Archeological department

তমলুক রাজবাড়ি সংরক্ষণের কাজ শুরু পুরাতত্ত্ব বিভাগের 

সম্প্রতি পুরাতত্ত্ব বিভাগের তরফে ভগ্নপ্রায় তমলুক রাজবাড়ির ভবন এবং চত্বরের আগাছা পরিষ্কার করা হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

তমলুক শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২১ ০২:১৮
Share:

তমলুক রাজবাড়ির সামনে পুরাতত্ত্ব বিভাগের সাইনবোর্ড। নিজস্ব চিত্র।

পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা সদর তমলুকে ঐতিহ্যবাহী রাজবাড়িকে আগেই ‘জাতীয় সৌধ’ হিসাবে ঘোষণা করেছে আর্কিওলজি সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (এএসআই)। এবার ওই রাজবাড়ি সংরক্ষণের কাজ শুরু করল পুরাতত্ত্ব বিভাগ।

Advertisement

সম্প্রতি পুরাতত্ত্ব বিভাগের তরফে ভগ্নপ্রায় তমলুক রাজবাড়ির ভবন এবং চত্বরের আগাছা পরিষ্কার করা হয়েছে। দফতর সূত্রের খবর, রাজবাড়ি সংরক্ষণ করার পাশাপাশি এর চারদিকে প্রাচীর তৈরি করা হবে। তমলুক আর্কিওলজিক্যাল মিউজিয়ামের অ্যাসিস্ট্যান্ট আর্কিওলজিস্ট সঞ্জয় কুমার বলেন, ‘‘তমলুক রাজবাড়ি সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় পদেক্ষপ করা হচ্ছে। এজন্য রাজবাড়ির ও সংলগ্ন চত্বরের আগাছা পরিষ্কার করা হয়েছে। রাজবাড়ির চত্বরে দফতরের তরফে বোর্ড দেওয়া হয়েছে। তৈরি করা হবে প্রাচীর। এজন্য প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়াও চলছে।’’

রাজবাড়ির স্থাপনকাল-সহ ঐতিহাসিক গুরুত্ব তুলে ধরার জন্য ওই চত্বরে পুরাতত্ত্ব বিভাগের তরফে সাইনবোর্ডও দেওয়া হয়েছে। অন্য একটি সাইনবোর্ডে এই জাতীয় সৌধের কোনও সামগ্রী ক্ষতিসাধন না করার সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে। ‘আর্কিলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া’র কলকাতা সার্কেলের তরফে দেওয়া দুইটি বোর্ডের একটিতে লেখা হয়েছে, ‘মধ্যোত্তর যুগের অপূর্ব স্থাপত্যকলার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তমলুক রাজবাটির বর্তমান ধ্বংসপ্রাপ্ত কাঠামোটি হলদিয়ার উপকণ্ঠে অবস্থিত। খ্রিস্টিয় যুগের সূচনা পর্ব থেকে তাম্রলিপ্ত শহর (বর্তমান তমলুক) পূর্ব ভারতের সামুদ্রিক বাণিজ্য এবং জলপথের ক্ষেত্রে একটি বন্দর হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। মধ্যোত্তর যুগের স্থাপত্যকর্ম কতটা সমৃদ্ধ ছিল, তমলুক রাজবাটি তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ বহন করে। রাজবাটির মূল ভবনটি একটি চতুষ্কোণ চত্বরকে ঘিরে আছে। ব্যারাকের স্থাপত্য বিশিষ্ট দোতলা কাঠামোর দুই দিকের অধিকাংশ অংশটি বর্তমানে ধ্বংসপ্রাপ্ত। রাজবাটির এই বিশালাকার স্থাপত্যের সামনের অংশে রয়েছে চওড়া স্তম্ভের সমন্বয়ে কিছু খিলানযুক্ত স্থাপত্য যা বাংলায় ইন্দো-ইসলামীয় স্থাপত্যকলার একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ। ইট দ্বারা নির্মিত এই ভবনের কিছু স্তম্ভের উপরিভাগ নির্মাণে লাল বেলে পাথর ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। সার্বিকভাবে সমগ্র রাজবাটিটি ইন্দো-ইসলামীয় এবং নব্য-ধ্রুপদী স্থাপত্য শিল্পের এক অপূর্ব মিশ্রণ বলা যেতে পারে’।

Advertisement

২০০৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি তমলুক রাজবাড়ি জাতীয় সৌধ হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। তমলুক শহরের ‘তাম্রলিপ্ত মিউজিয়াম’কে অধিগ্রহণ করেছে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া। তমলুক পুরসভা অফিসের কাছে একটি ভাড়াবাড়িতে চলা ওই সংগ্রহশালায় বহু প্রাচীন প্রত্ন সামগ্রী রয়েছে। সংগ্রহশালা থেকে কয়েকশো মিটার দূরে থাকা তমলুক রাজবাটিতে সংগ্রহশালা গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। তবে পরে নিমতৌড়িতে সংগ্রহশালা গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া। এজন্য রাজ্য সরকারের কাছ থেকে জমি কেনা হয়েছে।

পুরাতত্ত্ব বিভাগের পদক্ষেপে খুশি তমলুক রাজপরিবারের সদস্য তথা তমলুক পুরসভার প্রশাসক বোর্ডের সদস্য দীপেন্দ্রনারায়ণ রায়। তিনি বলেন, ‘‘প্রাচীনত্ব ও ঐতিহাসিকভাবে গুরত্বপূর্ণ এই রাজবাড়িকে কয়েকবছর আগেই জাতীয় সৌধ হিসাবে ঘোষণা করেছিল। রাজবাড়ি পরিদর্শনের জন্য প্রতিদিন পর্যটকরা আসেন। রাজবাড়ি সংরক্ষিত হলে পর্যটকের কাছে আরও আকর্ষণ বাড়বে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন