ভোট মিটেছে। কাজে গতি নেই। পঞ্চায়েতে গরহাজির প্রধান। প্রকল্প-পরিষেবা নিয়ে বাড়ছে ক্ষোভ।

প্রধানকে কোথায় পাওয়া যাবে, প্রশ্ন ঘুরছে পঞ্চায়েতে

লোকসভা ভোটের পর হঠাৎই বদলে গিয়েছে পরিস্থিতি। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদানের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।

Advertisement

বরুণ দে

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৯ ০০:০১
Share:

ফাঁকা: মেদিনীপুর সদর ব্লকের কনকাবতী পঞ্চায়েতেও আসছেন না প্রধান ও উপ প্রধান। নিজস্ব চিত্র

বিজেপির লোকেরা যদি হামলা করে! ভয়ে গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসমুখো হচ্ছেন না প্রধানেরা। ব্যাহত হচ্ছে পঞ্চায়েতের কাজ। পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন গ্রামের মানুষ।

Advertisement

একাংশ প্রধানের মধ্যে যে এই ভয় চেপে বসেছে তা অজানা নয় শাসক দলের। দিন কয়েক আগে মেদিনীপুরে দলের এক সভায় শুভেন্দু অধিকারীকে বলতেও শোনা গিয়েছে, ‘‘ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের ব্যবস্থাকে স্বাভাবিক রাখতে হবে। কর্মীদের মধ্যে হতাশা কাটাতে হবে। হতাশা থাকবে কেন? অনেকে এমন ভাব দেখাচ্ছেন যে, যেন বিজেপি রাজ্যে সরকারে চলে এসেছে। তৃণমূল ওয়াশআউট হয়ে গিয়েছে। রাজ্যে সরকার আমাদের রয়েছে। আপনাদের এত ভয় পাওয়ার কী কারণ?’’ যা শুনে দলের এক প্রধান বলছিলেন, ‘‘ভয় পাওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। কী করে যে বোঝাই!’’

লোকসভা ভোটের পর হঠাৎই বদলে গিয়েছে পরিস্থিতি। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদানের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। তাতেই অচলাবস্থা পঞ্চায়েতগুলির একাংশে।

Advertisement

খড়্গপুর- ১ ব্লকের খেলাড় গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান, উপপ্রধান তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। অবশ্য দলবদলের পরেও ১৩টির মধ্যে ৯টি আসন রয়েছে তৃণমূলের দখলে। তা-ও অচলাবস্থা কাটছে না। খেলাড়ের কাশীজোড়ার নান্টু ডোগরার কথায়, ‘‘রাজনৈতিক চাপানউতোরের ফল ভোগ করতে হচ্ছে আমাদের মতো সাধারণ মানুষকে। প্রধান, উপপ্রধান বিজেপিতে চলে যাওয়ায় পঞ্চায়েতের কোনও পরিষেবা পাচ্ছে না মানুষ।’’ এই পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য অমর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘প্রধান, উপপ্রধান বোর্ডের বৈঠক ডাকছেন না। তাই মানুষ পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।’’ অভিযোগ উড়িয়ে পঞ্চায়েত প্রধান সবিতা ভক্তা বলেন, ‘‘বারবার বৈঠক ডাকলেও তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যরা বৈঠকে আসছেন না। ওদের জন্যই মানুষ পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।’’ নারায়ণগড়ের বাখরাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতেও প্রধান অফিসমুখো হচ্ছেন না। স্থানীয় বাসিন্দা মদনমোহন দাস বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে প্রধান গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে আসছেন না। কোনও পরিষেবা পাওয়া যাচ্ছে না।’’ কেন? পঞ্চায়েত প্রধান ঊষা ঘোড়ই বলেন, ‘‘অফিসে যাওয়ার মতো পরিবেশই নেই। বিজেপির লোকেরা প্রতিদিন অফিসে এসে কাজে বাধা দিচ্ছে।’’

গড়বেতা- ৩ ব্লকে তৃণমূল পরিচালিত ৪টি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান, উপপ্রধানেরা পঞ্চায়েতে অফিসে আসছেন না বলে অভিযোগ। কেশপুরের ৪- ৫ জন প্রধানও অফিসে যাচ্ছেন না। ঝাড়গ্রামের কয়েকটি পঞ্চায়েতের প্রধানরাও নিয়মিত পঞ্চায়েত অফিসে আসছেন না। একই পরিস্থিতি ঘাটাল মহকুমায়।

গ্রাম পঞ্চায়েত থেকেই রেসিডেন্সিয়াল সার্টিফিকেট, লাইফ সার্টিফিকেট, ইনকাম সার্টিফিকেট মেলে। সামনে বর্ষার মরসুম। অন্যবার এই সময়ে নদীবাঁধ, সাঁকো মেরামতি বা রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলে ‘বন্যাপ্রবণ’ বলে পরিচিত ঘাটাল, দাসপুরে। অচলাবস্থার জেরে এ সব কাজ ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ গ্রামবাসীদের। রাস্তাঘাট, ত্রাণশিবিরগুলো মেরামতি ও রক্ষণাবেক্ষণ চলে। এ বার না কি সেই কাজ এখনও সে ভাবে শুরু হয়নি। কাজ শুরু না- হওয়ায় চিন্তিত গ্রামবাসীরা। কেশপুরের শেখ সামিমের কথায়, ‘‘প্রস্তুতির কাজ তো কিছুই হচ্ছে না। বৃষ্টি হলে গ্রামগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।’’

বিজেপির জেলা সভাপতি শমিত দাশের খোঁচা, ‘‘তৃণমূলের অনেক প্রধান, উপপ্রধান দুর্নীতি ও অনিয়ম করেছেন। কাটমানির টাকা ফেরতের দাবি উঠবে, এই ভয়েই হয়তো তাঁরা পঞ্চায়েত অফিসে যাচ্ছেন না।’’ জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহের অবশ্য দাবি, ‘‘এলাকার উন্নয়ন যাতে ব্যাহত না- হয় সে বিষয়ে আমরা সচেতন, সতর্ক রয়েছি।’’

তাঁর কথায়, ‘‘প্রধানদের নিয়মিত পঞ্চায়েত অফিসে যেতে বলা হয়েছে। কোথাও সমস্যা হলে জানাতে বলা হয়েছে। আমি শুনেছি, প্রধানেরা অফিসে যাচ্ছেনও।’’ ইতিমধ্যে পঞ্চায়েত প্রধান, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিদের নিয়ে এক বৈঠকও করেছেন জেলাশাসক রশ্মি কমল। বৈঠকে মহকুমাশাসকেরাও ছিলেন। পড়ে থাকা কাজ দ্রুত সেরে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসক।

নির্দেশ তো এসেছে। কিন্তু প্রধান, উপপ্রধানরা সে নির্দেশ মেনে কাজ শুরু করবেন তো! (চলবে)

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন