ্নে শুরু হয়েছে নানা অঙ্ক।

Advertisement

কেরলের কান্নুরে আগামী ৬ এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে সিপিএমের ২৩তম পার্টি কংগ্রেস। সংগঠনের নতুন নিয়ম অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় কমিটিতে থাকার জন্য বয়সের ঊর্ধ্বসীমা এখন ৭৫। পলিটবুরো ঠিক করেছে, যাঁদের বয়স এখনও ৭৫ হয়নি অথচ পরের সম্মেলনের মধ্যে সেই গণ্ডিতে তাঁরা ঢুকে পড়বেন, তাঁদের এখনই বয়সের কারণে অন্তত পলিটবুরো থেকে সরানো হবে না। বয়স-নীতি মানতে গিয়েই দেখা যাচ্ছে, এমন বেশ কিছু নেতা আছেন যাঁরা রাজ্য কমিটি থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন (ঊর্ধ্বসীমা ছিল ৭২) কিন্তু কেন্দ্রীয় কমিটির অবসরের বিন্দুতে তাঁরা এখনও পৌঁছননি। এই অংশের মধ্যে কাদের রেখে দেওয়া হবে, নতুন হিসেবে কাদেরই বা জায়গা দেওয়া হবে, সে সবের জন্যই নানা সমীকরণ কষে দেখা হচ্ছে!

সিপিএমের বিদায়ী পলিটবুরোয় বাঙালি মুখের সংখ্যা ছিল যথেষ্টই ভারী। মোট ১৭ জনের পলিটবুরোয়া বাঙালি নেতা ৭ জন। এই ক্ষেত্রে বাংলার হিসেব এ বার তুলনায় সহজ। এ রাজ্য থেকে পলিটবুরোয় আছেন তিন জন— বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র ও মহম্মদ সেলিম। বিমানবাবু অবসর নেবেন, তাঁর জায়গায় শ্রীদাপ ভট্টাচার্যের অন্তর্ভুক্তির সম্ভাবনা প্রবল। ত্রিপুরার বিরোধী দলনেতা মানিক সরকারেরও পলিটবুরোয় থেকে যাওয়ার কথা। বাঙালি কিন্তু দিল্লি-সহ কেন্দ্রীয় স্তরে কাজ করে পলিটবুরোয় জায়গা পেয়েছেন, এমন তিন নেতার মধ্যে হান্নান মোল্লা বয়সের সীমা পেরিয়ে যাচ্ছেন। তবে কৃষক আন্দোলনের সাফল্যের কথা মনে রেখে কৃষক সভার সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হান্নানের জন্য ‘ব্যতিক্রম’ ঘটাতে চায় দলের একাংশ। আবার অন্য দিকে, সিটুর সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তপন সেনের জায়গায় শ্রমিক সংগঠনের সর্বভারতীয় সভানেত্রী কে হেমলতাকে বাড়তি মহিলা মুখ হিসেবে জায়গা করে দেওয়ার দাবি আছে দলের একাংশে। সিপিএমের অন্দরের খবর, আর এক বাঙালি নেতা নীলোৎপল বসুর জায়গা সেই তুলনায় নিরাপদ!

Advertisement

পলিটবুরোর বাইরে কেন্দ্রীয় কমিটিতে বাংলা থেকে আছেন ১২ জন। তাঁদের মধ্যে শ্যামল চক্রবর্তী প্রয়াত। পলিটবুরোয় শ্রীদীপ বিমানবাবুর পরিবর্ত হয়ে গেলে সেই জায়গায় কাউকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে নেওয়ার সুযোগ থাকবে। মৃদুল দে, নৃপেন চৌধুরী, অঞ্জু করদের মতো কয়েক জনের জায়গাও খালি হতে পারে বলে দলীয় সূত্রের ইঙ্গিত। সমস্যা হল, রাজ্য সিপিএমে পরবর্তী স্তরের নেতাদের মধ্যে যাঁরা এগিয়ে, তাঁদের প্রায় সকলেই কোনও না কোনও জেলা কমিটি বা জেলা নেতৃত্বে যুক্ত। সেই সঙ্গে তাঁরা রাজ্য কমিটির সদস্য। সিপিএমের সাংগঠনিক নিয়মে একসঙ্গে তিনটি স্তরের কমিটিতে থাকা যায় না। যে কারণে গৌতম দেবকে উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সম্পাদক করার সময়ে পলিটবুরোর বিশেষ অনুমতি আনতে হয়েছিল। সিপিএমের অন্দরে এখন প্রশ্ন, পরবর্তী স্তরের রাজ্য নেতাদের মধ্যে থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বেছে নেওয়া হবে? নাকি একাধিক কমিটির সমস্যা নেই, এমন তরুণ মুখেদের এগিয়ে দেওয়া হবে?

দলের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের বক্তব্য, ‘‘তেমন প্রয়োজন হলে কারও কারও ক্ষেত্রে জেলার দিকটা বন্ধ করাতে হবে। তাঁদের জেলা থেকে সরে দাঁড়াতে হবে। তবে সবই নির্ভর করছে পরিস্থিতির উপরে।’’

বিদায়ী কেন্দ্রীয় কমিটিতে উত্তরবঙ্গের কোনও প্রতিনিধি ছিলেন না। উত্তরবঙ্গে সিপিএমের সব চেয়ে পরিচিত মুখ অশোক ভট্টাচার্য এ বার রাজ্য ও জেলা কমিটি থেকে সরে গিয়েছেন। সমন পাঠক দার্জিলিং জেলা সম্পাদক হওয়ায় তাঁকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে নিতে ফের বিশেষ ব্যবস্থা করতে হবে। এই পরিস্তিতিতে অশোকবাবুকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তত আমন্ত্রিত হিসেবে নিয়েও ‘সম্মান’ দেখানো হোক, এই দাবিও রয়েছে দলের একাংশে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন