রায় কামদুনি খ্যাত বিচারকের

পরিচারিকাকে ধর্ষণ-খুনে ফাঁসির সাজা

মেয়ের খুনের মামলার রায়দান শুনতে সাত সকালেই হলদিয়া থেকে তমলুক যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন মা। আর্জি ছিল, মেয়ের খুনির যেন ফাঁসি হয়। সেই আর্জিই সত্যি হল শুক্রবার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

হলদিয়া শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৮ ০৪:৫৮
Share:

মেয়ের খুনের মামলার রায়দান শুনতে সাত সকালেই হলদিয়া থেকে তমলুক যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন মা। আর্জি ছিল, মেয়ের খুনির যেন ফাঁসি হয়। সেই আর্জিই সত্যি হল শুক্রবার। নাবালিকা পরিচারিকাকে ধর্ষণ ও খুনে দোষী সাব্যস্তকে এ দিন মৃত্যুদণ্ড দিলেন তমলুকের অতিরিক্ত ও দায়রা আদালতের বিচারক (সেকেন্ড কোর্ট) সঞ্চিতা সরকার। যিনি কামদুনি গণধর্ষণ-কাণ্ডের মতো মামলায় দোষীদের ফাঁসির সাজা শুনিয়েছেন।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৬ সালের ৮ অগস্ট হলদিয়া পুরসভার ২২ নম্বর ওয়ার্ডের শ্রীমন্ত তুঙ্গ নামে এক বাসিন্দার বাড়ি থেকে এক কিশোরীর অগ্নিদগ্ধ দেহ পাওয়া গিয়েছিল। ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করে খুন এবং প্রমাণ লোপাটের জন্য তার গায়ে আগুন লাগানোর অভিযোগে শ্রীমন্তকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। নাবালিকার মা হলদিয়া থানায় লিখিতভাবে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। ওই নাবালিকা শ্রীমন্তের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করত।

টাউনশিপের ব্রজনাথচকের বাসিন্দা শ্রীমন্ত হলদিয়া বন্দরের অস্থায়ী কর্মী ছিল। সরকারি আইনজীবী সূত্রে খবর, ওই মামলায় মোট ২০ জনের সাক্ষ্য দেওয়ার কথা ছিল। তার মধ্যে ১৫ জনের সাক্ষ্য নেওয়ার পর শ্রীমন্তকে বৃহস্পতিবার দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। এ দিন শ্রীমন্তকে তোলা হয় তমলুকের অতিরিক্ত ও দায়রা আদালতের বিচারক (সেকেন্ড কোর্ট) সঞ্চিতা সরকারের এজলাসে। তিনিই শ্রীমন্তের ফাঁসির সাজা ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে তিনি ওই নাবালিকার পরিবারকে পাঁচ লক্ষ টাকা সাহায্য দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেন।

Advertisement

উল্লেখ্য, ২০১৬ সাল থেকে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা আদালতের অতিরিক্ত দায়রা বিচারক পদে রয়েছেন সঞ্চিতাদেবী। মাস আটেক আগে তমলুকের দক্ষিণচড়া এলাকায় একটি খুনের মামলার দোষী স্কুলশিক্ষক প্রণব রায়কেও ফাঁসির সাজা শুনিয়েছিলেন তিনি। এ দিন শ্রীমন্তের ফাঁসির সাজার দাবিতে জেলা আদালত চত্বরে বিক্ষোভ দেখায় বিজেপির তমলুক নগর মণ্ডল, সারা ভারত মহিলা সাংস্কৃতিক সংগঠন, সারা বাংলা পরিচারিকা সমিতি।

নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, তার বাবা মারা গিয়েছে। তিন সন্তানকে নিয়ে সংসার সামলানো মুশকিল হয়ে গিয়েছিল ওই নাবালিকার মায়ের পক্ষে। তাই শ্রীমন্তের বাড়িতে মেয়েকে পরিচারিকার কাজে রেখেছিলেন নাবালিকার মা। এ দিন রায় শোনার জন্য সাত সকালেই তমলুক যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন তিনি। কাঁদতে কাঁদতে মহিলা বলেন, ‘‘কী ক্ষতি করেছিল মেয়েটা। শ্রীমন্ত মদ খেয়ে আমার মেয়েকে খুন করল। এখন ছোট ছেলে আর মেয়ে নিয়ে কোথায় যাব!’’

সাজা ঘোষণার পর নাবালিকার প্রতিবেশী সঞ্জয় দাসের প্রতিক্রিয়া, ‘‘আগামী প্রজন্মকে সুস্থ ভাবে বাঁচাতে হলে এমন দৃষ্টান্তমূলক সাজা দরকার। এতে সমাজ কিছুটা হলেও অপরাধ মুক্ত হবে।’’ এ দিন সাজা ঘোষণার পর সরকার পক্ষের আইনজীবী আব্দুল মোহিত বলেন, ‘‘ময়না তদন্তের রিপোর্ট এবং পুলিশের তদন্ত দ্রুত সম্পন্ন হওয়ায় এই মামলার দ্রুত নিস্পত্তি হয়েছে।’’

অন্যদিকে, অভিযুক্তের পক্ষের আইনজীবী হিরণ ভট্টাচার্যের দাবি, ‘‘এই রায়ে আমরা অখুশি। রায়ের বিরোধিতায় উচ্চ আদালতে যাব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন