দেখেও দেখে না প্রশাসন, অভিযোগ ঘাটালের মান্দারপুরে

চুরিই নিয়ম হুকিং গ্রামে

মাথার উপর তাকালে যেন সার সার তারের জঙ্গল। সেই তারের কিছু অংশ ঢ়ুকে গিয়ে এলাকার বাড়িতে বাড়িতে। এমনই ছবি ঘাটালের দেওয়ানচক-১ পঞ্চায়েতের মান্দারপুর গ্রামে।

Advertisement

অভিজিৎ চক্রবর্তী

ঘাটাল শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৭ ০১:৩৪
Share:

বেআইনি: বৈদ্যুতিক খুঁটিতে বাঁশের মাধ্যমে এমন ভাবেই হুকিং করা হয় মান্দারপুর গ্রামে। নিজস্ব চিত্র

মাথার উপর তাকালে যেন সার সার তারের জঙ্গল। সেই তারের কিছু অংশ ঢ়ুকে গিয়ে এলাকার বাড়িতে বাড়িতে। এমনই ছবি ঘাটালের দেওয়ানচক-১ পঞ্চায়েতের মান্দারপুর গ্রামে।

Advertisement

এলাকার উপর দিয়ে চলে গিয়েছে দু’শো কুড়ি ভোল্টের বিদ্যুৎবাহী তার। সেই তারেই অগুন্তি হুকিং। এমনটাই চলছে মাসের পর মাস। বছরের পর বছর। বৈধ বিদ্যুৎ গ্রাহকেরা লো-ভেল্টেজের সমস্যায় জেরবার। রাজস্ব কমছে বিদ্যুৎ দফতরেও। খবর পেয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে বিদ্যুৎ দফতরের কর্মীরা মান্দারপুর গ্রামে অভিযানে যায়। বিদ্যুৎ দফতরের কর্তারা বিদ্যুৎ চোরদের হাতে মার খেয়ে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন।

গ্রামবাসী জানালেন, “হুকিং করে বিদ্যুৎ ব্যবহার একটা অভ্যাসে দাঁড়িয়েছে। গ্রামেরও বদনাম হচ্ছে। তাই নিয়মিত অভিযান এবং পুলিশি ধড়পাকড় জরুরি।” এক মহিলা তো বলেই ফেললেন, “এত হুকিং যে মান্দারপুরের বদলে ‘হুকিং গ্রাম’ বললেও অনেকে চিনিয়ে দেবে গ্রামের রাস্তা। আমার শ্বশুরও হুকিং করে। এ নিয়েই আমাদের মধ্যে মাঝে মধ্যে অশান্তি হয়।”

Advertisement

ঘাটালেরর কুঠিঘাট-রাধানগর সড়ক ধরে মহারাজপুর মোড় থেকে বাঁ দিকে কিছুটা মেঠো রাস্তা দিয়ে গেলেই মান্দারপুর গ্রাম। গ্রামে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে শ’আড়াইয়েক পরিবারের বাস। কৃষি নির্ভর গ্রামটিতে প্রায় সকলেরই বিদ্যুতের সংযোগও রয়েছে। বাম আমলেই গ্রামটিতে বিদ্যুৎ ঢুকেছিল। সূত্রের খবর, বাঁশকে শুকনো করে তার জড়িয়ে খুঁটির সঙ্গে তার হুকিং করে বাড়িতে ব্যবহার হচ্ছে বিদ্যুৎ।

অথচ, গ্রামের আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ নয়। একাধিক পাকা বাড়িও রয়েছে। বিদ্যুৎ দফতর সূত্রের খবর, মান্দারপুর গ্রামে সিংহভাগ পরিবারের বিদ্যুতের মাসিক বিল হয় একশো তিরিশ টাকা। বিদ্যুৎ দফতর সূত্রের খবর, যে ভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়, বিদ্যুৎ চুরি না করলে মাসে অন্তত সবর্নিম্ন চারশো থেকে সাড়ে চারশো করে বিল হবেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দার কথায়, “হুকিং করার ফলে মিটারের রিডিং তো বাড়ছে না। তাই গড়ে একটা বিল আসে। তবে সবার নয়। আমার প্রতি তিন মাসে দেড় থেকে দু’হাজার টাকা বিল আসে।”

সূত্রের খবর, হুকিংয়ের জেরে সন্ধ্যার পর গ্রামের রাস্তা দিয়ে চলাচলে সমস্যা হয়। মাঝে মধ্যেই খুঁটি থেকে বিদ্যুৎবাহী তার মাটিতে পড়ে থাকে। এছাড়াও লো-ভোল্টেজ তো নিত্যসঙ্গী। গ্রামের একাধিক বাসিন্দা জানালেন, “গ্রামের প্রায় সত্তর ভাগ পরিবারই বিদ্যুৎ চুরি করে। যাঁরা নিয়ম করে বিদ্যুতের বিল মেটায়, তাঁদের সমস্যা। প্রতিবাদ করারও জো নেই।”

বিদ্যুৎ দফতরের ঘাটাল স্টেশন ম্যানেজার অনিরুদ্ধ মণ্ডলের কথায়, “মান্দারপুর গ্রামে বড় অভিযান হবে। একে তো কম বিল। তার উপর বিদ্যুতের বিলও ঠিকঠাক আদায় হয় না। হুকিং বন্ধ না হলে লো-ভোল্টেজও দূর হবে না।” স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা ঘাটাল পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ বিকাশ কর বললেন, “হুকিং নিয়ে মান্দারপুর গ্রামে সমস্যার কথা শুনেছি। দলীয় ভাবে বিষয়টি দেখা হচ্ছে ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন