প্রকৃতি: পাথরের টিলা। তার মাঝে তৈরি হয়েছে ঝর্না। নিজস্ব চিত্র
রঙ বেরঙের পাথর দিয়ে তৈরি হয়েছে ছোট ছোট টিলা। গা বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে ঝর্নার জল। সবুজ গালিচার মতো নরম ঘাসের বাগানে ফুল গাছের বাহারি সজ্জা। সঙ্গে মানানসই নানা ধরনের ভাস্কর্য ও বন্যপ্রাণীর মডেল। রয়েছে ডাইনোসোরও। দূর থেকে সেগুলিকে দেখলে আসল বলেই ভ্রম হবে। এ ছাড়াও রয়েছে শিশুদের মনোরঞ্জনের নানা উপকরণ। নিভৃতে গল্পগুজব করার জন্য রয়েছে রাজস্থানি আদলে তৈরি বসার ব্যবস্থা। পর্যটনের মরসুমে ঝাড়গ্রাম জেলার গোপীবল্লভপুরের আকর্ষণ বাড়িয়েছে নতুন তৈরি হওয়া প্রকৃতি উদ্যানটি। পোষাকি নাম, গোপীবল্লভপুর ইকো পার্ক।
গোপীবল্লভপুর-১ ব্লক প্রশাসন ও গোপীবল্লভপুর-১ পঞ্চায়েত সমিতির উদ্যোগে বাষট্টি লক্ষ টাকা খরচ করে এই উদ্যানটি তৈরি করা হয়েছে। সুবর্ণরেখা নদীর ধারে মনোরম পরিবেশে এই পার্কটি গড়ে তোলা হয়েছে। পার্কের অন্যতম আকর্ষণ, পার্কে ঢোকার মুখে কাঁধে পৃথিবী নিয়ে হাঁটু মুড়ে গ্রিক দেবতা অ্যাটলাসের আদলে একটি ভাস্কর্য। পার্কটি তৈরির জন্য একশো দিনের প্রকল্পে স্থানীয়দের শ্রমিকের কাজে নিয়োগ করে জমি সমতল করা হয়েছে। এ ছাড়া পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ ও জঙ্গলমহল অ্যাকশন প্ল্যানের টাকায় পার্কটির সাজসজ্জার কাজ হয়েছে। প্রশাসনিক সূত্রের দাবি, সুবর্ণরেখা নদী লাগোয়া এই ইকো পার্কটি শীতের মরসুমে গোপীবল্লভপুরের কৌলিন্য অনেকখানি বাড়িয়ে দিয়েছে।
অন্যতম বৈষ্ণবক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত শ্রীপাট গোপীবল্লভপুরে রয়েছে সুপ্রাচীন রাধাগোবিন্দ জিউয়ের মন্দির। এ ছাড়াও ছড়িয়ে ছিটিয়ে কিছু দ্রষ্টব্য স্থান থাকলেও সেই অর্থে পর্যটকদের জন্য গোপীবল্লভপুরে এত দিন বিনোদনের উপযুক্ত ব্যবস্থা ছিল না। স্থানীয়দেরও সময় কাটানোর জন্য কোনও পার্ক ছিল না। এই ইকো পার্ক হওয়ার ফলে নির্জনে দু’দণ্ড সময় কাটানোর সুযোগ পাচ্ছেন স্থানীয়রা। তেমনই পর্যটকরাও শীতের মিঠেকড়া রোদে নদী ও পার্কের সৌন্দর্য উপভোগ করছেন।
গোপীবল্লভপুর-১ ব্লকের বিডিও বিশ্বনাথ চৌধুরী জানালেন, গোপীবল্লভপুরে এমন একটি বিনোদন পার্কের খুব প্রয়োজন ছিল। সেই কারণে প্রশাসনিক ভাবে ২০১৬ সালের শেষ নাগাদ ইকো পার্কটি তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রকল্পটি রূপায়ণের জন্য সুবর্ণরেখা নদীর ধারে উঁচু জায়গায় প্রায় দু’হেক্টর সরকারি জমি চিহ্নিত করা হয়। এর পর পঞ্চায়েত সমিতির উদ্যোগে একশো দিনের প্রকল্পে শ্রমিক নিয়োগ করে জমিটি উঁচু ও সমতল করা হয়। ২০১৬-র অক্টোবরে পার্কটি সাজানোর কাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালের এপ্রিলে পার্কটি পুরোদস্তুর তৈরি হয়ে যায়। সর্বসাধারণের জন্য ২০১৭-এর জুনে পার্কটি খুলে দেওয়া হয়। উদ্যানটি তৈরি হওয়ার ফলে এখন দলে দলে পর্যটকরা আসছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা কলেজপড়ুয়া রিচা বাগ, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী সুভাষ সাহু বলেন, “আমাদের এলাকায় এমন একটি পার্ক হবে তা আমরা স্বপ্নেও ভাবিনি। এই পার্কের আকর্ষণে বাইরে থেকে বহু লোকজন আসছেন।” স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা পার্কে একটি বৈকালিক খাবার দোকান চালান।