মণিকা সরেন। — নিজস্ব চিত্র।
জঙ্গলমহলের সোনার মেয়ে মণিকা সরেনকে সরকারি প্রকল্পে বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। মণিকার পরিবারের তরফে এ নিয়ে আবেদন করা হয়েছিল। প্রশাসন তা মঞ্জুর করছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের শিক্ষা-ক্রীড়া কর্মাধ্যক্ষ শ্যামপদ পাত্র বলেন, “মণিকা আমাদের গর্ব। ওর বাড়ির অবস্থা খুব খারাপ। তাই ওঁকে সরকারি প্রকল্পে বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হবে।’’ শীঘ্রই বাড়ি তৈরির অর্থ বরাদ্দ হবে বলে শ্যামপদবাবু জানান।
দারিদ্রের সঙ্গে যুঝেই লক্ষ্যভেদ করে চলেছেন মণিকা। নয়াগ্রামের ভালিয়াঘাঁটি গ্রামের অ্যাসবেস্টসের ছাউনি দেওয়া মাটির বাড়ি জুড়ে অনটনের ছাপ। মণিকারা চার ভাই-বোন। বাবা লেবাচাঁদ ও মা মাইদি সরেন অন্যের জমিতে ভাগচাষ করেন। সেই ভরসাতেই চলে সংসার।
এর মধ্যে থেকেই এগোচ্ছেন মণিকা। বছর কয়েক আগেও বাঁশের ধনুক নিয়ে অনুশীলন করেছেন। তারপর নয়াগ্রামে একের পর এক প্রতিযোগিতায় তাঁর লক্ষ্যভেদ জেলার ক্রীড়া-প্রশাসকদের নজরে পড়ে। আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। মাস কয়েক আগে এশীয় জুনিয়র রিকার্ভ ও কম্পাউন্ড তিরন্দাজিতে ভারতের হয়ে দলগত সোনা পেয়েছেন তিনি। এই প্রতিযোগিতা হয়েছিল চিনের তাইপেতে। পশ্চিম মেদিনীপুরের নয়াগ্রাম থেকে চিনের তাইপে— পথটা খুব সহজ ছিল না। তবু অদম্য মনের জোরেই স্বপ্নের উড়ান শুরু হয়েছে। বছর উনিশের মণিকা নয়াগ্রামের টোটাসাই জনকল্যাণ বিদ্যালয় থেকে এ বছরই উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছেন। এখন কলকাতার সাইতে অনুশীলন করছেন। কলকাতার একটি কলেজে ভর্তিও হয়েছেন। প্রশাসন সূত্রে খবর, মণিকার বাবাই সরকারি প্রকল্পে বাড়ি চেয়ে প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছিলেন। মঙ্গলবার নয়াগ্রামের বাড়িতেই ছিলেন মণিকা। প্রশাসন তাঁর পাশে দাঁড়ানোয় খুশি তিনি। জঙ্গলমহলের এই প্রতিভাবান তিরন্দাজের কথায়, “ছোট ঘরেই আমরা থাকি। যেখানে রান্নাঘর তার পাশেই থাকার ঘর। আর একটা ঘর খুব প্রয়োজন ছিল। প্রশাসন সরকারি প্রকল্পে একটা ঘর তৈরি করে দিলে খুবই ভাল হয়।” এর আগে জাতীয়স্তরের প্রতিযোগিতায় সাফল্যের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মণিকাকে অত্যাধুনিক তির-ধনুক দিয়েছেন। জেলার ক্রীড়া-প্রশাসক তাপস দে বলছিলেন, “গত বছর মুখ্যমন্ত্রী মণিকাকে খেলার সরঞ্জাম দিয়েছিলেন। ও তাঁর মান রেখেছে। মণিকা আরও অনেক দূর এগোবে।’’