হারিয়ে যাচ্ছে রংমাটি তৈরি শিল্প

এক সময় তাঁদের তৈরি রং মাটি কেনার জন্য গ্রামে এসে ভিড় জমাতেন টালি ভাটার মালিক থেকে কুমোর পাড়ার মৃৎশিল্পীরা। গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই চলত রঙ মাটি তৈরির ব্যস্ততা।

Advertisement

আনন্দ মণ্ডল

তমলুক শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৭ ০০:০০
Share:

ব্যস্ততা: তমলুকের অনন্তপুর গ্রামে চলছে রংমাটি তৈরি। নিজস্ব চিত্র

এক সময় তাঁদের তৈরি রং মাটি কেনার জন্য গ্রামে এসে ভিড় জমাতেন টালি ভাটার মালিক থেকে কুমোর পাড়ার মৃৎশিল্পীরা। গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই চলত রঙ মাটি তৈরির ব্যস্ততা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মাটির বাড়ির জায়গায় ক্রমশ মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে ইটের দেওয়াল। আর তার সঙ্গেই হারিয়ে যাচ্ছে রং মাটির ব্যবহার। চাহিদার অভাবে অন্য পেশায় সামিল হয়েছে তমলুকের অনন্তপুর এলাকার কয়েকশো পরিবার।

Advertisement

তমলুক শহর থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে তমলুক-পাঁশকুড়া রাজ্য সড়কের ধারে অনন্তপুর, টুলিয়া, রসিকপুর প্রভৃতি গ্রামে এক সময় প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি করা হত রঙ মাটি বা বনক মাটি। এই রঙ মাটি তৈরির জন্য জলা জমিতে কয়েক ফুট গভীরে মাটির নিচ থেকে সংগ্রহ করা হয় বিশেষ ধরনের মাটি। সেই মাটি এনে মাটির হাঁড়িতে জলে গুলে রাখতে হয়। এরপর জল শুকিয়ে গেলে অবশেষটুকুকেই বলে বনক বা রঙ মাটি।

মূলত বাড়ির ছাউনি দেওয়ার মাটির টালি তৈরিতে এই রঙমাটি ব্যবহার করা হত। এ ছাড়া বাড়িতে ব্যবহারের জন্য মাটির হাঁড়ি, কলসি, মুড়িভাজার খুলি, পুজোর সরা ও গাছের টব প্রভৃতি সামগ্রী তৈরির সময় ব্যবহার হয় এই রঙ মাটি। আগে মাটির তৈরি নানা সামগ্রীর ব্যবহার যেমন বেশি ছিল তেমনই প্রচুর চাহিদা ছিল এই মাটির। ফলে এক সময় তমলুকের এই গ্রাম গুলিতে রং মাটির তৈরির এই কুটিরশিল্প ছিল বহু বাসিন্দার জীবিকা।

Advertisement

তমলুকের এই রঙ মাটি কিনতে আসতেন দুই মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি, উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, বর্ধমান জেলার টালি ভাটার মালিক ও মৃৎশিল্পীরা। কিন্তু সময় বদলায়। গ্রামেও মাটির বাড়ির বদলে ক্রমশ ইটের দেওয়ালা ও ছাদ দেওয়া পাকা বাড়ি তৈরির প্রবণতা বৃদ্ধির সাথে কমতে থাকে টালির ব্যবহার। আর গৃহস্থালির বিভিন্ন মাটির সামগ্রীর বদলে ব্যবহার বাড়ে স্টিলের বাসনের। যার জেরে এই রঙ মাটির চাহিদাও দ্রুত কমতে থাকে।

বছর পঞ্চান্নের চণ্ডীচরণ পাঁজা বলেন, ‘‘বাবার হাত ধরে রঙ মাটির কাজ শিখেছিলাম। ৩০ বছর ধরে এই কাজ করছি। কিন্তু গত ১০-১২ বছর হল রঙমাটির চাহিদা অনেক কমে গিয়েছে। ভাল দাম না মেলায় আয়ও অনেক কমে গিয়েছে। আমার দুই ছেলে এখন রাজমিস্ত্রির কাজ করতে যায়।’’ তিনি জানান, কয়েক বছর আগেও অনন্তপুর গ্রামে প্রায় ১০০ পরিবার, টুলিয়া গ্রামের ১০০ পরিবার ও রসিকপুর গ্রামে ৭০ টির বেশী পরিবার এই রঙ মাটি তৈরির পেশায় যুক্ত ছিল। এখন এই সংখ্যাটা এক ধাক্কায় নেমে গিয়েছে অনেকটাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন