medicine

Purba Medinipur: বাংলাদেশ সরকারের ওষুধ দেওয়া হচ্ছে কাঁথির হাসপাতালে! কী ভাবে, কেউ জানে না

পাউচের গায়ে বাংলা হরফে লেখা, ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সম্পদ, ক্রয় বিক্রয় আইনত দণ্ডনীয়’। কবে ওষুধের মেয়াদ শেষ, তার উল্লেখ নেই।

Advertisement

সুমন মণ্ডল 

কাঁথি শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০২২ ১৯:০০
Share:

জেলা প্রশাসনের দাবি, এই ওষুধ এসেছে কলকাতা থেকে। নিজস্ব চিত্র।

এমনটা সাম্প্রতিক অতীতে কখনও শোনা যায়নি। বাংলাদেশ সরকারের ওষুধ দেওয়া হচ্ছে এ রাজ্যের এক মহকুমা হাসপাতালে! কী ভাবে প্রতিবেশী দেশের সরকারি ওষুধ এ রাজ্যের হাসপাতালে পৌঁছল, কী ভাবে তা বিতরণ করা হল, তা জানেই না জেলা প্রশাসন। অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন।

Advertisement

ঘটনাস্থল পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি মহকুমা হাসপাতালের বহির্বিভাগ। মঙ্গলবার সেখানে প্রচুর রোগী চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন। সরকারি নিয়ম মতো তাঁদের অনেকেই প্রেসক্রিপশনে লেখা ওষুধ পেয়েছিলেন হাসপাতালের তরফে। কেউ কেউ পেয়েছিলেন অ্যান্টিবায়োটিক ডক্সিসাইক্লিন। কিন্তু ওই ক্যাপসুলের পাউচের গায়ে বাংলা হরফে লেখা ছিল, ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সম্পদ, ক্রয় বিক্রয় আইনত দণ্ডনীয়’। ওই ওষুধ কবে তৈরি বা কবে তার মেয়াদ শেষ— কোনও কিছুরই তারিখ মোড়কে উল্লেখ ছিল না। বিষয়টি নজরে আসতেই শোরগোল পড়ে যায় কাঁথিতে। কী ভাবে এমনটা হয়েছে তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। তবে প্রশাসনের দাবি, ওই ওষুধ পাঠানো হয়েছে কলকাতার সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোর থেকে।

গাফিলতি ঠিক কোথায় হয়েছে, তা এখনও জানা যায়নি। মুখে কুলুপ এঁটেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোগীর কথায়, ‘‘আজ হাসপাতালে চিকিৎসা করালাম। এর পর ডাক্তারবাবুর প্রেসক্রিপশন নিয়ে স্টোরে যেতেই একে একে অনেকগুলি ওষুধ দেওয়া হল আমাকে। তার মধ্যে একটি ওষুধের পাতায় বাংলাদেশ লেখা। কোনও তারিখও লেখা নেই। কবে তৈরি হয়েছে, কত দিন পর্যন্ত ব্যবহার করব, কিছুই বুঝতে পারছি না। এই ওষুধ আদৌ খাওয়া যাবে কি না সেটাই ভেবে পাচ্ছি না। বাইরে থেকে ওষুধ কিনে খাব কিনা জিজ্ঞেস করলাম হাসপাতালে। ওৱা কিছু বলেনি।’’

Advertisement

ঘটনার কথা জানাতে পেরে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পূর্ণেন্দুকুমার মাজির সঙ্গে যোগাযোগ করে আনন্দবাজার অনলাইন। তিনি বলেন, “বিষয়টি নজরে আসার পর প্রাথমিক অনুসন্ধান করে জানা গিয়েছে, কলকাতার সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোর থেকেই ওই ওষুধগুলি এসেছিল। তবে আসলে কী ঘটেছে, তা খতিয়ে দেখার জন্য জেলার ডেপুটি মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্তের রিপোর্ট হাতে আসার পরেই পরিষ্কার হবে, ওষুধগুলি নিয়ে কোনও সমস্যা রয়েছে কি না। তার আগে বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করা ঠিক হবে না।”

বাংলাদেশ সরকারের ওষুধ কী ভাবে এ রাজ্যে এল, কী ভাবেই বা তা সরকারি হাসপাতালে পৌঁছল, আর কেনই বা সেগুলো রোগীদের দেওয়া হল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই ময়দানে নেমে পড়েছে বিজেপি। এমন ঘটনার আগে কখনও শোনেননি বলে দাবি করেন দক্ষিণ কাঁথির বিজেপি বিধায়ক অরূপ দাস। তাঁর বক্তব্য, “ভারতে উৎপাদিত ওষুধের পরিবর্তে আচমকা বাংলাদেশের তৈরি ওষুধ কেন আনা হয়েছে তা আমাদের জানা প্রয়োজন। তা ছাড়া এই ওষুধের উৎপাদন বা মেয়াদের তারিখ কেন উল্লেখ নেই, তা নিয়েও প্রশ্ন জাগছে। ইতিমধ্যে কাঁথি হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে ওগুলি সরকারি ভাবে সাপ্লাই হয়েছে। এমন গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ বাংলাদেশ থেকে কোন পথে ভারতে এল, তা নিয়ে তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।” তিনি আরও জানান, “বিষয়টি কেন্দ্রের নজরে আনার জন্যও আমরা উদ্যোগ নিচ্ছি। রাজ্য সরকারের তরফে বাংলাদেশ থেকে আসা ওষুধের বিষয়ে স্পষ্ট জবাব না পেলে ঘটনাটির জন্য কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ চাওয়া হবে।”

এ বিষয়ে কাঁথি পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান তথা কাঁথি শহরের তৃণমূলের যুব নেতা সুপ্রকাশ গিরি বলেন, ‘‘ঘটনাটি জানার পরেই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কী ভাবে এই ওষুধ এখানে এল তা-ও জানতে চাওয়া হয়েছে। প্রশাসনের রিপোর্ট হাতে এলেই সব প্রশ্নের উত্তর মিলবে।’’

তবে বিষয়টি নিয়ে জানতে একাধিক বার ফোন করা হয় জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক এবং কাঁথি মহকুমা হাসপাতালের সুপারকে। দু’জনের কেউই এক বারের জন্যও ফোন ধরেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন