চোর ‘অপবাদ’, হাইকোর্টের নির্দেশে ফিরলেন ঘরছাড়া

হাইকোর্টের নির্দেশে গত এক বছর পরে শুক্রবার সকালে পুলিশি নিরাপত্তায় গ্রামের বাড়িতে ফিরল গোটা মণ্ডল পরিবার। তবে সেদিনের আতঙ্ক আজও কাটেনি মণ্ডল পরিবারের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

এগরা শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৯ ০০:৪৬
Share:

কলকাতা হাই কোর্ট।

চোর ‘অপবাদ’ ঘোচাতে পাঁচ লক্ষ টাকা দাবি করেছিল গ্রামের লোকজন। না দেওয়ায় প্রথমে একঘরে করা হয় অভিযুক্তকে। তাতেও ফল না হওয়ায় বাড়িতে চড়াও হয়ে ভাঙচুর, লুটপাট চালানো হয়। ভয়ে গ্রাম ছাড়েন ওই পরিবার। পরিবারের অভিযোগ পুলিশে জানিয়েও কোনও সুরাহা হয়নি। শেষ পর্যন্ত এক বছর পর হাইকোর্টের নির্দেশে পুলিশি নিরাপত্তায় ঘরে ফিরলেন ওই পরিবার।

Advertisement

২০১৬ সালে এগরা-১ ব্লকের জেরথান গ্রাম পঞ্চায়েতের তেলামি গ্রামের ঘটনা। পুলিশল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তেলামি গ্রামে একটি বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটে। চুরি হলেও চোরকে হাতে নাতে ধরতে পারেনি গ্রামের মানুষ। চোর ধরতে গ্রামের কয়েকজন মাতব্বরদের কথায় ওঝা ডাকা হয়। ওঝার কারসাজিতে ‘চোর’ সাব্যস্ত হন গ্রামের পরেশ মণ্ডল। এর পর চুরির ‘অপরাধে’ পরেশের কাছে ৫ লক্ষ টাকা দাবি করা হয়। টাকা দিতে অস্বীকার করলে তাঁর পরিবারকে একঘরে করা হয় বলে অভিযোগ। তাতেও না দমে এগরা থানায় অভিযোগ দায়ের করে আক্রান্ত পরিবার। কিন্তু তার পরেও অত্যাচার থামেনি। বরং থানায় জানানোর ‘শাস্তি’ দিতে ২০১৮ সালের এক সন্ধ্যায় পরেশের বাড়িতে চড়াও হয়ে ভাঙচুর, ধানের গোলায় লুটপাট চালায় গ্রামবাসীর একাংশ। দুষ্কৃতীদের তাণ্ডবে ভয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান পুরুষরা। ঘটনার পর দিন সকালে বাড়ির মহিলা-শিশু সবাই বাড়ি ছেড়ে পাশের গ্রামে আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেন। আক্রান্ত পরিবারের অভিযোগ, এগরা থানায় একাধিক বার যোগাযোগ করা হলেও তাঁদের ঘরে ফেরাতে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বাধ্য হয়ে হাইকোর্টে মামলা করেন পরেশবাবু।

হাইকোর্টের নির্দেশে গত এক বছর পরে শুক্রবার সকালে পুলিশি নিরাপত্তায় গ্রামের বাড়িতে ফিরল গোটা মণ্ডল পরিবার। তবে সেদিনের আতঙ্ক আজও কাটেনি মণ্ডল পরিবারের। পুলিশ ঘরে পৌঁছে দিয়ে গেলেও ফের আগের মতো হামলা হবে কি না, ঘরে নিশ্চিন্তে থাকতে পারবেন কি না সেই প্রশ্ন বার বার তুলছেন মণ্ডল পরিবারের সদস্যরা।

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

পরেশবাবু বলেন, ‘‘গ্রামের মাতব্বররা ওঝা ডেকে মিথ্যে চোরের অপবাদ দিয়েছিল। তাদের টাকা না দেওয়ায় এবং পুলিশে অভিযোগের জন্য আমাদের ঘর ছাড়া হতে হয়েছিল। হাইকোর্টে বিচার পেয়ে বাড়ি ফিরতে পেরে ভাল লাগছে।’’

তেলামি গ্রাম কমিটির সভাপতি নিত্যানন্দ সাউ বলেন, ‘‘মণ্ডল পরিবারের বিষটি একটি পাড়ার সঙ্গে অন্য পাড়ার বিবাদ। সেখানে গ্রামের কোনও মাতব্বরের ভূমিকা নেই। এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।’’

এগরা থানার পুলিশ জানিয়েছে, হাইকোর্টের নির্দেশ মতো শুক্রবার মণ্ডল পরিবারকে কড়া নিরাপত্তায় ঘরে ফেরানো হয়েছে। ফের যাতে তাঁদের উপর হামলা না হয়, সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন