এ যেন ডানা ভাঙা তিতলি! দক্ষিণ ওড়িশায় আছড়ে পড়া ঘুর্ণিঝড় তিতলির প্রভাব সে ভাবে টের পেল না পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূল এলাকা। দিঘা-তাজপুর-শঙ্করপুরের সমুদ্রে মস্ত সব ঢেউ, সমুদ্র লাগোয়া কয়েকটি গ্রামে জল ঢোকা এবং দিনভর ঝোড়ো হাওয়া ছাড়া বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বড় বিপর্যয় হয়নি।
রামনগর ১ ব্লকের জামড়া শ্যামপুর গ্রামে গত ১৬ জুলাই অমাবস্যার কোটালে জল ঢুকেছিল। তাজপুর ও শঙ্করপুরের মাঝামাঝি সমুদ্র ঘেঁষা এই গ্রামে বুধবার রাত এগারোটা নাগাদ ফের জল ঢোকে। সমুদ্র বাঁধ উপচে জল ঢোকার খবর পেয়ে রাতেই এলাকায় যান বিডিও আশিসকুমার রায়। সঙ্গে ছিলেন রামনগর ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী শম্পা মহাপাত্র, সহ-সভাপতি নিতাইচরণ সার। ব্লক প্রশাসনের তরফে তাজপুরের কাছে সাইক্লোন সেন্টারে গ্রামবাসীদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়। তবে ঝোড়ো হাওয়া বা জলোচ্ছ্বাস, কোনওটাই বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। ফলে, বিপর্যয়ও ঘটেনি।
বিডিও আশিসবাবু বলেন, “গ্রামের পাকা রাস্তা উপচে সমুদ্রের জল কিছুটা ঢুকেছে। বৃহস্পতিবার সকালেও আমরা এলাকায় গিয়েছিলাম। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক।’’ জামড়া শ্যামপুরের বাসিন্দা তপন মাইতির কথায়, “বাড়ির সামনে মেরিন ড্রাইভ। ওই রাস্তা বেশ পোক্ত বলেই এ যাত্রা বেঁচে গেলাম।’’ ব্লক প্রশাসন সূত্রে খবর, আশপাশের জলধা, তাজপুর ও টেংরামারি গ্রামে জল ঢুকেছে। সমুদ্র বরাবর রাস্তার কিছুটা ক্ষতিও হয়েছে।
তিতলির জেরে দিনভর মেঘলা আকাশ ও উত্তাল সমুদ্র ছিল দিঘাতেও। কাঁথি উপকূলে ভোগপুরের কাছে বুধবারই এক মৎস্যজীবীর মৃত্যু হয়েছে। অঘটন এড়াতে এ দিন তাই ওল্ড দিঘা থেকে নিউ দিঘা পর্যন্ত কড়া নজরদারি ছিল। সমুদ্রের কাছাকাছি পর্যটকদের ঘেঁষতে দেয়নি পুলিশ, নুলিয়া ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। উত্তাল সমুদ্রে কোনও ভাবেই নামা যাবে বলে মাইকে প্রচার চলে। সৈকতে ব্যারিকেডও করেছিল পুলিশ। দমদম থেকে বেড়াতে আসা রোহিত সরকার বলছিলেন, “বহুবার দিঘায় বেড়াতে এসেছি। কিন্তু এমন শুনশান সৈকত দেখিনি।’’
মেঘলা আকাশ ও ঝোড়ো হাওয়া থাকলেও দিঘায় সন্ধ্যা পর্যন্ত তেমন বৃষ্টি হয়নি। তাই কিছুটা হলেও স্বস্তিতে হোটেল মালিকরা। দিঘা-শঙ্করপুর হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিপ্রদাস চক্রবর্তী বলেন, “তিতলির ভয়ে আমরাও আশঙ্কায় আছি। পুজোর আগে শনি-রবি আছে। তার আগে দুর্যোগ হলে ব্যবসা মার খাবে।’’ তবে হোটেল ব্যবসায়ীদের আশা, তিতলি তেমন ভোগাবে না। পুজোর ছুটিতে চেনা ভিড়ে ফিরবে দিঘা-শঙ্করপুর-তাজপুর।