মুখ্যমন্ত্রীর হাতে সূচনা, হাসপাতাল বলছে হয়নি

উদ্বোধনেও পার্কিং রহস্য

পুরপ্রধান তথা খড়্গপুরের বিধায়ক প্রদীপ সরকার বলেন, “হাসপাতালের পাশেই জলের পাম্পের জায়গায় আমাদের পুরসভায় যে জমি রয়েছে সেখানেই সুন্দর করে পার্কিং জোন করেছি। সেটার উদ্বোধন হয়েছে। ওখানে তো আমাদের পুরসভার গাড়িগুলি থাকছে।” 

Advertisement

দেবমাল্য বাগচী

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৪:০৫
Share:

হাসপাতালের পাশে এই জায়গাতেই ২৩ লক্ষ টাকা ব্যয়ে পার্কিং জোন হয়েছে বলে দাবি খড়্গপুর পুরসভার। নিজস্ব চিত্র

খোদ মুখ্যমন্ত্রীর হাতে উদ্বোধন হয়েছে মহকুমা হাসপাতালের পার্কিং জোন। তবে চারদিন পরেও ওই পার্কিং জোনের অস্তিত্ব খুঁজে পাচ্ছেন না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ! এই জট দেখা দিয়েছে খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে।

Advertisement

গত ৯ ডিসেম্বর খড়্গপুরের রাবণপোড়া ময়দানের প্রশাসনিক জনসভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একগুচ্ছ প্রকল্পের শিলান্যাস ও উদ্বোধন করেন। সেখানে উদ্বোধনের তালিকায় ছিল ওই পার্কিং জোন। পুরসভা ২৩ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ওই পার্কিং জোন গড়েছে বলে জানানো হয়েছিল। উদ্বোধনের ফলকেও মহকুমা হাসপাতালে পার্কিং জোনের উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, এমন কোনও পার্কিং জোনের উদ্বোধনের কথা তাঁদের জানা নেই। তাঁরা শুধু জানেন পূর্ত দফতরের তৈরি হাসপাতাল চত্বরের নবনির্মিত সাইকেল স্ট্যান্ডের কথা।

তবে ওই সাইকেল স্ট্যান্ড পরিচালনা কারা করবে তা নিয়ে এখনও জটিলতা কাটেনি। ফলে, ওই সাইক্যাল স্ট্যান্ড উদ্বোধন হয়নি বলেই মনে করছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাহলে হাসপাতালে কোন পার্কিং জোনের উদ্বোধন হল?

Advertisement

খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, “হাসপাতালে আমাদের আবেদনে পূর্ত দফতর একটি সাইকেল স্ট্যান্ড করেছে। তবে সেটা কারা পরিচালনা করবে তা এখনও ঠিক হয়নি। কিন্তু পার্কিং জোন বলতে কী বলা হচ্ছে সেটা আমার জানা নেই। তাই পার্কিং জোনের উদ্বোধন নিয়ে আমরাও ধোঁয়াশায়।” পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরার বক্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রী যদি উদ্বোধন করে থাকেন তবে নিশ্চয় হয়েছে। কিন্তু এই পার্কিং জোনের বিষয়ে আমার জানা নেই।”

হাসপাতালে সাইকেল স্ট্যান্ড তৈরির কথা মানছে পূর্ত দফতর। তাতে প্রায় ৭ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে। পূর্ত দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার অম্বিকা পাত্র বলেন, “পার্কিং জোন নয়, আমরা সাইকেল স্ট্যান্ড করেছি। তাতে প্রায় ৭লক্ষ টাকা ব্যায় হয়েছে। তবে সেটির উদ্বোধন হয়েছে কিনা জানিনা। ২৩ লক্ষ টাকা ব্যায়ে পার্কিং জোনের বিষয়েও জানা নেই।” জটিলতা আরও বাড়িয়ে হাসপাতাল রোগী কল্যান সমিতির সভাপতি তথা জেলা পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ নির্মল ঘোষ আবার বলছেন, “পার্কিং জোন মানে বোধ হয় সাইকেল স্ট্যান্ড পার্কিং জোন। ওটার উদ্বোধন হয়েছে। এ বার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য টেন্ডার দিতে হবে।”
অবশ্য পার্কিং জোন তাঁরা তৈরি করেছেন বলে দাবি করছেন পুর-কর্তৃপক্ষ। পুরপ্রধান তথা খড়্গপুরের বিধায়ক প্রদীপ সরকার বলেন, “হাসপাতালের পাশেই জলের পাম্পের জায়গায় আমাদের পুরসভায় যে জমি রয়েছে সেখানেই সুন্দর করে পার্কিং জোন করেছি। সেটার উদ্বোধন হয়েছে। ওখানে তো আমাদের পুরসভার গাড়িগুলি থাকছে।”

কিন্তু সেই জমিতে তো উদ্বোধনের কোনও ছাপ নেই। ধূ-ধূ জমির চারদিকে রয়েছে আগাছাও। গড়া হয়নি কোনও কংক্রিটের প্ল্যাটফর্ম। সেখানে কর্মরত পুরসভার এক কর্মী বলেন, “এখানে তো প্রায় ৮ মাস এই অবস্থায় গাড়িগুলি রাখা হচ্ছে। নতুন করে তো কোনও উদ্বোধন হয়নি।”

এই পরিস্থিতিতে বিঁধতে ছাড়ছে না বিরোধীরা। পুরসভাকে নিশানা করে বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি গৌতম ভট্টাচার্য বলছেন, “আসলে ওই ২৩লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করে এখন উদ্বোধনের গল্প দেওয়া হচ্ছে।” ২৩ লক্ষ টাকা খরচ নিয়ে যদিও পুরপ্রধান প্রদীপের ব্যাখ্যা, “যেমন উঁচুনিচু অবস্থায় ওই জমিটি ছিল সেখান থেকে পার্কিং জোনের উপযোগী করতে ২৩লক্ষ টাকার বেশি খরচ হওয়ার কথা। তাছাড়া আগে থেকে গাড়ি রাখলেও তো উদ্বোধন হয়নি। এ বার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হল।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন