পুড়ে ছাই ঘর। ছবি: শান্তনু ঘোষ।
মুম্বইয়ের স্মৃতি উস্কে দিল বরাহনগর। জন্মদিনের আনন্দ অনুষ্ঠান শেষমেশ বদলে গেল শোকে। তবে, এ ক্ষেত্রে কোনও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।
বুধবার সকালে বরাহনগরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের তাঁতিপাড়ার বাড়িতে আত্মীয়স্বজনের ভিড়। জন্মদিনের অনুষ্ঠান উপলক্ষে চলছিল সকালের টিফিন তৈরির তোড়জোড়। এমন সময়ে বিদ্যুতের সংযোগ বক্সে আগুনের ঝলকানি। তা দেখে তড়িঘড়ি জল ঢেলে নেভানোর চেষ্টাও করছিলেন বাড়ির লোকজন। উল্টে আগুন মুহূর্তের মধ্যে টালির চালের বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে। হুড়মুড়িয়ে সকলে বাইরে বেরিয়ে এলেও আগুনে পুড়ে জখম হলেন এক প্রৌঢ়া।
দমকলের তিনটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভায়। তবে বাড়িটির তিনটি ঘর পুরো ভষ্মীভূত হয়ে গিয়েছে। সব মিলিয়ে জন্মদিনের অনুষ্ঠানের পরিবেশ মুহূর্তের মধ্যে শোকে বদলে যায়।
আরও খবর
ভিন্ ধর্মের ছেলের সঙ্গে ঘোরাঘুরি, মার খেল দুই কিশোরী
পুলিশ সূত্রে খবর, তাঁতিপাড়ার রাজকুমার মুখার্জী রোডে রয়েছে বরাহনগর জুট মিলের প্রাক্তন কর্মী অশোক দাসের টালির ছাউনির বাড়ি। এ দিন অশোকবাবুর নাতির পাঁচ বছরের জন্মদিন ছিল। সেই উপলক্ষে সকাল থেকেই বাড়িতে আত্মীয় পরিজনেরা এসেছিলেন। মূল অনুষ্ঠানের জন্য বাড়ির কাছেই একটি অনুষ্ঠান ভবন ভাড়া নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সকালে আত্মীয়স্বজনদের জন্য বাড়িতেই টিফিনের আয়োজন করা হচ্ছিল। গোটা বাড়ি সাজানো হয়েছিল রঙিন বেলুন দিয়ে। হইচইয়ে ভরে উঠেছিল বাড়ি ও এলাকা। সেই সময় সকাল ৯টা নাগাদ আচমকা বাড়ির বারান্দায় থাকা বিদ্যুতের সংযোগ বক্স থেকে আগুনের ফুলকি বেরোতে দেখেন লোকজন। খবর দেওয়া হয় ইলেকট্রিক মিস্ত্রিকে। তবে, তিনি আসার আগেই আগুন বাড়তে থাকে। আগুন ধরে যায় ছাউনির বাঁশের কাঠামোতে। আগুন বাড়তে দেখে বাড়িতে উপস্থিত লোকজন জল ঢেলে তা নেভানোর চেষ্টা করলেও কিছু হয়নি। বরং আগুন বারান্দা থেকে পরপর তিনটি ঘরে ছড়িয়ে পড়ে।
গোটা বাড়ি কালো ধোঁয়ায় ভরে যায়। চিৎকার চেঁচামেচিতে জড়ো হয়ে যান এলাকার অন্য বাসিন্দারাও। কোনও মতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন সমস্ত লোকজন। কিন্তু হলকা লেগে অশোকবাবুর স্ত্রী বেবীদেবীর চুলে আগুন ধরে যায়। কোনও মতে বাইরে বেরিয়ে আসেন তিনি। এর পরে তাঁকে বরাহনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। খবর পেয়ে বরাহনগর দমকল কেন্দ্র থেকে তিনটি ইঞ্জিন ও পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। প্রায় দু’ঘন্টা ধরে চেষ্টা চালিয়ে আগুন নেভান দমকল কর্মীরা। আগুন নিভতেই ভিতরে ঢুকে দমকল কর্মী ও স্থানীয় যুবকেরা খুঁজে দেখেন পোড়া ধ্বংসস্তূপের নীচে কেউ আটকে রয়েছেন কি না।
আরও খবর
ফিট ধবন, ভাইরাল ফিভারে অনিশ্চিত জাডেজা
এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, তিনটি ঘর পুরো পুড়ে গিয়েছে। আলমারি, খাট, ফ্রিজ-সহ সমস্ত আসবাবপত্রই পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। প্রতিটি ঘরের টালির ছাউনি পুড়ে গিয়েছে। বাচ্চাটির উপহার আংটি, গলার হার-সহ নগর টাকাও ঘরে রাখা ছিল, সে সব কিছুও পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। অনুষ্ঠানে রান্নার জন্য বারান্দায় মজুত করা ছিল চাল, আনাজপত্র। সব কিছুই পুড়ে মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এক পাশে পড়ে রয়েছে তিনটি গ্যাস সিলিন্ডার। দমকল কর্মীরা জানান, সিলিন্ডারগুলিতে আগুন না লাগায় বড়সড় দুর্ঘটনা এড়ানো গিয়েছে। কেন না, ওই ঘিঞ্জি এলাকায় সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হলে মুহূর্তের মধ্যে তা আশেপাশের বাড়িতে ছড়িয়ে যেত বলেই আশঙ্কা দমকল, পুলিশ ও স্থানীয়দের।