পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বন্যা পরিস্থিতি দেখতে আসা পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের সফর সূচিতে জুড়ল জঙ্গলমহলের নয়াগ্রাম ও গোপীবল্লভপুর-১ ব্লক। আজ, মঙ্গলবার সুব্রতবাবু সেখানকার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করবেন। এই দু’টি ব্লকের ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের হাতে ত্রাণ তুলে দেবেন তিনি।
প্রশাসন সূত্রে খবর, আজ, নয়াগ্রামের মলম গ্রাম পঞ্চায়েতের দু’টি গ্রামে ত্রাণ বিলি করবেন সুব্রতবাবু। গত মঙ্গলবার নয়াগ্রামের বালিপাল গ্রামের বাসিন্দা মনোজ মাইতি নদীর চরে গরু চরাতে গিয়ে সুবর্ণরেখার জলোচ্ছ্বাসে ভেসে যান। এখনও তাঁর দেহ মেলেনি। মনোজবাবুর বাড়িতেও যাবেন সুব্রতবাবু। ফেরার পথে গোপীবল্লভপুর-১ ব্লকেও ত্রাণ বিলি করবেন পঞ্চায়েত মন্ত্রী।
কিন্তু সুব্রতবাবুর নয়াগ্রাম সফরের আগেই বিজেপি আক্রমণ শানিয়েছে। ফের সামনে এসেছে ‘আমরা-ওরা’র তত্ত্ব। কেন না, নয়াগ্রাম ব্লকের একমাত্র মলম গ্রাম পঞ্চায়েতটি বিজেপি-র দখলে। বিজেপি-র অভিযোগ, রাজনীতির আমরা-ওরার কারণেই এলাকায় সরকারি ত্রাণ শিবির খোলা হয়নি। মলম অঞ্চলের শুকদেবপুর, যাদবপুর, নরসিংহপুরের মতো গ্রামগুলিতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও সব চেয়ে বেশি। আজ, মঙ্গলবার এই মলম এলাকাতেই ত্রাণ বিলি করবেন মন্ত্রী।
গত মঙ্গলবার রাতে সুবর্ণরেখার জলোচ্ছাসে গোপীবল্লভপুর-১ ও নয়াগ্রাম ব্লকের কয়েকটি গ্রামে জল ঢুকেছিল বটে। কিন্তু বুধবার জল সরে যাওয়ায় বাসিন্দারা গ্রামে ফিরে যান। জেলা প্রশাসনের একাংশের বক্তব্য, অন্যান্য বারের মতো এবার সুবর্ণরেখা তীরবর্তী ব্লকের গ্রামগুলিতে সে রকম বানভাসি অবস্থা হয় নি। এলাকায় তাই এখন কোনও ত্রাণ শিবিরও নেই। মঙ্গলবার রাতে গোপীবল্লভপুর-১ ব্লকে দু’টি ত্রাণ শিবির চালু করার পর বুধবার বিকেলে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। আর নয়াগ্রাম ব্লকে তো কোনও ত্রাণশিবিরই খোলা হয় নি। তবে এলাকার বিস্তীর্ণ চাষের জমি জলমগ্ন হয়ে সব্জি, রোয়া ধান ও আখের ক্ষতি হয়েছে।
বিজেপি-র নয়াগ্রাম ব্লক সভাপতি অর্ধেন্দু পাত্র-র অভিযোগ, “মঙ্গলবার রাতে আমরা নিজেদের উদ্যোগে জলবন্দি মানুষজনকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে গিয়েছিলাম। আমরা বহুবার আবেদন করা সত্ত্বেও কোনও সরকারি ত্রাণ শিবির খোলা হয়নি। তখন দাবি করা হল, এলাকায় বন্যা পরিস্থতি হয় নি। এখন তৃণমূলের মন্ত্রী ত্রাণ দিতে আসছেন।”
গত শুক্রবার বিজেপি নেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের নয়াগ্রামে আসার কথা ছিল। ব্যক্তিগত উদ্যোগে রূপা ত্রাণ বিলি করবেন বলে এলাকায় প্রচার করেছিলেন বিজেপি কর্মীরা। সূত্রের খবর, বিজেপি-র দলীয় গোষ্ঠী কোন্দলের জেরে রূপার সফর বাতিল হয়ে যায়। রবিবার বিজেপি-র রাজ্য নেতৃত্ব মলম এলাকায় গিয়ে দলীয় কর্মীদের ক্ষোভের মুখে পড়েন। রাজ্য নেতৃত্ব ত্রাণ আনেননি বলে এলাকায় সমালোচিতও হন। এর পরই মলম এলাকায় রাজ্যের মন্ত্রীর ত্রাণ বিলির কর্মসূচিটি বিশেষ ইঙ্গিতবাহী বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
বিজেপি-র অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছে শাসকদল। তৃণমূলের নয়াগ্রাম ব্লক সভাপতি উজ্জ্বল দত্ত বলেন, “রাজ্য সরকারের মন্ত্রী এসে দলমত নির্বিশেষে ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে ত্রাণসামগ্রী তুলে দেবেন। সেটাই বিজেপি-র অস্বস্তির কারণ। বিজেপি-র এক অভিনেত্রী এসে ওদের সমর্থকদের ত্রাণ দেবেন বলে শোনা গিয়েছিল। আসেন নি। এখন অস্বস্তি ঢাকতে আমাদের বিরুদ্ধে অবান্তর অভিযোগ করা হচ্ছে।”