ঝাড়গ্রাম আদালত চত্বরে রাজীব দে। নিজস্ব চিত্র।
আদালত চত্বরে হাজির হল অ্যাম্বুল্যান্স। সেখানে শুয়ে প্রাক্তন সেনাকর্মী রাজীব দে। মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে গিয়েছে। উঠে দাঁড়াবার শক্তি নেই। তাই বিচার চাইতে অ্যাম্বুল্যান্সে করেই সোমবার হাজির হয়েছিলেন ঝাড়গ্রাম আদালতে।
অভিযোগ, শাসকদলের কর্মীদের মারধরের চোটে এমন অবস্থা হয়েছে রাজীবের। অভিযুক্তদের মধ্যে একজন উপ পুরপ্রধানের ভাই। আরেকজন আত্মীয়। এ ক্ষেত্রে পুলিশের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন আক্রান্তের পরিজনেরা। তাঁদের অভিযোগ, অভিযুক্তেরা প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ জামিনযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করেছে। স্বাভাবিক ভাবে শাসকদলের পাঁচ কর্মী আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পেয়ে গিয়েছেন। অভিযোগ দায়ের হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে পুলিশ আদালতে চার্জশিট দাখিল করে দিয়েছে। পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপার অমিতকুমার ভরত রাঠৌরের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এসএমএস করতে বলেন। এসএমএসে জবাব
আসে, ‘দেখছি’।
আক্রান্তের আঘাত ঠিক কতটা তা প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন বাদী পক্ষের আইনজীবী। সেজন্যই অ্যাম্বুল্যান্সে করে আনা হয়েছিলস রাজীবকে। বিচারক এজলাস থেকেই দেখলেন। তারপরই ফিরে গেল অ্যাম্বুল্যান্স। এ দিন বাদীপক্ষের আইনজীবী হিমেল ছেত্রী ঝাড়গ্রাম প্রথম এসিজেএম আদালতে ওই মামলায় জমিন অযোগ্য ধারা প্রয়োগের আবেদন জানান। সেই সঙ্গে অভিযুক্তদের জামিন বাতিল করারও আবেদন জানান তিনি। পুলিশের তদন্ত নিয়েও প্রশ্ন তোলেন হিমেল। বাদীপক্ষের আইনজীবীর আবেদনের ভিত্তিতে বিচারক এডুইন লেপচা আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন। ওই দিন অভিযুক্তদের আদালতে হাজির থাকার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবী চন্দনেশ্বর সেনগুপ্তর দাবি, “আঘাত কতটা সেটা বিচার্য বিষয়। পুলিশ মামলার চার্জশিট জমা দিয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এলাকায় আগে এ ধরনের কোনও ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ নেই। মিথ্যা অভিযোগে তাঁদের ফাঁসানো হয়েছে।” ঝাড়গ্রামের উপ পুরপ্রধান শিউলি সিংহ বলেন, ‘‘আমি অন্যায়কে প্রশ্রয় দিই না। আইন আইনের পথে চলবে।’’
গত ২৪ অগস্ট সকালে বছর ৩৫-এর রাজীব বাছুরডোবায় একটি এটিএমে টাকা তুলতে গিয়েছিলেন। ওই সময় তৃণমূল কর্মী পেশায় আনাজের আড়তদার বিজয় যাদবের সঙ্গে তাঁর বচসা শুরু। তখন চলে গেলেও পরে আরও চারজনকে নিয়ে এসে রাজীবের উপর বিজয় চড়াও হন বলে অভিযোগ। রাজীব একটি দোকানে ঢুকে প্রাণে বাঁচেন। পুলিশ এসে তাঁকে ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভর্তি করায়। ২৫ অগস্ট ঝাড়গ্রাম থানায় অভিযোগ দায়ের করেন রাজীবের ভাই সন্দীপ দে।