সবেধন ক্রয়কেন্দ্রও ফাঁকা!

একঘণ্টায় এলেন চারজন চাষি। দু’জন প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে। বাকি দু’জন প্রায় দশ কিলোমিটার পথ উজিয়ে।

Advertisement

বিশ্বসিন্ধু দে

কেশিয়াড়ি শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:৩৫
Share:

কেশিয়াড়ির কিসান মান্ডিতে চলছে ধান কেনা। ছবি: বিশ্বসিন্ধু দে

একঘণ্টায় এলেন চারজন চাষি। দু’জন প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে। বাকি দু’জন প্রায় দশ কিলোমিটার পথ উজিয়ে।

Advertisement

শুক্রবার কেশিয়াড়ির কিসান মান্ডিতে গিয়ে দেখা গেল এই ছবি। কোনও সমবায় সমিতি নয়, ব্লকে সরকারি ভাবে একমাত্র একটি জায়গাতেই ধান কেনা হচ্ছে। তাহলে তো কিসান মান্ডিতে ভিড় উপচে পড়ার কথা! স্থানীয় সূত্রের খবর, সপ্তাহ খানেক আগেও নাকি ভিড় লেগে থাকত। সেই লাইন ছিল তালিকায় নাম তোলার ও ধান বিক্রির। অথচ এখন বদলে গিয়েছে ছবিটা।

জেলার বাকি ব্লকগুলিতে তো সমবায় সমিতিগুলি ধান কিনছে। এখানে তার ব্যতিক্রম কেন? সদুত্তর দিতে পারলেন না ব্লকের খাদ্য আধিকারিক চঞ্চল পালিত। শুধু বললেন, ‘‘এর জবাব উপরমহল দিতে পারবে। তবে একটি সমবায় লিখিত আবেদন জানিয়েছিল। আমরা ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছি।’’ একমাত্র একটি কিসান মান্ডি থেকে ধান কেনার ফলে যে ‘চাপ’ হচ্ছে তা স্বীকার করে নিয়েছেন চঞ্চল। সমস্যা সমাধানে আরও একটি চালকলকে সংযোজন করা হয়েছে। কেশিয়াড়ির ক্ষেত্রে সংখ্যা দুই থেকে বেড়ে হয়েছে তিন।

Advertisement

এখন কিসান মান্ডিতে চাষিদের আনাগোনা কম কেন? চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, কারণ একাধিক। প্রথমত দূরত্ব। বাসস্ট্যান্ড থেকে বেলদার দিকে ২ কিলোমিটার দূরে এই মান্ডি। সে ক্ষেত্রে ব্লকের একপ্রান্তে অবস্থিত বাঘাস্তি, ঘৃতগ্রাম, নছিপুর, লালুয়া, খাজরা পঞ্চায়েতের কোন চাষিকে ধান নিয়ে কিসান মান্ডিতে আসতে হলে পাড়ি দিতে হবে ন্যূনতম গড়ে ১০ কিলোমিটার পথ। দ্বিতীয়ত, চাষি পিছু ধান কেনার পরিমাণও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে কোনও চাষিকে ধান বিক্রি করতে হলে বারবার আসতে হচ্ছে মান্ডিতে। বাড়ছে পরিবহণ খরচ। খাজরার অর্জুনগেড়িয়ার খোকন কর, রষড়া মুড়াকাটার সুকুমার দাস বলেন, ‘‘সরকারি সহায়ক মূল্যে ধান বেচতে গাড়ি ভাড়াতেই অনেক চলে যাবে। সমস্যা হচ্ছে।’’ লালুয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের সুন্দরাড়ের চাষি চৈতন্য খিলা বলেন, ‘‘বার কয়েক ঘুরতে হয়েছে। তবে এখন ধান কেনার পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। দূর থেকে আসতে হচ্ছে। তাতেই তো অনেক ভাড়া চলে যাচ্ছে।’’

প্রশাসন সূত্রের খবর, গত বছরও এই ব্লকে সমবায় সমিতি মারফত ধান কেনা হয়নি। আসলে সমস্যা আরও গভীরে। এই ব্লকে নেই কোনও চালকল। ফলে বাইরের চালকলগুলিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ব্লক ক্রেতা আধিকারিক বাপি বিশ্বাস বলেন, ‘‘কেশিয়াড়িতে কোনও মিল নেই। তাই বেশি সমস্যা। বাইরে থেকে মিল মালিকদের দায়িত্ব দিতে হচ্ছে।’’

গত বছরের অক্টোবর থেকে কেশিয়াড়ি ব্লকে ধান কেনার কাজ শুরু হয়েছে। তবে ডিসেম্বর থেকে সহায়ক মূল্যে চাষির কাছ থেকে ধান কিনছে সরকার। ইতিমধ্যে ১৯ হাজার কুইন্টাল ধান কেনা হয়েছে। নথিবদ্ধ হয়েছেন এক হাজার একশোজন কৃষক।

দু’টি চালকল সংগ্রহ করত ধান। সংখ্যা বেড়েছে চালকলের। ধান কেনার পরিমাণ কমেছে। তাই কি ফিকে হয়েছে লাইন! ধান বিক্রি করতে ইচ্ছুক চাষিদের নথিভুক্তিকরণের সংখ্যায় উঠছে প্রশ্ন। বাকিরা ধান বিক্রি করছেন কোথায়?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন