খুনের নালিশ

রেলের ইঞ্জিনিয়ারের বিকৃত দেহ কোয়ার্টারে

কোয়ার্টার থেকে রেলের এক ইঞ্জিনিয়ারের পচাগলা দেহ উদ্ধার হয়েছিল খড়্গপুরে। পুলিশের অনুমান ছিল, বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হয়েছে তাঁর। শেষমেশ বাড়ির লোক অভিযোগ তোলায় শুক্রবার সেই ঘটনাতেই খুনের মামলা রুজু করল পুলিশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৫ ০০:৪৭
Share:

সৌরভ কুমার। —নিজস্ব চিত্র।

কোয়ার্টার থেকে রেলের এক ইঞ্জিনিয়ারের পচাগলা দেহ উদ্ধার হয়েছিল খড়্গপুরে। পুলিশের অনুমান ছিল, বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হয়েছে তাঁর। শেষমেশ বাড়ির লোক অভিযোগ তোলায় শুক্রবার সেই ঘটনাতেই খুনের মামলা রুজু করল পুলিশ।

Advertisement

গত ২২ সেপ্টেম্বর রাতে খড়্গপুরের গোলবাজার মসজিদ সংলগ্ন রেল কোয়ার্টার থেকে উদ্ধার হয় সৌরভ কুমার (৩১) নামে ওই রেলকর্মীর দেহ। আদতে বিহারের হাজিপুরের আখিলাবাদের বাসিন্দা সৌরভ খড়্গপুর রেল ওয়ার্কশপের চিফ ডিপো মেটিরিয়াল সুপারিন্টেনডেন্ট পদে দেড় বছর ধরে কর্মরত ছিলেন। সেই রাতে তাঁর কোয়ার্টার থেকে পচা গন্ধ পেয়ে পুলিশে খবর দেন প্রতিবেশীরা। পুলিশ এসে বন্ধ ঘর থেকে সৌরভের পচাগলা দেহ উদ্ধার করে। পুলিশের অনুমান ছিল, বিষক্রিয়ায় সৌরভের মৃত্যু হয়েছে। সেই মতো অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা রুজু করে দেহটি ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়।

সৌরভের এক সহকর্মীর থেকে খবর পেয়ে ২৩ সেপ্টেম্বর বিহার থেকে খড়্গপুরে আসেন মৃতের দাদা বিপিন কুমার। তাঁর দাবি, পুলিশ প্রথমে খুনের অভিযোগ নিতে চায়নি। শনিবার ফোনে যোগাযোগ করা হলে বিপিন বলেন, ‘‘ভাইয়ের সঙ্গে কয়েকজন ঠিকাদারের অশান্তি হচ্ছিল বলে শুনেছিলাম। ও তাই চাপের মধ্যে ছিল। আমাদের ধারণা, ভাইকে খুন করা হয়েছে।’’ এরপরই তাঁর সংযোজন, ‘‘আমি প্রথমে খুনের অভিযোগ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ তা নিতে চায়নি। ময়নাতদন্তের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করতে বলেছিল। আসলে খড়্গপুর পুলিশ এই ঘটনাকে সাধারণ বিষক্রিয়া বলে চাপা দিতে চাইছে।’’ ভাই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ সামনে আনতে সিবিআই তদন্তেরও দাবি তুলেছেন তিনি।

Advertisement

পুলিশের অবশ্য দাবি, খড়্গপুর টাউন থানায় বিপিন একটি অভিযোগপত্র জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে খুনের কথা ছিল না। শুধু লেখা ছিল, এই ঘটনার পিছনে ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা করছেন তাঁরা। পরে তদন্তে বিভিন্ন সূত্র পেয়ে পুলিশই মামলায় খুনের ধারা রুজু করতে তৎপর হয়। কিন্তু সে ক্ষেত্রে মৃতের পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলা প্রয়োজন ছিল। পুলিশের দাবি, চেষ্টা করেও সৌরভের পরিজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার পুলিশ নিজেই উদ্যোগী হয়ে অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলায় খুনের ধারা রুজু করে। খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিষেক গুপ্ত বলেন, ‘‘রেলকর্মীর মৃতদেহ উদ্ধারের পরে প্রাথমিকভাবে অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু হয়েছিল। ঘটনার পরে মৃতের পরিবারের জমা দেওয়া অভিযোগে খুন বা কোনও সন্দেহভাজন ব্যক্তির কথা বলা হয়নি। তবে আমরাই পরে খুনের মামলা রুজু করেছি। তদন্ত চলছে।’’ পুলিশ সূত্রের খবর, সত্যিই সৌরভের উপরে কারও চাপ ছিল কি না তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। পুলিশ আরও জানিয়েছে, ময়নাতদন্তের রিপোর্টে সৌরভের দেহে বিষ পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। নমুনা ভিসেরা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। আর খড়্গপুর ডিভিশনের সিনিয়র সিকিউরিটি কমিশনার মহেশ্বর সিংহের বক্তব্য, ‘‘পুলিশ তদন্ত করছে। আমাদের ঊর্ধ্বতন আধিকারিকেরা ঘটনার বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়েছিলেন। আমরা সেটা পাঠিয়ে দিয়েছি।’’

যেখানে সৌরভের দেহ মিলেছিল, সেই ওল্ড সেটলমেন্টের কোয়ার্টারের বাসিন্দারা জানালেন, মাত্র দেড় বছর ওই এলাকায় ছিলেন সৌরভ। সে ভাবে কারও সঙ্গে মেলেমেশা করতেন না। তবে বিনয়ী স্বভাবের ছিলেন। সৌরভের কোয়ার্টারের ঠিক উল্টো দিকের কোয়ার্টারে থাকেন প্রৌঢ়া মিলি রায়। তিনি বলেন, ‘‘ছেলেটি কিছুদিন হল এসেছিল। ওঁর সঙ্গে আমাদের এলাকার কারও কথাবার্তা হত না। তবে ভদ্র স্বভাবের ছিল। নিজের মতো অফিস থেকে কোয়ার্টারে ফিরে ঘরেই থাকত। কিন্তু বাড়িতে ছোট ছেলেমেয়েরা খেলতে ঢুকলেও বাধা দিত না। কোনও লোকজনের আনাগোনাও চোখে পড়েনি। ওই ঘটনার পর থেকে চোখের সামনে ওঁর মুখটা ভাসছে।’’ আর পাশের কোয়ার্টারের বাসিন্দা ই নানাজি বলেন, ‘‘ওঁর সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ ছিল না। নিজের মতোই থাকত। কীভাবে এমন ঘটনা ঘটল বুঝতে পারছি না। আমরা আতঙ্কে রয়েছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন