শিক্ষকের অপেক্ষায় সাগরের আরও স্কুল

সরকারি নিয়ম বলে, মাধ্যমিক স্কুলে অন্তত ১২ জন শিক্ষক থাকবে। কিন্তু কোথায় নিয়োগ? মৃত্যুঞ্জয়নগর বালিকা বিদ্যালয়ের একমাত্র শিক্ষিকা বদলি হয়ে অন্য স্কুলে যোগ দিতে পারছিলেন না সভাপতি ‘রিলিজ অর্ডার’ না-দেওয়ায়। সভাপতি মনে করেন, ওই শিক্ষিকা চলে গেলে স্কুল কার্যত অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়বে।

Advertisement

শিবনাথ মাইতি

সাগর শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:৪০
Share:

সাগরের সেই স্কুল। —ফাইল চিত্র।

শিক্ষামন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি মেলায় শিক্ষকের সমস্যা মেটার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে সাগরের মৃত‍্যুঞ্জয়নগর বালিকা বিদ্যালয়ে। কিন্তু সাগরের আরও কিছু স্কুলের তো প্রায় একই অবস্থা! কোনও স্কুলে শিক্ষক মাত্র দু’জন, কোথাও পাঁচ। অথচ, ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা কয়েকশো!

Advertisement

সরকারি নিয়ম বলে, মাধ্যমিক স্কুলে অন্তত ১২ জন শিক্ষক থাকবে। কিন্তু কোথায় নিয়োগ? মৃত্যুঞ্জয়নগর বালিকা বিদ্যালয়ের একমাত্র শিক্ষিকা বদলি হয়ে অন্য স্কুলে যোগ দিতে পারছিলেন না সভাপতি ‘রিলিজ অর্ডার’ না-দেওয়ায়। সভাপতি মনে করেন, ওই শিক্ষিকা চলে গেলে স্কুল কার্যত অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়বে। মামলা গড়ায় আদালতে। সংবাদমাধ্যমে সেই খবর প্রকাশিত হয়। শেষমেশ শিক্ষা দফতর সেখানে শিক্ষক পাঠানোর তোড়জোড় শুরু করেছে। এরপরেই সাগর মহামুনি কপিল বিদ্যামন্দির, রাধাকৃষ্ণপুর হাইস্কুল, খানসাহেব আবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের মতো কয়েকটি স্কুলের কর্তৃপক্ষের প্রশ্ন, তাঁদের দুর্দশা কবে ঘুচবে? শোরগোল না-হলে কি শিক্ষক নিয়োগ হবে না?

সাগরের নামী স্কুলগুলির একটি খানসাহেব আবাদ উচ্চ বিদ্যালয়। পড়াশোনার মান ভাল হওয়ায় বহু অভিভাবক সন্তানদের ভর্তি করাতে চান। কিন্তু এখানেও ছাত্র অনুপাতে শিক্ষক নেই। স্কুলের পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় ১৬০০। ২৭ জন স্থায়ী শিক্ষক থাকার কথা। রয়েছেন ১৬ জন। প্রধান শিক্ষক জয়দেব দাস বলেন, ‘‘পাঁচ বছরে অন্তত পাঁচ-ছয় জন শিক্ষক বদলি হয়েছেন। এক জনও নতুন শিক্ষক আসেননি। নিয়োগের ব্যাপারটি তাড়াতাড়ি হলে ভাল হয়।’’

Advertisement

সাগর মহামুনি কপিল বিদ্যামন্দিরের ছাত্রসংখ্যা ৩২৮। স্থায়ী শিক্ষক মাত্র দু’জন। আংশিক সময়ের অস্থায়ী শিক্ষক রয়েছেন চার জন। প্রধান শিক্ষক ভাগ্যধর মণ্ডল জানান, মাস তিন-চারেক আগে এক জন শিক্ষিকা বদলি হয়ে চলে গিয়েছেন। নতুন কেউ আসেননি। তাই আংশিক সময়ের শিক্ষকেরাই ভরসা। তাঁদের বেতন দিতে হচ্ছে স্থায়ী শিক্ষকদের পকেট থেকে বা স্কুলের উদ্বৃত্ত থেকে।

সাগরদ্বীপ থেকে ঘোড়ামারা এলাকাটি বিচ্ছিন্ন। সেখানকার একমাত্র উচ্চ বিদ্যালয় ‘ঘোড়ামারা মিলন বিদ্যাপীঠ মাধ্যমিক বিদ্যালয়’। স্কুলটি সাগর চক্রেরই অন্তর্গত। সেখানেও স্থায়ী শিক্ষক মোটে দু’জন, আংশিক সময়ের শিক্ষক ছ’জন। অথচ, ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা চারশোরও বেশি। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, আংশিক সময়ের শিক্ষকদের বেতন দিতে ভরসা পড়ুয়াদের ‘টিউশন ফি’। কখনও সম্পন্ন অভিভাবকদের কাছেও হাত পাততে হয়। ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক অভিজিৎ আদক বলেন, ‘‘স্কুলে নতুন শিক্ষক আনার জন্য সরকারি দফতরে ঘুরে সইতে হয়েছে অপমানও। কিন্তু শিক্ষক মেলেনি।’’

রাধাকৃষ্ণপুর হাইস্কুলে শিক্ষক মাত্র পাঁচ জন। বিজ্ঞানের শিক্ষক নেই। ফলে, পড়ুয়ারা বিজ্ঞানের তেমন কিছুই জানছে না বলে অভিযোগ অভিভাবকদের একাংশের। শিক্ষকদের একাংশ জানান, শিক্ষক কম হওয়ায় অভিভাবকেরা ওই স্কুলে ছেলেমেয়েদের ভর্তি করতে চাইছেন না। এমন উদাহরণ আরও আছে। গ্রামবাসীদের অনেকেই ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। শুভেন্দু দাস নামে এক গ্রামবাসীর ক্ষোভ, ‘‘শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি এখানে অবহেলিত। কারও হুঁশ নেই।’’ দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা স্কুল পরিদর্শক অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ভাবনা-চিন্তা চলছে। সাগর ও গোসাবা এলাকা থেকে তথ্য নেওয়া হয়েছে। দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন