Corona

সকালে স্টেশন ফাঁকা, বেলা গড়াতেই দুর্ভোগ

সকালে খড়্গপুর স্টেশনে পৌঁছে লোকাল না পেয়ে অনেকেই দুপুরের এক্সপ্রেসের টিকিট কেটে হাওড়া যাওয়ার বন্দোবস্ত করেছেন।

Advertisement

দেবমাল্য বাগচী

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০২১ ০৬:২৬
Share:

ফাঁকা: খড়্গপুর স্টেশনের টিকিট কাউন্টার। নিজস্ব চিত্র।

আশঙ্কা ছিল, দুর্ভোগে পড়বেন নিত্যযাত্রীরা। অবশ্য সেই শঙ্কা থেকেই স্টেশনমুখী হলেন না অধিকাংশ নিত্যযাত্রী। বৃহস্পতিবার সাতসকালে থমথমে রেল স্টেশনে ফেরে এক বছর আগের স্মৃতি। তবে বেলা বাড়তেই বদলেছে ছবি। লোকাল ট্রেন না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়েন অনেকে।

Advertisement

বৃহস্পতিবার খড়্গপুর রেল ডিভিশন জুড়েই ছিল এই ছবি। দুর্ভোগের চিত্র সব থেকে বেশি দেখা গিয়েছে খড়্গপুর-হাওড়া শাখায়। এই শাখায় প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক যাত্রী কলকাতা যাতায়াত করেন। খড়্গপুরের মতো গুরুত্বপূর্ণ জংশন স্টেশনে কার্যত লোকাল ট্রেনের উপরই নির্ভরশীল নিত্যযাত্রীরা। তবে এ দিন খড়্গপুর স্টেশন সকালে ফাঁকাই ছিল। টিকিট কাউন্টার, প্ল্যাটফর্ম, ফুটব্রিজ থেকে স্টেশন চত্বর ছিল শুনশান। তবে বেলা বাড়তেই ঢুকেছে একের পর এক দূরপাল্লার ট্রেন। আর তারপরই প্রকট হয়েছে লোকাল ট্রেনের অভাবে যাত্রী ভোগান্তির ছবি। খড়্গপুর রেলের সিনিয়র ডিভিশনাল কমার্শিয়াল ম্যানেজার আদিত্য চৌধুরী অবশ্য বলেন, “এ ক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার নেই। রাজ্য সরকার যে নির্দেশ দিয়েছে সেটাই আমরা মেনে চলছি।”

লোকসানের বহর বেড়ে চলায় এ দিন থেকে বন্ধ হয়েছে টাটা-হাওড়া স্টিল এক্সপ্রেসও। সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ খড়্গপুর স্টেশনে গিয়ে দেখা মেলেনি নিত্যযাত্রীদের। সাড়ে ন’টা নাগাদ পুরুলিয়া-হাওড়া এক্সপ্রেস এলেও আগে থেকে সংরক্ষিত আসনের কয়েকজন যাত্রী উঠেছেন। লোকাল বন্ধে বিপদে পড়েছেন ট্রেনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা নানা পেশার মানুষ। খড়্গপুর স্টেশনের বাইরে বোগদা স্ট্যান্ডের টোটো চালক শঙ্কর নায়েক বলেন, “ফের লকডাউনের মতো অবস্থা হল। ভোর ৫টায় এসেছি। ১০টা বাজতে যাচ্ছে একজনও যাত্রী পাইনি। মালিককে কোথা থেকে দিনের ২০০টাকা ভাড়া দেব সেটাই ভাবছি!” ৫ ও ৮নম্বর প্ল্যাটফর্মে আইআরসিটিসি অনুমোদিত পাঁচটি খাবারের স্টলের ভেন্ডার প্রশান্ত দে বলেন, “লোকাল চলেনি। হাতে গোনা কয়েকটি এক্সপ্রেস শুধু। সকাল থেকে চা, জল কিছুই সেভাবে বিক্রি হয়নি। গতবার লকডাউনে অনেক কষ্টে স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে সংসার সামলে বেঁচেছি। আবার তো তেমনই পরিস্থিতি!”

Advertisement

সকালে খড়্গপুর স্টেশনে পৌঁছে লোকাল না পেয়ে অনেকেই দুপুরের এক্সপ্রেসের টিকিট কেটে হাওড়া যাওয়ার বন্দোবস্ত করেছেন। পঞ্জাবের বাসিন্দা সন্দীপ সিংহ বলেন, “আমি বেলদায় ধান কাটার গাড়ি চালাই। ছুটি নিয়ে বাড়ি ফিরছি। সন্ধ্যায় হাওড়া থেকে ট্রেন। লোকালের আশায় সকাল ৮টায় খড়্গপুরে এসেছিলাম। শেষে বেলা ১টা ২৫মিনিটের একটি এক্সপ্রেসে হাওড়ার টিকিট কেটেছি। ৫ঘন্টা বসে থাকা ছাড়া উপায় নেই।” বেলা বাড়তে দূরপাল্লার ট্রেন আসতেই দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। রউরকেল্লা থেকে স্ত্রী পূজাকে নিয়ে খড়্গপুরে পৌঁছে লোকাল না পেয়ে বিপাকে পড়েন কোলাঘাটের বাপি সাঁতরা। তিনি বলেন, “রাউরকেল্লার রাজগ্রামে ফুলের ব্যবসা করি। ওখানে লকডাউন হয়ে যাওয়ায় বাড়ি ফিরছি। আমদাবাদ এক্সপ্রেসে খড়্গপুরে এলাম। কিন্তু লোকাল না পেলে তো কোলাঘাটে মুশকিল হবে।”

ইস্টকোস্ট এক্সপ্রেসে খড়্গপুরে পৌঁছনো হায়দরাবাদের বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত প্রতীক মণ্ডল বলেন, “বাঁকুড়ায় বাড়ি। এক্সপ্রেসের টিকিট না পেয়ে বাসে যেতে হবে। কতক্ষণে বাড়ি ফিরব জানি না।” যাত্রীদের ভোগান্তি প্রসঙ্গে খড়্গপুরের মহকুমাশাসক আজমল হোসেন বলেন, “পরিবহণ দফতরে কথা হয়েছে। অফিসযাত্রীদের সুবিধায় কলকাতার বাসের বন্দোবস্ত করতে দ্রুত পদক্ষেপ করতে বলেছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন