কোন্দলের জেরে ছাড়তে হয়েছিল দল

রমাপ্রসাদ শিবির বদলে রাজনীতিতে থাকলেও পুরনো অনেক বিজেপি নেতাই ধীরে ধীরে অন্তরালে চলে গিয়েছেন।

Advertisement

রূপশঙ্কর ভট্টাচার্য

গড়বেতা শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৯ ০১:২৫
Share:

রমাপ্রসাদ তিওয়ারি। নিজস্ব চিত্র

তিনি বাম বিরোধী। একসময় গেরুয়া শিবিরে থেকে তৃণমূলের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছেন। এখন অবশ্য শিবির বদলে তৃণমূলে। রমাপ্রসাদ তিওয়ারি। তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সহ সভাপতি।

Advertisement

লোকসভা ভোটের পর রাজ্যে জুড়ে মুখোমুখি তৃণমূল-বিজেপি। শাসক দল ছেড়ে গেরুয়া শিবিরে নাম লেখানোর হিড়িক শুরু হয়েছে। রমাপ্রসাদ শিবির বদলে রাজনীতিতে থাকলেও পুরনো অনেক বিজেপি নেতাই ধীরে ধীরে অন্তরালে চলে গিয়েছেন। আজ থেকে বছর কুড়ি আগে প্রবল শক্তিশালী বামেদের বিরুদ্ধে লড়েছিলেন রমাপ্রসাদরা। এখন তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিজেপি নেতারা পুলিশ রাজের অভিযোগ তুলছেন। তবু রমাপ্রসাদ মনে করেন, তাঁদের লড়াই এখনকার চেয়ে কঠিন ছিল। তাঁর কথায়, ‘‘আসলে তখনকার লড়াইটা ছিল আরও কঠিন, আরও তীব্র। তখন বামেদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই ছিল স্বাধীনতার লড়াই, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াই, সিপিএমের দুর্নীতি, ব্যাভিচার, অত্যাচার, জুলমবাজির বিরুদ্ধে লড়াই।" এখন কি বিজেপির লড়াইটা তখনকার চেয়ে সহজ? বর্তমানে তৃণমূলের জেলা সহ সভাপতির জবাব, ‘‘সেটা এখন বিজেপিই ভাল বলতে পারবে। তবে এটুকু বলতে পারি তখন তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপির জোট সিপিএমের ভিতকে নড়িয়ে দিয়েছিল। ১৯৯৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভাল ফল করে এই জোট। গড়বেতাতেই ৪ টি গ্রাম পঞ্চায়েত জোটের দখলে আসে, সেবার লোকসভা ভোটে এই জোটের ফল খারাপ হয়নি।’’

সময়টা ১৯৯৮ – ’৯৯ সাল। সিপিএমকে উৎখাত করতে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির সঙ্গে জোট বেঁধেছিলেন। রমাপ্রসাদ ছিলেন সেইসময় মেদিনীপুর জেলার বিজেপির সভাপতি। ছোট আঙারিয়ার গণহত্যা বা সে সময় মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী দেওয়া নিয়ে তৃণমূল ও বিজেপির দড়ি টানাটানি -- সবই তাঁর নখদর্পণে। স্মৃতির ঝাঁপি উজাড় করে রমাপ্রসাদ জানালেন, সেবার লোকসভা ভোটে রাজ্যে প্রায় সব আসনেই তৃণমূল - বিজেপি আসন সমঝোতা হলেও মেদিনীপুর কেন্দ্রে দু'পক্ষই প্রার্থী দেওয়া নিয়ে অনড় থাকে। জট কাটাতে হস্তক্ষেপ করতে হয় বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব অটলবিহারী বাজপেয়ী ও লালকৃষ্ণ আডবাণীকে। তবুও জট না কাটায় দু'পক্ষই প্রার্থী দেয়, বিজেপির মনোরঞ্জন দত্ত সেবার দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন। মাত্র ২৬ হাজার ভোটের ব্যবধানে হেরেছিলেন সিপিআইয়ের ইন্দ্রজিৎ গুপ্তের কাছে। বামেদের বিরুদ্ধে তাঁর লড়াই ছিল আপসহীন। রমাপ্রসাদের কথায়, ‘‘সেইসময় তহেলকা নিয়ে এনডিএ ছেড়ে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় না বেরিয়ে এলে ২০০১ সালের বিধানসভা ভোটেই রাজ্যে পরিবর্তন ঘটে যেত।’’

Advertisement

এনডিএ ছেড়েছিলেন মমতা। বিজেপি ছেড়েছিলেন রমাপ্রসাদ। কারণটা দলের অন্দরের রাজনীতির সমীকরণ। রমাপ্রসাদ ছিলেন তপন শিকদারের অনুগামী। পরে তথাগত রায়ের সঙ্গে তপন শিকদারের সংঘাত শুরু হলে সমস্যায় পড়েন রমাপ্রসাদ। সংঘাতের জেরেই ২০০২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিজেপি থেকে তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়। তৃণমূলের জেলা সহ সভাপতির কথায়, ‘‘তিন বছর আমি বসেই ছিলাম। ভেবেছিলাম রাজনীতি আর করব না, কিন্তু ২০০৫ সালে তৃণমূলনেত্রী দূত পাঠিয়ে নিজে ফোন করে আমাকে তৃণমূল করতে বলেন, আমি ২০০৫ এর ২১ জুলাইয়ের সমাবেশে তৃণমূলে

যোগ দিই।’’

সামনে আর একটা ২১ জুলাই। এখন তো রাজ্যে বাড়ছে পদ্মফুল? আপনাদের আমলের বিজেপি আর এখনকার বিজেপির মধ্যে কোনও ফারাক দেখছেন? প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ বলেন, ‘‘শুনুন আরএসএসের হাতে যতক্ষণ রাশটা থাকবে ততক্ষণ বিজেপি আদর্শচ্যুত হবে না। রাশ আলগা হলেই আদর্শচ্যুত হবে।’’ তিনি বলেন, ‘‘আরএসএসের মানুষকে এই দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করার বিষয়টিকে আমি সম্মান করি। আরএসএসের ধর্মীয় বিষয়টা বাদ দিলে তাদের ভাবনাচিন্তা, মতাদর্শকে সম্মান জানাতেই হয়।’’ (চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন