প্রতিবন্ধী বলে চিৎকার করেও রেহাই পেলাম না

ওঁদের কেউ দৃষ্টিহীন, কেউ বা পোলিওয় আক্রান্ত হয়ে হাঁটতে পারেন না। কেউ মূক-বধির। মঙ্গলবার তাঁরাই রাজনৈতিক সংঘর্ষের মাঝে পড়ে আক্রান্ত হলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

তমলুক শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:২০
Share:

বাসে ভাঙচুরের চিহ্ন।

ওঁদের কেউ দৃষ্টিহীন, কেউ বা পোলিওয় আক্রান্ত হয়ে হাঁটতে পারেন না। কেউ মূক-বধির। মঙ্গলবার তাঁরাই রাজনৈতিক সংঘর্ষের মাঝে পড়ে আক্রান্ত হলেন। নিজেদের পরিচয় জানালেও উন্মত্ত আক্রমণকারীদের হাত থেকে রেহাই মিলল না।

Advertisement

মঙ্গলবার বিকেলের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে একদিন পরেও শিউরে উঠছিল দৃষ্টিহীন প্রিয়ঙ্কা মাল, সৌরভ মাইতি। তমলুকের নিমতৌড়ির এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা (তমলুক উন্নয়ন সমিতি) পরিচালিত প্রতিবন্ধীদের স্কুলের শিল্পীদের দলটি মঙ্গলবার পশ্চিম মেদিনীপুরের মোহনপুর কলেজে যাচ্ছিলেন অনুষ্ঠান করতে। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, স্কুলেরই একটি বাসে চেপে মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ রওনা হয়। কাঁথি শহরে ঢোকার বাইপাসের আধ কিলোমিটার দূরে আটকে পড়ে বাস। তৃণমূল ও বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের সংঘর্ষে তখন রণক্ষেত্র ওই এলাকা। হামলার মুখে পড়ে প্রতিবন্ধীদের বাসটিও। বাসে ২৪ জন প্রতিবন্ধী ছিলেন। তাঁদের অন্যতম নৃত্যশিল্পী বছর তিরিশের গুরুপদ দোলুই। পোলিওয় দুটো পাই-ই অকেজো। তিনি জানান, হঠাৎ দেখা গেল একদল লোক বাঁশ-লাঠি নিয়ে বাস-গাড়ি ভাঙচুর করে এগিয়ে আসছে। অনেকেই বাস থেকে নেমে ছুটে পালাচ্ছে। গুরুপদবাবুর কথায়, ‘‘ওই দৃশ্য দেখে সকলেই খুব ভয় পেয়ে যাই। কারণ, আমাদের তো ছুটে পালানোর ক্ষমতা নেই! ‘আমরা প্রতিবন্ধী, আমাদের গাড়ি ভাঙবেন না’ বলে চিৎকার শুরু করি। কিন্তু তাতে কান না দিয়েই ওরা বলে, ‘এটা শুভেন্দুর গাড়ি, এটা আগে ভাঙ’। কারণ, আমাদের গাড়ির গায়ে লেখা ছিল ‘শুভেন্দু অধিকারীর অর্থানুকূল্যে’। লাঠির আঘাতে জখম হয়েছে মূক-বধির শিল্পী মৌমিতা পাল, ছন্দা মাইতি, দু’হাত না থাকা পার্বতী জানা।’’

স্কুলের পরিচালন কমিটির সম্পাদক যোগেশ সামন্ত বলেন, ‘‘পরিচয় দেওয়া সত্ত্বেও যে ভাবে ওরা আক্রমণের শিকার হয়েছে তাতে আমরা উদ্বিগ্ন। পুলিশে অভিযোগ জানানো হয়েছে। আমরা চাই প্রশাসন তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিক।’’ তৃণমূল সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘শুভেন্দুবাবু বিধায়ক হিসেবে এলাকা উন্নয়নের তহবিল থেকে প্রতিবন্ধী স্কুলের জন্য গাড়ি কিনে দেন। সেই গাড়ি ও প্রতিবন্ধীদের উপর আক্রমণ করে বিজেপির লোকজন কদর্য মানসিকতার পরিচয় দিল।’’ বিজেপির তমলুক জেলা সভাপতি প্রদীপ দাসের দাবি, ‘‘কাঁথিতে আমাদের কর্মী-সমর্থকদের মারধর ও গাড়ি ভাঙচুর করে তৃণমূলের লোকেরা গুন্ডামি করেছে। প্রতিবন্ধীদের গাড়ি আক্রমণে আমাদের কেউ জড়িত নয়।’’

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন