মৃত: চতুর্থ বর্ষের ছাত্র নিধিনের দেহ মেলে শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র লোকেশ মিনা, ইলেক্ট্রিক্যালের সানা শ্রীরাজ, অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র নিধিন এন। এঁরা সকলেই খড়্গপুর আইআইটির ছাত্র ছিলেন। অকালেই ঝরে গিয়েছে কৃতী এই পড়ুয়াদের প্রাণ।
গত তিনমাসে পরপর তিন ছাত্রের আত্মহত্যা ভাবাচ্ছে কর্তৃপক্ষকেও। শুক্রবার সন্ধ্যায় কেরলের হরিপাদের বাসিন্দা ডুয়াল ডিগ্রি কোর্সের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র নিধিন এনের মৃত্যুর পরে জল্পনা আরও বেড়েছে। পড়াশুনোর চাপ, উপযুক্ত চাকরি না পাওয়া, পরিবার থেকে দূরে থাকা, ইন্টার্নশিপ নিয়ে চাপ— সব মিলিয়ে একের পর এক আত্মহত্যা বলে পড়ুয়াদের অভিমত। এ ক্ষেত্রে পড়ুয়াদের অবসাদ কাটাতে আইআইটির কাউন্সেলিং সেন্টারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় নিধিনের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় নেহরু হলে (হস্টেল) তাঁর ঘরেই। পুলিশ সূত্রে খবর, সুইসাইড নোটে নিজের কম্পিউটারের পাসওয়ার্ড-সহ নানা জিনিসের উল্লেখ করে গভীর ঘুমে যেতে চায় বলে লিখেছেন নিধিন। আইআইটি সূত্রে খবর, চতুর্থ বর্ষের ছাত্র নিধিনের কমুলেটিভ গ্রেড পয়েন্ট (সিজিপি) ছিল ৬.৭৯। আইআইটির বিচারে এই ফল মাঝারি মানের। নিধিনের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক দীপককুমার মাইতি বলছিলেন, “খুব ভাল ছাত্র না হলেও ওকে খুব খারাপ বলা যায় না। যেহেতু নিজেই ছাত্রদের পরিচালিত সংস্থায় কাজ করত, তাই ইন্টার্নশিপ নিয়েও চাপে থাকার কথা নয়। ফলে, আত্মহত্যার কারণ বুঝতে পারছি না।” ধন্দে পুলিশও। খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবংশী বলেন, “এই আত্মহত্যার পিছনে শিক্ষাগত বা ব্যক্তিগত কারণ থাকতে পারে। সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
নিধিনের ‘টিম কার্টে’র সদস্য একই হলের আবাসিক মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তৃতীয় বর্ষের সৌরভ বনশল বলছিলেন, “নিধিন নিজে খুব চুপচাপ থাকত। কিন্তু স্যোশাল মিডিয়ায় অ্যাক্টিভ ছিল।” অ্যারোস্পেস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র অজাত পাণ্ডয়ার কথায়, “আমিও টিম কার্টের সদস্য। টিম কার্টে ওঁকে গুরু মানতাম। এমন সপ্রতিভ একজন কেন আত্মহত্যা করবে বুঝছি না।”
আইআইটির পড়ুয়াদের অবসাদ কাটাতে ২০০৯ সালে নাগাদ কাউন্সেলিং সেন্টার খোলা হয়েছে। পড়ুয়াদের নিয়ে ‘স্টুডেন্টস্ ওয়েলফেয়ার গ্রুপ’-ও গড়া হয়েছে। তবে সে সব তেমন সক্রিয় নয়। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সুমিত দাসের ব্যাখ্যা, “কাউন্সেলিং সেন্টারে গেলে সম্মানহানি হবে, এটা ভেবে অনেকে যান না।” এ ব্যাপারে কথা বলতে চাইলে আইআইটি-র সুডেন্টস অ্যাফেয়ার্সের ডিন মণীশ ভট্টাচার্য রেজিস্ট্রারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। আর রেজিস্ট্রার প্রদীপ পাইন বলেন, “বাইরে আছি। এখন এ সব নিয়ে কিছুই বলতে পারব না।’’