নেশায় ডাকটিকিট জমান প্রতাপরা

কেউ শুরুটা করেছিলেন চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময়, বাবার কাছে জাপানের ডাকটিকিট দেখে। কেউ আবার ষষ্ঠ শ্রেণিতে বন্ধুদের থেকে নেশাটা পেয়েছেন। কারও ভাল লাগা শুরু ডাকবিভাগে চাকরি পাওয়ার পরে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:৪৬
Share:

মেদিনীপুরে ডাকটিকিট প্রদর্শনীতে চার সংগ্রাহক। বাঁ দিক থেকে প্রতাপ চক্রবর্তী, সূর্যকান্ত বিশ্বাস, পদম পরযুলি ও সন্দীপকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার সৌমেশ্বর মণ্ডলের ছবি।

কেউ শুরুটা করেছিলেন চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময়, বাবার কাছে জাপানের ডাকটিকিট দেখে। কেউ আবার ষষ্ঠ শ্রেণিতে বন্ধুদের থেকে নেশাটা পেয়েছেন। কারও ভাল লাগা শুরু ডাকবিভাগে চাকরি পাওয়ার পরে। মেদিনীপুর থেকে মুর্শিদাবাদ, দুর্গাপুর থেকে সিকিম— নানা প্রান্তের এমন সব ডাকটিকিট সংগ্রাহকরাই ডাকটিকিট প্রদর্শনী ও প্রতিযোগিতার প্রধান আকর্ষণ।

Advertisement

মেদিনীপুরে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিল ডাক বিভাগ। দু’দিনের প্রদর্শনী শেষ হয়েছে শনিবার। এই প্রদর্শনীতে সামিল হয়েছিলেন মেদিনীপুর মুখ্য ডাকঘরের ডেপুটি পোস্টমাস্টার প্রতাপ চক্রবর্তী। মেদিনীপুর শহরের দেশপ্রাণপল্লির বাসিন্দা প্রতাপবাবু ১৯৮২ সালে ডাক বিভাগে চাকরি পাওয়ার পরই ডাকটিকিট জমাতে শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘‘চাকরির পরে নিজে হাতে ডাকটিকিট ঘাঁটতে ঘাঁটতে ভাল লাগার শুরু। তারপর বিভিন্ন প্রদর্শনীতে গিয়ে পুরনো দিনের ডাকটিকিট সংগ্রহ করি।’’ প্রতাপবাবুর সংগ্রহে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমল থেকে স্বাধীন ভারতের প্রথম ডাকটিকিট, সবই রয়েছে।

সিকিমের সিংতামের বাসিন্দা পদম পরযুলির বাবা কলকাতা পুলিশে কাজ করতেন। পদম যখন চতুর্থ শ্রেণিতে পড়েন, তখন বাবার কাছ থেকে জাপানের দু’টি ডাকটিকিট পেয়েছিলেন। তারপর ডাকটিকিট জমানোটা নেশা হয়ে গিয়েছে। পদম বলছিলেন, ‘‘ছোট থেকেই ডাকটিকিট জমাতাম। ২০০৪ সালে শিলিগুড়িতে ‘মেঘদূত ডাকটিকিট প্রদর্শনী’-তে গিয়ে জানলাম প্রদর্শনীতে আমরাও যোগ দিতে পারি। সেই থেকে রাজ্য ও জাতীয়স্তরের বিভিন্ন প্রদর্শনীতে যাই।’’ এখন তাঁর ঝুলিতে প্রায় ৬ হাজার দেশ-বিদেশের ডাকটিকিট ও মুদ্রা রয়েছে। সিকিমেরই সুশীল করথকের কাছে আবার সিংহল ও শ্রীলঙ্কা, একই দেশের দুই নামের আমলের ডাকটিকিট রয়েছে। তাইল্যান্ডের আগে নাম ছিল শিয়াং। এই দুই নামের ডাকটিকিটও সংগ্রহ করেছেন সুশীল।

Advertisement

বহরমপুরের সূর্যকান্ত বিশ্বাস বাবার চাকরির সূত্রে শিলিগুড়িতে থাকতেন। সেখানেই পড়াশোনা করেছেন। সূর্যকান্তবাবু যখন ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র, তখন এক বন্ধুর থেকে ডাকটিকিট জমানোর কথা জানতে পারেন। ক্রমে সেই নেশা পেয়ে বসে সূর্যবাবুকেও। এখন তাঁর কাছে দেশ-বিদেশের প্রায় ৫০ হাজার ডাকটিকিট রয়েছে। সূর্যবাবুর কাছে রয়েছে ১৮৫৪ সালে প্রথম ছাপা ডাকটিকিট— ‘হাপয়ানা লিথো’। লিথো পদ্ধতিতে ছাপা হয়েছিল বলেই এই নাম। সূর্যবাবু বলেন, ‘‘বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জে আমার এক পত্রবন্ধু আছে। তাঁর নাম তালুকদার মঞ্জির কাদের। ওই বন্ধুর কাছ থেকেই বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগের আট ধরনের ডাকটিকিট সংগ্রহ করেছি।’’ সূর্যবাবু এখন ‘শিলিগুড়ি ফিলাটেলিকের’ সম্পাদক। রাজ্য ও জাতীয়স্তরের ডাকটিকিট প্রতিযোগিতায় পুরস্কারও পেয়েছেন। প্রদর্শনীতে এসেছিলেন দুর্গাপুরের সন্দীপকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তাঁর সংগ্রহেও রয়েছে দেশ-বিদেশের রকমারি ডাকটিকিট।

এমনই ডাকটিকিট পাগল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ৯ জন এবং বাইরের ২০ জন মেদিনীপুরের এই প্রদর্শনীতে যোগ দিয়েছিলেন। ছিল মেদিনীপুরের অষ্টম শ্রেণির দুই স্কুল পড়ুয়া বিবস্বান ঘোষ ও অঙ্কিতা ঘোষও। তাদের সংগৃহীত ডাকটিকিটও ঠাঁই পেয়েছিল প্রদর্শনীতে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement