Coronavirus in Midnapore

বিমানে উড়ে সটান বড়মায় দুই আক্রান্ত, করোনা রোগীর সফর ঘিরে প্রশ্ন

তামিলনাড়ু থেকে প্রথমে বিমানে কলকাতা, তার পরে গাড়িতে পাঁশকুড়ার বড়মা করোনা হাসপাতালে হাজির হন দুই পজ়িটিভ রোগী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা ও পাঁশকুড়া শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০২০ ০৫:০০
Share:

ফাইল চিত্র

কাকভোরে কলকাতার দিক থেকে হাসপাতালের গেটে এসে দাঁড়িয়েছিল একটি গাড়ি। দু’জন মাঝবয়সী যুবককে নামিয়েই গাড়িটি ফিরে যায় কলকাতার দিকে। ওই দু’জন গুটিগুটি পায়ে নিরাপত্তারক্ষীদের কাছে গিয়ে জানান, তাঁরা করোনায় আক্রান্ত!

Advertisement

সোমবার এভাবেই তামিলনাড়ু থেকে প্রথমে বিমানে কলকাতা, তার পরে গাড়িতে পাঁশকুড়ার বড়মা করোনা হাসপাতালে হাজির হন দুই পজ়িটিভ রোগী। ভিন্ রাজ্য থেকে বিমানে উড়ে কীভাবে দুই করোনা আক্রান্ত এত দূর চলে এলেন, কীভাবেই বা কোনও স্তরের পরীক্ষানিরীক্ষায় তাঁদের ধরা গেল না, প্রশ্ন সেখানেই। চিকিৎসকদেরও চক্ষু চড়কগাছ।

হাসপাতাল সূত্রের খবর, ওই দুই যুবক নিরাপত্তারক্ষীদের নিজেদের করোনা পরীক্ষার পজ়িটিভ রিপোর্ট দেখান। তা পাঠানো হয় হাসপাতালের টেকনিক্যাল অফিসার দেবোপম হাজরাকে। সব কিছু দেখে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশে ওই দু’জনকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

Advertisement

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, আক্রান্ত দু’জন তমলুকের শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের বাসিন্দা। তাঁদের একজনের বয়স ২৬ বছর, একজনের বয়স ২৩ বছর। চেন্নাইয়ের কাছে চিঙ্গলপুটে একটি সংস্থায় কাজ করতেন তাঁরা। ওই কারখানায় ভিন্‌ রাজ্যের এক কর্মীর করোনা ধরা পড়ে। তাঁর উপসর্গ ছিল। শহিদ মাতঙ্গিনী-সহ পূর্ব মেদিনীপুরের মোট ন’জন কর্মীও তাই করোনা পরীক্ষা করাতে যান। কিন্তু উপসর্গ না থাকায় চেন্নাই প্রশাসন লালারসের পরীক্ষা করেনি। তখন ওই দু’জন চেন্নাইয়ের আইসিএমআর নথিভূক্ত একটি বেসরকারি পরীক্ষাগারে লালারসের পরীক্ষা করাতে। তাঁদের করোনা পজ়িটিভ রিপোর্ট আসে।

ওই রিপোর্ট অনুসারে, গত ১২ জুন দু’জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ১৩ জুন রিপোর্ট আসে। এদিকে, ওই দু’জন-সহ জেলার ন’জন ১৪ জুন গভীর রাতে বিমানে করে কলকাতা আসেন। পরে গাড়ি ভাড়া করে আক্রান্ত দু’জন এ দিন সোজা বড়মা হাসপাতালে হাজির হন। হাসপাতাল সূত্রের খবর, আক্রান্তেরা জানিয়েছেন, তাঁদের কারখানার একজন কর্মীর করোনা ধরা পড়ার পর মালিক সবাইকে কোয়ার্টার ছেড়ে দিতে বলেছিলেন। তাঁরা চলে এসেছেন। হাসপাতালের দাবি, করোনা আক্রান্ত জানার পরেও তাঁরা বিমানে চড়েন। আর তাঁদের সঙ্গে থাকা অন্য সাতজনও জেলায় নিজেদের বাড়িতে ফিরে যান।

বড়মা হাসপাতালের টেকনিক্যাল অফিসার দেবোপম হাজরা বলেন, ‘‘ওই দুই যুবককে বড়মায় ভর্তি করানো হয়েছে। বাকি সাতজনেরও করোনা পরীক্ষা করা হবে।’’ এ ব্যাপারে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিতাইচন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘‘ওই দুই করোনা আক্রান্ত যে এভাবে জেলায় ফিরছেন, সে নিয়ে আমাদের কাছে কোনও খবর ছিল না। তাঁদের সঙ্গে ফেরা অন্য সাত জনকেও চিহ্নিত করে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’

কিন্তু পজ়িটিভ রিপোর্ট থাকা সত্ত্বেও কীভাবে ওই দুই যুবক বিমানে চড়ে চলে এলেন সে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তা হলে বিমান বন্দরগুলিতে কি আদৌও কঠোরভাবে সুরক্ষা বিধি মানা হচ্ছে না?নবান্নের এক কর্তার কথায়, ‘‘যে ন’জন এসেছেন তাঁদের চিকিৎসা বা পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কিন্তু বিমানে যে ভাবে তাঁরা এসেছেন, তাতে তো সকল যাত্রীর নিভৃতবাসে যাওয়া এবং লালরসের পরীক্ষা করানো উচিৎ। অসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রকের নজরদারি কেমন হচ্ছে, এই ঘটনা তারই প্রমাণ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন