Coronavirus

নেই ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি, লকডাউনে ই-বাইক বানিয়ে চমকে দিলেন দাঁতনের বিশ্বব্রত

কয়েকমাসের টানা পরিশ্রমের পর অবশেষে মিলেছে সাফল্য। আপাতত গ্রামের এবড়ো-খেবড়ো রাস্তায় দিব্যি ছুটছে মোটর বাইক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০২০ ০১:৩০
Share:

চালকের-আসনে: নিজের বানানো ই-বাইক চালাচ্ছেন বিশ্বব্রত। নিজস্ব চিত্র

টানা লকডাউনের জেরে পরিবেশে দূষণের মাত্রা কমেছে অনেকটাই। এই নিয়ে সমাজ মাধ্যম কিংবা ইন্টারনেটেও আলোচনার শেষ নেই। এমন পরিস্থিতিতে দূষণমুক্ত ই-বাইক তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন দাঁতন ১ ব্লকের রাজনগর গ্রামের বাসিন্দা ২৯ বছরের বিশ্বব্রত প্রধান।

Advertisement

কয়েকমাসের টানা পরিশ্রমের পর অবশেষে মিলেছে সাফল্য। আপাতত গ্রামের এবড়ো-খেবড়ো রাস্তায় দিব্যি ছুটছে মোটর বাইক। আর ভাল রাস্তায় তো কথাই নেই, সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার। চার ঘণ্টা ব্যাটারি চার্জে বাইক চলবে পাক্কা ১৫০ কিলোমিটার। বিশ্বব্রতের বিজ্ঞান কিংবা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ডিগ্রি নেই। বেলদা কলেজ থেকে বাংলায় স্নাতক হওয়ার পর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার প্রশিক্ষণ। মাঝে মোবাইল রিপেয়ারিংয়ের ডিপ্লোমা। মোটর বাইক তৈরির কোনও প্রশিক্ষণ নিয়েছেন? তাঁর জবাব, ‘‘দেখে দেখেই শেখা। আর বুদ্ধিকে কাজে লাগানো। এর আগে দু’চাকা ও তিনচাকার সাইকেল বানিয়েছি।’’

বিশ্বব্রতের আবিষ্কারে খুশি তাঁর পরিবারও। বাবা হীরেন্দ্রনাথ প্রধান বলছিলেন, ‘‘প্রথমের দিকে তো বুঝতেই পারিনি, কী বানাচ্ছে। এখন ভাল লাগছে।’’ কী কী রয়েছে এই মোটর বাইকে? যুবক জানাচ্ছেন, আধুনিক মোটর বাইকের সবকিছুই রয়েছে। সাউন্ড সিস্টেম থেকে ব্যাক-গিয়ার। হেডলাইট-সহ ইন্ডিকেটরে লাগানো রয়েছে এলইডি। বিশ্বব্রত জানাচ্ছেন, তিনি নিজেই নকশা করেছেন ই-বাইকটির। লোহার পাইপ জুড়ে, বাঁকিয়ে তৈরি করেছেন কাঠামো। মোটর বাইকে বসানো রয়েছে ৪৮ ভোল্ট ও ৩৬ অ্যাম্পিয়ারের লিথিয়াম ফসফেটের ব্যাটারি এবং ৪৮ ভোল্টের ও ৫০০ ওয়াটের মোটর। বিশ্বব্রতের কথায়, ‘‘সাধারণ ই-বাইকে থাকে লিথিয়াম আয়নের ব্যাটারি। এই মোটর বাইকের মোটরটিও কম বিদ্যুৎ খরচে বেশি শক্তি উৎপাদন করতে সক্ষম।’’

Advertisement

ই-বাইকটিতে রয়েছে পায়ের কাছে জিনিসপত্র রাখার ব্যবস্থা। রয়েছে অ্যামপ্লিফায়ার যুক্ত সাউন্ড-সিস্টেম। রয়েছে মোবাইল হোল্ডারও। বাইকটিতে রয়েছে ইকোনমি এবং হাইস্পিড মোড। গত বছর ডিসেম্বরে কাজ শুরু করেছিলেন বিশ্বব্রত। সহযোগী হিসেবে ছিল প্রতিবেশী অষ্টম শ্রেণির সন্দীপ দে। সদ্য শেষ হয়েছে কাজ। বাইকটিতে রয়েছে রিমোট লকের ব্যবস্থা। বিশ্বব্রত বলছিলেন, ‘‘বাড়িতে বসেই চলেছে কাজ। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি না থাকায় অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে। কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস অনলাইনেও কিনতে হয়েছে। এমন ই-বাইকের বাজারে দর এক লক্ষের উপরে। তবে আমাদের খরচ হয়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা।’’

আগে কখনও মোটর বাইক বানিয়েছেন? বিশ্বব্রতের উত্তর, ‘‘২০১২ সালে তিনচাকার বৈদ্যুতিক সাইকেল তৈরি করেছিলাম। তারপর থেকেই বাইক তৈরির ঝোঁক। সাফল্য পেয়ে ভাল লাগছে।’’ ই-বাইক বানিয়ে বিশ্বব্রতের চোখে-মুখে এখন বিশ্বজয়ের আনন্দ। আশা, যদি কোনও কোম্পানি যদি এই প্রযুক্তিকে কাজে লাগায় তবে কম টাকায়, দূষণমুক্ত এই ই-বাইক বাজারে আসতে পারবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement