Student Death In Contai

কাঁথিতে পাঁশকুড়ার ছায়া, চিঠিতে ‘অসম্মানের জবাব’ লিখে নিজেকে শেষ করে দিল নবম শ্রেণির ছাত্র!

পুলিশ সূত্রে খবর, মৃতের ঘর থেকে একটি চিঠি মিলেছে। মনে করা হচ্ছে সেটি ‘সুইসাইড নোট’। বাবাকে উদ্দেশ্য করে কিশোর লিখেছে, সে কোনও খারাপ কাজ করেনি।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৫ ১৫:২১
Share:

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

এক কিশোরীকে টিটকিরি করার অভিযোগে ভরাবাজারে আটকে রেখে তাকে মারধর করেছিলেন ছাত্রীর পরিচিতেরা। সেই অপমানে আত্মঘাতী হল নবম শ্রেণির এক ছাত্র। শনিবার চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথির পিছাবনী এলাকায়। মৃতের বয়স মাত্র ১৫ বছর।

Advertisement

পুলিশ সূত্রে খবর, মৃতের ঘর থেকে একটি চিঠি মিলেছে। মনে করা হচ্ছে সেটি ‘সুইসাইড নোট’। বাবার উদ্দেশে কিশোর লিখেছে, সে কোনও খারাপ কাজ করেনি। মিথ্যা অভিযোগে সকলের সামনে তাকে হেনস্থা করা হয়েছে। অপমান সইতে না পেরে নিজেকে শেষ করে দিচ্ছে সে।

গত মে মাসে পূর্ব মেদিনীপুরেরই পাঁশকুড়ায় সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্র চিঠি লিখে আত্মহত্যা করেছিল। তাকে চিপ্‌সের প্যাকেট চুরির অপবাদ দিয়ে হেনস্থা করেছিলেন দোকানদার। কাঁথির ঘটনা মনে করাল চিপ্‌স কাণ্ডকে। স্থানীয় এবং পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কাঁথি থানায় পিছাবনী এলাকার বাসিন্দা সূর্য মান্না নবম শ্রেণির ছাত্র। গত বৃহস্পতিবার স্কুলে অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীকে কটূক্তি করার অভিযোগ ওঠে ওই ছাত্রের বিরুদ্ধে। যদিও ছাত্রটি তখন দাবি করে সে ওই কাজ করেনি। ছাত্রীটিকে চেনেও না। স্কুল ছুটি হয়।

Advertisement

ওই দিন বিকেলেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে এক সহপাঠীর বাড়িতে যায় ছাত্রটি। ফেরার পথে পিছাবনীর বাজারে তাকে আটকে রেখে কয়েক জন বেধড়ক মারধর করে বলে অভিযোগ। সেই সঙ্গে ছাত্রের বাবা-মাকেও ডেকে পাঠানো হয়। তখনও ছাত্রটি জানায়, ওই ছাত্রীকে সে চেনে না। এবং তাকে কটূক্তিও করেনি। তার পরেও সকলের কাছে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয় তাকে।

রাতে বাড়ি ফিরে বাবা-মার কাছে ছাত্রটি বলে সে কোনও ভুল করেনি। কিন্তু বাবা-মা তাকে বকাঝকা করে। এর পর শুক্রবার দুপুরে বাড়ির কড়িকাঠে দড়ির ঝুলিয়ে তাতে ফাঁস নেয় কিশোর। তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু চিকিৎসকেরা ছাত্রটিকে মৃত বলে ঘোষণা করে।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় কাঁথি থানার পুলিশ। পড়ুয়ার ঘরে তল্লাশি চালিয়ে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার হয়েছে। বাবাকে উদ্দেশ্য করে লেখা ওই চিঠিতে ছেলেটি লিখেছে, তাকে অপবাদ দেওয়া হয়েছে। যে কাজ সে করেনি, সেই কাজে তাকে দোষী বলছে সকলে।

মৃত ছাত্রের বাবা রবীন্দ্রনাথ মান্না বলেন, ‘‘ছেলে বার বার নিজেকে নির্দোষ বলেছিল। কিন্তু ওই ছাত্রীর পরিবার ও পরিচিতেরা মিলে ওকে খারাপ খারাপ কথা বলে। সেই অপমানে নিজেকে শেষ করে দিল ও।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমার ছেলের আত্মহত্যার নেপথ্যে ওই মেয়েটির বাবা দায়ী। মেয়ের বাবা বাজারের কিছু লোকজনকে নিয়ে এসে আমার ছেলেকে আটকে মারধর করে। মানসিক নির্যাতন চালিয়েছে। ছেলে লিখে গেছে সে কথা।’’

অন্য দিকে, ছেলেটির আত্মহত্যার নেপথ্যে তারা কোনও ভাবে দায়ী নয় বলে দাবি করেছে ছাত্রীর পরিবার। কাঁথি থানার এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘ছাত্রের দেহ ময়নাতদন্তের জন্য কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করা হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement