Coronavirus Lockdown

বিপুল ক্ষতি আনাজের, চড়া দামের আশঙ্কা

ঝড়-বৃষ্টিতে ঠিক কত পরিমাণ জমির আনাজ নষ্ট হয়েছে, সেই হিসেব শনিবার পর্যন্ত কৃষি আধিকারিকেরা করে উঠতে পারেননি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০২০ ০০:৫০
Share:

প্রতীকী ছবি

ঘূর্ণিঝড় আমপানের জেরে চাষের প্রচুর ক্ষতি হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরে। সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে আনাজেরই। কৃষি দফতরের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ, এই সময়ে জেলার ১৩,২৫৪ হেক্টর জমিতে আনাজ চাষ হয়েছিল। এর মধ্যে ১২,০০০ হেক্টর জমির চাষ অর্থাৎ, জেলার ৯০ শতাংশ আনাজ চাষই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাজারে আনাজের দাম ক্রমশ বাড়তে পারে। হেঁশেল সামলাতে দিনমজুর থেকে মধ্যবিত্ত, সকলেই জেরবার হতে পারেন।

Advertisement

ঝড়-বৃষ্টিতে ঠিক কত পরিমাণ জমির আনাজ নষ্ট হয়েছে, সেই হিসেব শনিবার পর্যন্ত কৃষি আধিকারিকেরা করে উঠতে পারেননি। তাঁরা জানাচ্ছেন, শীঘ্রই পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তৈরি হবে। জেলাশাসক রশ্মি কমল মানছেন, ‘‘ঘূর্ণিঝড়ে এবং বৃষ্টিতে চাষের অনেক ক্ষতি হয়েছে। আনাজ চাষেরই সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ ঘূর্ণিঝড়ের দিন ঘাটালে ১৫১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। জেলার অন্যত্রও ৭০-৭২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এত বৃষ্টিতেই আনাজ চাষিরা বিপাকে পড়েছেন। খেতে জল জমে গাছ নষ্ট হচ্ছে। মেদিনীপুর গ্রামীণের আনাজ চাষি কেশব দোলুই বলছিলেন, ‘‘নিচু জমি তো বটেই, এ বার মাঝারি জমির আনাজও রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। যে সব গাছ টিকে আছে, তাতেও ফলন কমবে।’’ কৃষি আধিকারিকেরা বলছেন, কয়েকদিন টানা রোদ না হলে আনাজ চাষিদের সমস্যা বাড়বে।

আমপান পরবর্তী প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে, এই সময়ে জেলার ৯২,৩৮৬ হেক্টর জমিতে নানা ফসল ছিল। এর মধ্যে ৬২,১৫২ হেক্টর জমির ফসলই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বোরো ধান, আনাজ, তিল প্রভৃতি ক্ষেত্রে ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ ৩৯৯ কোটি ৯৫ লক্ষ টাকা। আর ফুল, পান প্রভৃতি ক্ষেত্রে ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ ৮ কোটি ৬৩ লক্ষ টাকা। কৃষি দফতরের এক সূত্রে খবর, ১,২১৫ হেক্টর জমির ফুল চাষের মধ্যে ৪১০ হেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফুলের উৎপাদন ২,৪৬০ মেট্রিক টন কমবে। এ ক্ষেত্রে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৪ কোটি ৯২ লক্ষ টাকা। ১,২৯৫ হেক্টর জমির পান চাষের মধ্যে ৭৪২ হেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানের উৎপাদন ৭,৪২০ লক্ষ মোটে কমবে। পান সাধারণত ‘মোট’ হিসেবে বিক্রি হয়। একটি মোটেতে ১০ হাজার পান থাকে। এ ক্ষেত্রে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৩ কোটি ৭১ লক্ষ টাকা। ৫৫,০৩০ হেক্টর জমির তিল চাষের মধ্যে ৪০,০০০ হেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিলের উৎপাদন ৪০ হাজার মেট্রিক টন কমবে। এ ক্ষেত্রে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১২০ কোটি টাকা। অন্যদিকে, ৭,৬৬৫ হেক্টর জমির বাদাম চাষের মধ্যে ৫,০০০ হেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাদামের উৎপাদন ১৫ হাজার মেট্রিক টন কমবে। এ ক্ষেত্রে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৬০ কোটি টাকা। ১২,৪২৭ হেক্টর জমিতে বোরো ধান ছিল। কমবেশি ৩,০০০ হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বোরোর উৎপাদন কমবে ১৬ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন। এ ক্ষেত্রে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ২৯ কোটি ৯৫ লক্ষ টাকা। ১,৫০০ হেক্টর জমির পাট চাষের মধ্যে ১,০০০ হেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাটের উৎপাদন কমবে ২ হাজার মেট্রিক টন। এ ক্ষেত্রে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১০ কোটি টাকা।

Advertisement

কৃষি দফতরের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ, জেলার ১৩,২৫৪ হেক্টর জমির আনাজ চাষের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ১২,০০০ হেক্টর জমিতে ১ লক্ষ ২০ হাজার মেট্রিক টন আনাজ উৎপাদন হত। এর আর্থিক মূল্য হত ১৮০ কোটি টাকা। অর্থাৎ, আনাজে এই বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, আমপানের জেরে জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৪ লক্ষ ৬ হাজার ৬৮৯ জন চাষি। ওই সূত্র মানছে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মাথায় হাত পড়েছে বিস্তীর্ণ এলাকার সব্জি চাষিদের। খেতে জল দাঁড়িয়ে পচন শুরু হয়েছে গাছে। উৎপাদন কমেছে। জানা যাচ্ছে, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পটল, ঢ্যাঁড়শ, ঝিঙে, টম্যাটো, বেগুন, লঙ্কা প্রভৃতি চাষই। জেলার কৃষি কর্মাধ্যক্ষ রমাপ্রসাদ গিরির স্বীকারোক্তি, ‘‘বিভিন্ন এলাকায় আনাজ খেত জলে ডুবেছে। ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘জেলাস্তরে আমরা পরিস্থিতির পর্যালোচনা করছি। রাজ্যকে জানানো হচ্ছে।’’ এ বার তো বাজারে আনাজ ছুঁয়ে দেখতে হাত পুড়তে পারে খদ্দেরদের? জেলার কৃষি কর্মাধ্যক্ষ বলেন, ‘‘বৃষ্টিতে আনাজ পচে গিয়েছে। ফলে খানিক আমদামি কমছে। দাম যাতে না বাড়ে, সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে।’’ তবে অনেকে মনে করছেন, এ বার বাজারে চক্কর কেটে ঠিকঠাক দামে পছন্দ মতো আনাজ কিনে থলেতে তুলে নেওয়া সম্ভব নাও হতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন