আশ্বাসন কমিটির বৈঠকে জেলাশাসক অন্তরা আচার্যের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় বিধায়ক মানস ভুঁইয়ার। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।
বিধানসভায় নিরঙ্কুশ দল। অথচ পূর্ব মেদিনীপুরে সেই বিধানসভারই আশ্বাসন কমিটির উন্নয়ন সংক্রান্ত পর্যালোচনা বৈঠকে গরহাজির তৃণমূল পরিচালিত জেলা পরিষদের সভাধিপতি, সহ-সভাধিপতি-সহ কর্মাধ্যক্ষরা। বৈঠকে যাননি বিধায়করাও। শুক্রবার তমলুকে জেলা প্রশাসনিক অফিসের সভাকক্ষে বৈঠকে বসে আশ্বাসন কমিটি। বৈঠকে ছয় সদস্যের ওই কমিটির মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কমিটির চেয়ারম্যান তথা সবংয়ের কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়া, বর্ধমানের দুর্গাপুরের তৃণমূল বিধায়ক অপূর্ব মুখোপাধ্যায়, হুগলির পুড়শুরার বিধায়ক পারভেজ রহমান। আশ্বাসন কমিটির সদস্য হওয়া সত্ত্বেও বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন জেলারই দুই বিধায়ক অখিল গিরি ও অমিয় ভট্টাচার্য। ছিলেন না বিধায়ক হিতেন বর্মনও। জেলার বিধায়করা বৈঠকে অনুপস্থিত থাকায় রাজনৈতিক মহলে জল্পনা তুঙ্গে। যদিও তৃণমূলের জেলা সভাপতি শিশির অধিকারীর বক্তব্য, ‘‘দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই এ দিন ওই বৈঠকে আমাদের কেউ যায়নি। এটা দলের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে কিছু বলার নেই।’’
যদিও তৃণমূলের এক সূত্রে খবর, বিরোধী দলের বিধায়ক বিধানসভার এই কমিটির চেয়ারম্যান, তাই দলের অনেকের এই বৈঠকে যেতে আপত্তি ছিল। বৃহস্পতিবার আশ্বাসন কমিটির সদস্যরা দিঘায় যান। সেখানেও উন্নয়নমূলক বিভিন্ন প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে মৎস্য দফতরের অধিকৃত সংস্থা ‘বেনফিশ’ এর কাজকর্ম নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন কমিটির সদস্যরা। মানসবাবু বলেন, “দিঘা-সহ উপকূলবর্তী এলাকায় সে ভাবে বেনফিশের কোনও কাজকর্মই কমিটির সদস্যদের চোখে পড়েনি। বিষয়টি নিয়ে মৎস্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব। এ ছাড়াও বিধানসভার অধ্যক্ষের কাছেও কমিটি রিপোর্ট দেবে।” এই বিষয়টি নিয়েও দলের অভ্যন্তরে অসন্তোষ ছড়ায়।
এ দিন বৈঠকে পূর্ত, সেচ, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, জনস্বাস্থ্য সহ মোট আটটি দফতরের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের পর্যালোচনা করা হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জেলাশাসক অন্তরা আচার্য, অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) অজয় পাল-সহ বিভিন্ন দফতরের সরকারি আধিকারিকরা। বৈঠকে শাসকদলের জনপ্রতিনিধিদের অনুপস্থিতি প্রসঙ্গে মানসবাবু বলেন, ‘‘বৈঠকে কেন জেলা পরিষদের প্রতিনিধি, বিধায়করা যোগ দেননি আমি জানি না। তবে জেলা প্রশাসনের আধিকারিক-সহ বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠকে জেলার উন্নয়ন কাজের বিষয়ে পর্যালোচনা হয়েছে।’’
বৈঠকে জেলা পরিষদের প্রতিনিধিদের ও বিধায়কদের অনুপস্থিত থাকার কারণ প্রসঙ্গে ভগবানপুরের বিধায়ক তথা তৃণমূলের জেলা কোর কমিটির আহ্বায়ক অর্ধেন্দু মাইতি বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতের কোনও কাজে ব্যস্ত থাকার কারণেই জেলা পরিষদের প্রতিনিধিরা হয়তো বৈঠকে যেতে পারেননি। আর বিধায়করা অনেকেই দলীয় বা অন্য বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকার জন্য বৈঠকে যাননি। এর পিছনে রাজনৈতিক কোন কারণ নেই।’’ তমলুকের বিধায়ক তথা রাজ্যের জলসম্পদ মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রেরও বক্তব্য, ‘‘আমার নিজের দফতরের একাধিক বৈঠক ছিল। তাই বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারিনি।’’
বৈঠকে কেন যাননি?
জেলা পরিষদের সভাধিপতি মধুরিমা মণ্ডল বলেন, ‘‘আমার জ্বর হয়েছে। তাই এ দিনের বৈঠকে যেতে পারিনি।’’ জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি শেখ সুফিয়ানের বক্তব্য, ‘‘এ দিনের বৈঠকের কোনও গুরুত্ব ছিল না। তাই বৈঠকে যাইনি।’’ ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত থাকায় বৈঠকে যাননি বলে দাবি করেন জেলা পরিষদের পূর্ত দফতরের কর্মাধ্যক্ষ সোমনাথ বেরাও।
বৈঠকে বিভিন্ন দফতরের উন্নয়নমূলক কাজের অগ্রগতি খতিয়ে দেখা হয়। মানসবাবু জানান, জেলায় বিদ্যুৎ দফতর, সেচ দফতরের কাজ ভাল হয়েছে। তবে স্বাস্থ্য নিয়ে সমস্যা রয়েছে। দিঘায় ৫০ শয্যার হাসপাতাল রয়েছে। তবে অ্যানাস্থেটিস্ট না থাকার কারণে ওই হাসপাতালে কোনও রোগীর অস্ত্রোপচার হয় না। দিঘা একটি বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র। দিঘা হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা না থাকায় কোনও পর্যটক দুর্ঘটনায় পড়লে বিপদ বাড়বে। মানসবাবু আরও জানান, দিঘা থেকে নন্দকুমার পর্যন্ত রাস্তার হাল খারাপ। ওই রাস্তার সম্প্রসারণেরও প্রয়োজন রয়েছে।
এ দিন রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মানসবাবু বলেন, ‘‘শাসকদলের লোকেরা বিভিন্ন অপরাধের ঘটনায় জড়িয়ে পড়ছে। পুলিশ যদি তাঁর অশোকস্তম্ভ ও খাকি পোশাকের কথা ভুলে যায় তাহলে বিপদ শাসক দলেরই।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী কাজের চেষ্টা করছেন। তবে সব কাজ হয়েছে এ কথা বলা যাবে না। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীকে বলব, সব সময় পুলিশে বিশ্বাস করবেন না। উনি নিজে বিষয়গুলি পর্যালোচনা করলে অনেক সমস্যার দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে।’’ মুখ্যমন্ত্রীর আসন্ন লন্ডন সফর প্রসঙ্গে মানসবাবু বলেন, ‘‘উনি আমন্ত্রণ পেয়ে লন্ডনে যাচ্ছেন ভাল কথা। তবে লন্ডন থেকে ফিরে এসে যদি প্রকৃত কাজটা করতে পারেন তবেই ভাল হবে। আগে শিল্পে বিনিয়োগ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী অনেক কথা বলেছিলেন, তবে তার কিছুই এখনও হয়নি।’’