Sardiha Station and Uttam kumar

স্টেশনের উত্তম স্মৃতি সংরক্ষণের দাবি

ঝাড়গ্রাম স্টেশনে স্টিলের স্টপ রয়েছে। আরও কয়েকটি দূরপাল্লার এক্সপ্রেস ট্রেনও ঝাড়গ্রামে থামে। ঝাড়গ্রাম স্টেশনটিকে ‘অমৃত ভারত’ স্টেশন হিসেবে আধুনিকীকরণের উদ্যোগও করেছে দক্ষিণ-পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

সরডিহা শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:২১
Share:

‘বাঘবন্দি খেলা’ ছবির দৃশ্যে সরডিহা স্টেশনে উত্তমকুমার। —ফাইল চিত্র।

মহানায়ক উত্তমকুমারের স্মৃতি বিজড়িত সরডিহা রেল স্টেশনটিকেও ‘অমৃত ভারত’ স্টেশন হিসেবে আধুনিকীকরণের দাবি করছেন সরডিহা ও মানিকপাড়া সহ পার্শ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দারা। পাশাপাশি স্টেশন চত্বরে মহানায়কের স্মৃতি সংরক্ষণের দাবিও উঠেছে।

Advertisement

রবিবার ছিল উত্তমকুমারের জন্মদিন। এ দিন তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে মানিকপাড়ার বাসিন্দা আইএনটিটিইউসির জেলা সভাপতি মহাশিস মাহাতো জানান, ১৯৭৫ সালে পীযূষ বসুর পরিচালনায় উত্তমকুমার-সুপ্রিয়াদেবী অভিনীত ‘বাঘবন্দি খেলা’ছবির প্রথম দৃশ্যে রানিপুর নামে যে স্টেশন চত্বরটি দেখা যায়, সেটি আসলে ঝাড়গ্রামের সরডিহা রেল স্টেশন। ওই ছবিতে একাধিকবার স্টেশনটি দেখা গিয়েছে। সরডিহা স্টেশনটি রয়েছে ঝাড়গ্রামের মানিকপাড়া এলাকায়। সত্তরের দশকের মাঝামাঝি ওই ছবির শ্যুটিংয়ে মানিকপাড়ায় এসেছিলেন উত্তমকুমার, সুপ্রিয়াদেবী ও পার্থ মুখোপাধ্যায়। দিন চারেক শ্যুটিং হয়েছিল স্টেশন চত্বরে। তখন শেডবিহীন জরাজীর্ণ ফুটওভার ব্রিজ আর নিচু প্ল্যাটফর্ম দেখে অবাক হয়েছিলেন স্বয়ং মহানায়ক। এলাকার প্রবীণরা জানাচ্ছেন, শ্যুটিংয়ের সময়ে সিঁড়ি দিয়ে পার্থ নামার রিহার্সাল দেওয়ার সময় উত্তমকুমার সতর্ক দিয়েছিলেন, ‘‘পার্থ সাবধানে নামিস!’’ মহাশিসের আক্ষেপ, ‘‘এত বছর পরেও ঝাড়গ্রাম জেলার অন্যতম দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ রেল স্টেশনে পরিবর্তন হয়েছে সামান্যই।’’

বহু আন্দোলন, দরবারের পরে সর়ডিহা স্টেশনে ২০০৪ সালে হাওড়া-টাটা স্টিল এক্সপ্রেসের স্টপ দেওয়া শুরু হয়েছিল। তবে ২০২১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর স্টিল এক্সপ্রেসের স্টপ ওই স্টেশন থেকে প্রত্যাহার করে নেয় দক্ষিণ-পূর্ব রেল। টাটা-খড়্গপুর শাখার লোকাল ট্রেনের সংখ্যাও অপ্রতুল। সরডিহা স্টেশনে স্টিল এক্সপ্রসের স্টপের দাবিতে রেল প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে স্মারকলিপি দিয়েছেন এলাকাবাসী। সম্প্রতি এই দাবিতে রাষ্ট্রপতি দৌপদী মুর্মুর কাছেও লিখিতভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন মানিকপাড়া, সরডিহা, চুবকা ও দুধকুণ্ডি অঞ্চলের বাসিন্দারা। মানিকপাড়া এলাকায় তৈরি হয়েছে একাধিক হোম স্টে। কিন্তু একমাত্র এক্সপ্রেস ট্রেনের স্টপ উঠে যাওয়ায় পর্যটকদের পাশাপাশি এলাকাবাসীও চরম সমস্যায় পড়েছেন। রবিবার মহানায়কের জন্মদিনে তাঁর স্মৃতিবিজড়িত এই স্টেশনটির আধুনিকীকরণ ও এক্সপ্রেস ট্রেনের স্টপের দাবিতে সর্বস্তরের মানুষজনকে একজোট হওয়ার ডাক দেওয়া হয়।

Advertisement

ঝাড়গ্রাম স্টেশনে স্টিলের স্টপ রয়েছে। আরও কয়েকটি দূরপাল্লার এক্সপ্রেস ট্রেনও ঝাড়গ্রামে থামে। ঝাড়গ্রাম স্টেশনটিকে ‘অমৃত ভারত’ স্টেশন হিসেবে আধুনিকীকরণের উদ্যোগও করেছে দক্ষিণ-পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষ। ৬ সেপ্টেম্বর থেকে হাওড়া-বড়বিল জনশতাব্দী এক্সপ্রেস ঝাড়গ্রামে স্টপ দেওয়া শুরু করবে। এমন আবহে সরডিহা স্টেশনেরও পরিকাঠামো উন্নয়ন ও এক্সপ্রেস ট্রেনের স্টপের দাবি করছেন সরডিহা-মানিকপাড়া-দুধকুণ্ডি ও চুবকাবাসী।

সরডিহা স্টেশনের পাশাপাশি, সরডিহার রাস্তায় ও একটি চালকল চত্বরে উত্তমকুমার ও পার্থ মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে ‘বাঘবন্দি খেলা’র ছবির একাধিক দৃশ্যগ্রহণ হয়। এছাড়াও আরও কয়েকবার অন্যান্য ছবির শ্যুটিংয়ে ঝাড়গ্রামে এসেছিলেন মহানায়ক। ১৯৭৪ সালে ‘সন্ন্যাসী রাজা’ ছবিতে জমিদার সূর্যকিশোর নাগচৌধুরীর ভূমিকায় ঝাড়গ্রাম রাজপ্রাসাদের বিভিন্ন অংশে শ্যুটিং করেছিলেন মহানায়ক। এ ছাড়া ‘রাজবংশ’ ছবির শ্যুটিং করতেও ১৯৭৬ সালে ঝাড়গ্রামে এসেছিলেন উত্তমকুমার। তারও অনেক আগে ১৯৫৮ সালে বিকাশ রায় পরিচালিত মরুতীর্থ হিংলাজ ছবিতে অভিনয়ের সূত্রেও ঝাড়গ্রামে এসেছিলেন তিনি। ওই ছবির দৃশ্যগ্রহণ হয়েছিল বেলপাহাড়ির চুটিয়াভুদুরি এলাকায়।

জানা যায়, মরুতীর্থ হিংলাজ ও সন্ন্যাসী রাজা ছবিতে কাজ করার পর ঝাড়গ্রাম থেকে ট্রেনে ইউনিট সহ কলকাতায় ফিরেছিলেন উত্তমকুমার। ঝাড়গ্রাম স্টেশনেও মহানায়কের স্মৃতিফলক রাখার দাবি উঠেছে। এ বিষয়ে রেলমন্ত্রকের দৃষ্টি আকর্ষণ করার আশ্বাস দিয়েছেন ঝাড়গ্রামের সাংসদ কুনার হেমব্রম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন