প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা নয়। প্রতিভা খুঁজে বের করে সমাজে তাঁদের প্রতিষ্ঠিত করতে হবে— বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষদের প্রতি অব়জ্ঞা রুখতে প্রচারের অন্ত নেই। অথচ প্রচারের পরেও ‘যত্ন’ তো দূরের কথা, প্রতিবন্ধী মানুষেরা বাসে উঠে বসার জায়গাটুকুও পাচ্ছেন না। কারণ, অধিকাংশ বাস থেকে প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত আসনই উধাও বলে অভিযোগ!
সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী প্রতিটি বাসেই প্রতিবন্ধীদের জন্য আসন সংরক্ষিত রাখার কথা। পরিবহণ দফতরে ‘ফিটনেস’ পরীক্ষার সময় যথারীতি বাসে প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত আসন দেখানোও হয়। অভিযোগ, ‘ফিটনেস’ শংসাপত্র পাওয়ার পরেই অধিকাংশ বাস থেকে মুছে দেওয়া হয় সংরক্ষিত আসনের উপর ‘প্রতিবন্ধী’ শব্দটি। আজ, রবিবার ‘আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস’-এ আয়োজন হবে নানা অনুষ্ঠানের। তারপরেও স্রেফ নজরদারির অভাবে প্রতিবন্ধীরা যোগ্য ‘মর্যাদা’ও পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ।
ডেবরার বাসিন্দা প্রতিবন্ধী সুধীর মান্না নানা কাজে বাসে করে মেদিনীপুরে যাতায়াত করেন। সুধীরবাবুর অভিযোগ, বেসরকারি বাসের খালাসিরা তাঁদের বাসে উঠতে বাধা দেয়। অনেক অনুরোধ করার পরও বাসের কন্ডাক্টররা তাঁদের থেকে ভাড়া নেয়। প্রতিবন্ধী শংসাপত্র দেখালে উত্তর আসে, এ সব সরকারি গাড়িতে দেখাবেন। শুধু বেসরকারি নয়, সরকারি বাসেও হেনস্থার শিকার হওয়ার অভিযোগ তুলছেন প্রতিবন্ধী মানুষেরা। ডেবরার বাসিন্দা প্রতিবন্ধী রিতা জানা অভিযোগ করছেন, সরকারি বাসে উঠে ‘প্রতিবন্ধী’ লেখা আসনে বসে থাকা সাধারণ মানুষকে উঠে যাওয়ার অনুরোধ করলে অনেক কুকথা শুনতে হয়। এ বিষয়ে পরিবহণ দফতরে অভিযোগ জানিয়েও কাজ হয়নি।
নিয়ম অবশ্য অন্য কথা বলছে। অতিরিক্ত জেলা পরিবহণ আধিকারিক অমিত দত্ত জানাচ্ছেন, সরকারি নির্দেশ রয়েছে, সব বাসেই সামনের গেটের পাশে প্রতিবন্ধীদের জন্য আসন সংরক্ষতি রাখতে হবে। প্রতিবন্ধীরা শংসাপত্র দেখিয়ে টিকিট ছাড়াই বাসে যাতায়াত করতে পারবেন।
অথচ শনিবার মেদিনীপুর বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা গেল, অধিকাংশ বাসে প্রতিবন্ধীদের জন্য নির্দিষ্ট আসন নেই। বাসে প্রতিবন্ধীদের জন্য আসন না থাকার অভিযোগ শুনে এক কন্ডাক্টর দাবি করছেন, অনেক প্রতিবন্ধীই বাসে উঠে শংসাপত্র দেখান না। তাছাড়া প্রতিবন্ধী মানুষেরা যে শংসাপত্র দেখাচ্ছেন, তা আসল কি না সেটাই বা তাঁরা বুঝবেন কী করে। এক বাস মালিক দেবাশিস রায়ের আবার দাবি, প্রতিবন্ধী মানুষদের বাস ভাড়া নিয়ে তাঁদের কোনও ধারণা নেই। তবে বাসে প্রতিবন্ধীদের আসন না থাকার অভিযোগ মানতে নারাজ তিনি। তাঁর পাল্টা দাবি, অনেক যাত্রীই বাসে লেখা ‘প্রতিবন্ধী’ কথাটি তুলে দেন।
এই সম্পর্কে কোনও অভিযোগ এলে বাস মালিকদের সতর্ক করে দেওয়া হয় বলে দাবি করছেন বাস অনার্স অ্যাসোসিয়েশনের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক মাইতি। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কাছে এ রকম অভিযোগ আসে। সংগঠনের কোনও আলোচনাসভা থাকলেও এ বিষয়ে সকলকে জানানো হয়।’’ অতিরিক্ত জেলা পরিবহণ আধিকারিক অমিতবাবু বলছেন, ‘‘ফিটনেস শংসাপত্র নেওয়ার পর বাসে প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত আসনের উপর ‘প্রতিবন্ধী শব্দটি মুছে দেওয়ার অভিযোগ পেয়েছি। শীঘ্রই আমরা এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।’’