IIT Kharagpur

খড়্গপুর আইআইটিতে এখন হিন্দি, ইংরেজির পাশাপাশি বাংলাতেও লেখা হবে ফলক, সাইনবোর্ড!

খড়্গপুর আইআটিতে এখন থেকে নাম, তথ্য লেখার ফলক বা দিক্‌নির্দেশ দেওয়ার ফলক, সাইনবোর্ডে ইংরেজি, হিন্দির পাশাপাশি বাংলাতেও লেখা থাকবে। ভিন্‌রাজ্যে বাংলা ভাষায় কথা বলে বার বার আক্রমণের মুখে পড়েছেন এ রাজ্যের মানুষজন। এই আবহে কর্তৃপক্ষের এমন পদক্ষেপ ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলেই মনে করা হচ্ছে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০২৫ ১৯:১০
Share:

আইআইটি খড়্গপুরের নির্দেশকের দফতর এবং সরকারি বাসভবনের ফলকে ইংরেজি, হিন্দির পাশাপাশি বাংলাতেও নাম-পরিচয় লেখা হয়েছে। —নিজস্ব চিত্র।

খড়্গপুর আইআটিতে এখন থেকে নাম, তথ্য লেখার ফলক বা দিক্‌নির্দেশ দেওয়ার ফলক, সাইনবোর্ডে ইংরেজি, হিন্দির পাশাপাশি বাংলা লেখাও থাকবে। আইআইটি খড়্গপুরের নির্দেশক সুমন চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ক্যাম্পাসের বহু অশিক্ষককর্মী স্থানীয়। তাঁরা বাংলা ছাড়া অন্য কোনও ভাষা পড়তে বা লিখতে জানেন না। তাঁদের কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত। তা ছাড়া জাতীয় শিক্ষানীতিতে শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে তিন ভাষা ব্যবহারের বিষয়টি মাথায় রেখেই এই পদক্ষেপ করা হয়েছে। এমনকি, তিনি নিজের দফতর এবং সরকারি বাসভবনের ফলকে ইংরেজি, হিন্দির পাশাপাশি বাংলাতেও নাম-পরিচয় লিখেছেন। আইআইটি খড়্গপুরের কোনও নির্দেশক এর আগে এই পদক্ষেপ করেননি। ভিন্‌রাজ্যে বাংলা ভাষায় কথা বলে বার বার আক্রমণের মুখে পড়েছেন এ রাজ্যের মানুষজন। থানায় আটক করার অভিযোগও উঠেছে। এই আবহে খড়্গপুর আইআইটি কর্তৃপক্ষের এই পদক্ষেপ ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করা হচ্ছে।

Advertisement

কয়েক মাস আগেই আইআইটির নির্দেশকের দায়িত্ব নিয়েছেন সুমন। তিনি জানিয়েছেন, আঞ্চলিক ভাষাকে আরও বেশি করে প্রচারে আনতেই মূলত এই উদ্যোগ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বহু কর্মী হিন্দি বা ইংরেজিতে স্বচ্ছন্দ নন। তাঁদের কথা ভেবেও এই পদক্ষেপ করা হয়েছে। সুমনের কথায়, ‘‘আমাদের সংস্কৃতির রূপান্তর, আমাদের ভাবনাচিন্তার পরিবর্তন তুলে ধরতে প্রতীকী ভাবে এই পদক্ষেপ করেছি। ২০২০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতিতে যে ভাবে তিন ভাষার কথা বলা রয়েছে, তা অনুসরণ করা হয়েছে। ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যেমন অডিটোরিয়াম, ভবন, বিভিন্ন বিভাগ, হিজলি ডিটেনশন ক্যাম্পের ফলক যাতে ইংরেজি, হিন্দির পাশাপাশি বাংলাতেও লেখা হয়, তা রাজভাষা বিভাগের প্রফেসর-ইন-চার্জকে নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।’’ সুমন আরও জানিয়েছেন, এই হিজলি ডিটেনশন ক্যাম্পকেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্মস্থান ধরা হয়। সেখানে বিপ্লবীদের কৃতিত্ব বাংলায় লেখা নেই। এই বিষয়টি ‘অদ্ভুত’ বলেই মনে হয়েছে আইআইটি খড়্গপুরের নির্দেশকের। এখন সেখানকার ফলকেও ইংরেজি, হিন্দির পাশাপাশি বাংলায় লেখা থাকবে।

সুমন জানিয়েছেন, আইআইটি খড়্গপুরে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পড়ুয়া, শিক্ষকেরা আসেন। সেখানে কথা বলার মাধ্যম হয় মূলত ইংরেজি এবং হিন্দি। তাঁর মতে, বাংলা ওই ক্যাম্পাসে অনেক দিন ধরেই ‘ব্রাত্য’ হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের মনে রাখতে হবে, এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে বাংলায়। বহু অশিক্ষককর্মী শুধু বাংলাতেই লিখতে এবং পড়তে পারেন। কেউ কেউ হিন্দি বুঝলেও লিখতে পারেন না।’’ এই মানুষজনদের জন্যই এ বার থেকে ক্যাম্পাসের ফলকে বাংলাতেও লেখা থাকবে তথ্য।

Advertisement

আগামী ১৮ অগস্ট আইআইটির প্রতিষ্ঠা দিবস। ওই দিন কিছু পরিকাঠামোর শিলান্যাসের কর্মসূচি রয়েছে। সেই শিলান্যাস-ফলকেও ইংরেজি, হিন্দির পাশাপাশি বাংলা লেখা থাকবে বলে জানিয়েছেন সুমন। তাঁর বাড়ি এবং দফতরের ফলকেও তিন ভাষায় নাম, পরিচয় লেখা রয়েছে।

প্রসঙ্গত, জাতীয় শিক্ষানীতির মাধ্যমে হিন্দি ভাষা চাপিয়ে দিতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার— এমন অভিযোগ তুলেছে বাংলা-সহ দক্ষিণের রাজ্যগুলি। তাদের অভিযোগ, আঞ্চলিক ভাষাকে ‘খাটো’ করার চেষ্টা চলছে। এর মাঝেই বিজেপিশাসিত রাজ্যে বাংলাভাষীদের হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে। তার মাঝেই এই পদক্ষেপ খড়্গপুর আইআইটির নির্দেশকের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement