কংগ্রেসের প্রার্থীদের নাম ঘোষণার দিনই জট তৈরি হল জঙ্গলমহলের ঝাড়গ্রাম আসনটিকে ঘিরে। মঙ্গলবার দুপুরে সিপিএমের প্রার্থী ও নেতাদের সঙ্গে মিছিল করে এসে ঝাড়গ্রাম বিধানসভা আসনে বাম সমর্থিত জোটের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিলেন ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন)-এর নেত্রী চুনিবালা হাঁসদা। কিন্তু সন্ধ্যায় ঝাড়গ্রাম আসনে সুব্রত ভট্টাচার্যকে জোটের দলের প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণা করল কংগ্রেস।
৬২ বছরের সুব্রতবাবু ঝাড়গ্রাম জেলা কংগ্রেসের সভাপতি। বর্তমানে তিনি বেলপাহাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির কংগ্রেসের বিরোধী দলনেতা। যদিও প্রদেশ কংগ্রেস সূত্রের খবর, চুনিবালার সঙ্গে আলোচনার সুযোগ থাকছে। যাতে এই জট কাটানো যায়।
এমন ঘটনায় অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সিপিএম। সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য ডহরেশ্বর সেন বলেন, “রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশে এ দিন চুনিবালা হাঁসদার সঙ্গে পদযাত্রা করে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন আমাদের দলের প্রার্থীরা। রাজ্য নেতৃত্বের পরবর্তী নির্দেশ এলে পদক্ষেপ করা হবে।”
সূত্রের খবর, ঝাড়গ্রাম বিধানসভা আসনে জোটের প্রার্থী হিসেবে ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন)-এর নেত্রী চুনিবালা হাঁসদাকে প্রথম থেকেই চাইছিলেন সিপিএম নেতৃত্ব। জোটসঙ্গী কংগ্রেসকে ঝাড়গ্রাম ও নয়াগ্রাম আসনটি ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কংগ্রেসের তরফে ওই দু’টি আসনে কারা প্রার্থী হচ্ছেন তা মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ঘোষণা করা হয়নি। শেষ পর্যন্ত অবশ্য এদিন সিপিএমের সঙ্গে যৌথ মিছিলে যোগ দিয়ে ঝাড়গ্রাম বিধানসভা আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেন ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন) নেত্রী চুনিবাল হাঁসদা। তবে এ দিন ঝাড়গ্রাম জেলা কংগ্রেস সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য, নিখিল মাইতি, কালিপদ মাইতির মতো জঙ্গলমহলের কংগ্রেস নেতারা অবশ্য মিছিলে হাঁটেননি।
কিন্তু চুনিবালার মনোনয়নপত্র দাখিল করার সময় বিপত্তি। যে মাপের ছবি দরকার, তার চেয়ে বড় মাপের ছবি নিয়ে এসেছিলেন চুনিবালা। সঙ্গে সঙ্গে ‘চুনিদিদি’র জন্য সিপিএমের নেতা-কর্মীদের তত্পরতা শুরু হয়। অবশেষে চুনিবালকে নিয়ে ঝাড়খণ্ডী ও সিপিএম কর্মীরা ছুটলেন স্টুডিয়োতে। নতুন ছবি তুলিয়ে নির্দিষ্ট মাপের ছবি দেওয়া হল চুনিবালার। ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন) দলটি রাজ্য নির্বাচন কমিশনের স্বীকৃত রাজনৈতিক দল হওয়ায় চুনিবালার নির্দিষ্ট প্রতীক নেই। ফলে চুনিবালা এ দিন ফল ভর্তি ঝুড়ি প্রতীকের জন্য আবেদন করলেন।
এ দিন চুনিবালা জানান, তাঁর মেয়ে সাঁওতালি সিনেমার নায়িকা বিরবাহা হাঁসদা বিনপুরে প্রার্থী হচ্ছেনই। বিনপুরে সিপিএমর দিবাকর হাঁসদা থাকা সত্ত্বেও কেন বিরবাহাকে প্রার্থী করা হচ্ছে? চুনিবালা বলেন, “২০১১ সালে বিরোধী ভোট ভাগ হওয়ায় আমি বিনপুরে হেরে গিয়েছিলাম। এবার ওই ভোট যাতে তৃণমূলের ঘরে না যায়, সেজন্যই বিরবাহাকে দাঁড় করাচ্ছি।”
এ দিন ঝাড়গ্রামে মনোনয়নপত্র জমা দিতে এসে সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য তথা গোপীবল্লভপুরের সিপিএম প্রার্থী পুলিনবিহারী বাস্কে বলেন, “চুনিবালাদেবী ঝাড়গ্রাম আসনে গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ জোটের প্রার্থী।” তাহলে বিরবাহা কেন বিনপুরে প্রার্থী হচ্ছেন? পুলিনবাবুর বক্তব্য, “কেউ ভোটে দাঁড়াতেই পারেন। চুনিবালীদেবী জোটধর্ম পালনের শর্ত আলোচনা করে আমাদের সঙ্গে এসেছেন।
এ দিন নয়াগ্রাম আসনে জোটপ্রার্থী হিসেবে মনোজকুমার টুডুর নাম ঘোষণা করেছে প্রদেশ কংগ্রেস। ঝাড়গ্রাম জেলা কংগ্রেসের সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য বলেন, “এ দিন যে সময় পদযাত্রাটি হয় তখনও ঝাড়গ্রাম ও নয়াগ্রাম আসনে জোটের কংগ্রেস প্রার্থীর নাম ঘোষিত হয়নি। তাই ইচ্ছে থাকলেও, সাংগঠনিক কারণে যৌথ পদযাত্রায় শরিক হতে পারিনি।’’