নর্দমায় ভাসে দেহাংশ, ভ্রুণ 

কী ভাবে মেডিক্যাল বর্জ্য সরাতে হবে তা নিয়ে রয়েছে স্পষ্ট নির্দেশিকা। জেলার হাসপাতালগুলিতে কি সেই নিয়ম মানা হয়? নার্সিংহোমগুলিরই বা কী অবস্থা? কোথায় লুকিয়ে বিপদ? খোঁজ নিল আনন্দবাজার। সেই সংস্থার লোকেরা আসার আগেই প্লাস্টিক ধরে টানতে থাকে কুকুর। ব্যবহৃত গজ, রক্ত-পুঁজ মাখা তুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে রাস্তায়। পরিত্যক্ত ভ্যাট থেকে অনেকে সংগ্রহ করে স্যালাইনের বোতল, ক্যাথিটার অথবা গ্লাভস

Advertisement

অভিজিৎ চক্রবর্তী 

ঘাটাল: শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৭:২০
Share:

হাসপাতালের আবর্জনা ফেলার ঘরের বাইরেও পড়ে বর্জ্য। নিজস্ব চিত্র

রাস্তায় যেখানে সেখানে পড়ে রয়েছে পুঁজ-রক্ত মাখা তুলো, সূচ, সিরিঞ্জ। ড্রেনের জলে ভাসছে দেহাংশ। মাঝে মধ্যে মিলছে অপরিণত ভ্রুণও। শহর জুড়ে মেডিক্যাল বর্জ্যের এমনই অবস্থা। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পষর্দের নিয়ম বলছে, বায়ো মেডিক্যাল বর্জ্য ভরতে হবে লাল, হলুদ ও সবুজ রঙের প্লাস্টিকে। হাসপাতাল হোক বা নার্সিংহোম নির্দিষ্ট জায়গায় রাখতে হবে সেইসব রঙিন প্লাস্টিক। এরপর দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা সেগুলি সংগ্রহ করে বিজ্ঞানসম্মত ভাবে তা নষ্ট করবে। মেডিক্যাল নয় এমন বর্জ্য ভরতে হবে কালো প্যাকেটে। সেগুলি সংগ্রহ করার দায়িত্ব অবশ্য পুরসভার।
নিয়ম তো আছে। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি কী?
ঘাটাল সুপার স্পেশ্যালিটি ঢোকার আগেই রয়েছে একটি পরিত্যক্ত ভ্যাট। সেখানে ডাঁই করা রয়েছে প্লাস্টিক ভর্তি মেডিক্যাল বর্জ্য। হলদিয়ার সুতাহাটার একটি সংস্থা ওই মেডিক্যাল বর্জ্য সংগ্রহের দায়িত্বে রয়েছে। কিন্তু অভিযোগ, সেই সংস্থার লোকেরা আসার আগেই প্লাস্টিক ধরে টানতে থাকে কুকুর। ব্যবহৃত গজ, রক্ত-পুঁজ মাখা তুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে রাস্তায়। পরিত্যক্ত ভ্যাট থেকে অনেকে সংগ্রহ করে স্যালাইনের বোতল, ক্যাথিটার অথবা গ্লাভস। পুরসভার সাফাইকর্মীরা কখনও পান অপরিণত ভ্রুণ আর সদ্যোজাতের দেহ। ঘাটাল সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের সুপার কুণাল মুখোপাধ্যায় অবশ্য বলছেন, “হলদিয়ার ওই সংস্থা নিয়ম করেই হাসপাতালে এসে মেডিক্যাল বর্জ্য সংগ্রহ করে। নির্দিষ্ট প্যাকেটে সমস্ত বর্জ্য পুরে রাখা হয়।”
এতো গেল সরকারি হাসপাতালের ছবি। শহরের নার্সিংহোমগুলির কী অবস্থা?
ঘাটাল শহরে ৩০টির বেশি নার্সিংহোম রয়েছে। অভিযোগ, নার্সিংহোমগুলির একাংশ ‘বায়ো মেডিক্যাল ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট রুলের’ পরোয়া করে না। নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলা হয় না মেডিক্যাল বর্জ্য। অনেকসময় অস্ত্রোপচারের রক্ত নিকাশি নালায় ফেলা হয় বলে অভিযোগ। অনেক নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ জানেনই না লাল, হলুদ ও সবুজ প্লাস্টিকের কাজ কী এবং কেন সেগুলি ব্যবহার হয়। লাইসেন্সের জন্য বায়ো মেডিক্যাল ওয়েস্ট সংগ্রহকারী সংস্থার সঙ্গে নার্সিংহোমগুলির চুক্তিও আছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই সে চুক্তি থাকে খাতায়-কলমে। ঘাটাল শহরের একাধিক নার্সিংহোম মালিক মানছেন, “প্রচুর টাকা খরচ হয়। লাইসেন্সের জন্য ওই সংস্থার ‘এনওসি’ জরুরি। তখন টাকার বিনিমেয় সার্টিফিকেট নিই।’’ অনেক নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ আবার স্বীকার করছেন, ‘‘লাল-হলুদ প্যাকেটে সবসময় মেডিক্যাল বর্জ্য ফেলা হয় এমনটা নয়। ডাস্টবিনেই তুলো-সূচ সহ নানা বর্জ্য জমা রাখা হয়। পুরসভার গাড়ি তুলে নিয়ে যায়।” যদিও নার্সিংহোম মালিক সংগঠনের জেলা সভাপতি সুব্রত রায়ের দাবি, “নার্সিংহোমগুলির সঙ্গে ওই সংস্থার চুক্তি আছে। তারা এসে সব সংগ্রহ করে। বাইরে বর্জ্য ফেলা হয় না।”
(চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন