সংস্কৃতে কথা বলা শেখাতে বিশেষ ক্লাস

সংস্কৃত পড়েও দেবনাগরী হরফে দু’লাইন লিখতে কালঘাম ছোটে, এমন দৃষ্টান্ত রয়েছে ভুরিভুরি। সংস্কৃতে স্নাতক পড়ুয়াদের হালও কমবেশি একই। ফলে সংস্কৃতে কৃতী ছাত্রের চাকরির পরীক্ষায় সাফল্যের হার বেশ কম।

Advertisement

সুমন ঘোষ

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:০০
Share:

সংস্কৃত পড়েও দেবনাগরী হরফে দু’লাইন লিখতে কালঘাম ছোটে, এমন দৃষ্টান্ত রয়েছে ভুরিভুরি। সংস্কৃতে স্নাতক পড়ুয়াদের হালও কমবেশি একই। ফলে সংস্কৃতে কৃতী ছাত্রের চাকরির পরীক্ষায় সাফল্যের হার বেশ কম। পড়ুয়াদের সংস্কৃত বলতে ও লিখতে শেখানোর জন্য এ বার বিশেষ ক্লাসের ব্যবস্থা করেছে মেদিনীপুর কলেজে।

Advertisement

অগস্ট মাস থেকেই শুরু হয়েছে এই বিশেষ ক্লাস। ক্লাসে কলেজের ছাত্রছাত্রীদের সংস্কৃতে কথা বলার প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। শুধু সংস্কৃত বিভাগের পড়ুয়ারা নন, সংস্কৃত জানতে ইচ্ছুক কলেজের অন্য বিভাগের পড়ুয়া ও শিক্ষকেরাও এই ক্লাসে যোগ দিতে পারবেন বলে কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে। সংস্কৃত বিভাগের পড়ুয়াদেরও দেবনাগরী হরফে লেখার উপর জোর দেওয়া হচ্ছে।

সংস্কৃতের বিশেষ ক্লাসের জন্য ‘রাষ্ট্রীয় সংস্কৃত সংস্থা’ মেদিনীপুর কলেজে একজন শিক্ষকও নিয়োগ করেছে। ওই শিক্ষকের বেতনও দেবে সংশ্লিষ্ট সংস্থাই। কলেজের অধ্যক্ষ গোপালচন্দ্র বেরা বলেন, “শুধু সংস্কৃত বিভাগের ছাত্রছাত্রীরাই নন, সংস্কৃতে কথা বলা শিখতে আগ্রহী অন্য বিভাগের ছাত্রছাত্রী থেকে শিক্ষক - সকলেই ওই ক্লাসে যোগ দিতে পারবেন।”

Advertisement

১৯৬৩ সালে মেদিনীপুর কলেজে সংস্কৃত বিষয়ে পড়াশোনা শুরু হয়। ২০১৩ সালে কলেজে সংস্কৃতে স্নাতকোত্তর স্তরের পঠন-পাঠনও চালু হয়। পঞ্চাশ বছরের বেশি পুরনো এই বিভাগ থেকে বহু কৃতী পড়ুয়া পাশ করে বেরিয়েছেন। যদিও চাকরির ক্ষেত্রে তাঁদের সাফল্যের হার আশানুরূপ নয়। এই বিভাগের ক’জন পড়ুয়া বর্তমানে স্কুল বা কলেজে চাকরি করছেন, তা মনে করতে পারছেন না বিভাগীয় শিক্ষক গিরিধারী পান্ডাও। আক্ষেপের সঙ্গে তিনি জানান, “এটা ঠিক যে, এই বিভাগে পড়াশোনা করে বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রীই সে ভাবে সাফল্য পাচ্ছেন না। হাতে গোনা কয়েকজন চাকরি পেয়েছেন।”

গোড়াতেই গলদ থেকে যাওয়ায় এই সমস্যা বলে মানছেন শিক্ষকেরা। স্নাতক স্তরে তিন বছর সংস্কৃত নিয়ে পড়াশোনা করে ভাল নম্বরও পাচ্ছেন অনেক পড়ুয়া। তারপরেও দেবনাগরী হরফেই লিখতে শেখেননি অনেকে। এক শিক্ষকের কথায়, ‘‘স্নাতক স্তরের পরীক্ষায় তো বাংলায় লেখা যায়। কিন্তু স্কুল বা কলেজ সার্ভিস কমিশনের সংস্কৃত শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় দেবনাগরী হরফেই লিখতে হয়। প্রশ্নও থাকে ওই হরফেই। ফলে অনেক কৃতী পড়ুয়াও সমস্যায় পড়ে। কমে সাফল্যের হারও।’’

মেদিনীপুর কলেজের পদার্থবিদ্যার শিক্ষিক তনুশ্রী পালের কথায়, “সংস্কৃত না জানলে বিজ্ঞানের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গবেষণা অসম্ভব। বিশেষত, ‘কোয়ান্টাম মেকানিক্স’ নিয়ে গবেষণা করতে হলে সংস্কৃত জানতেই হবে। নয়তো এক পাও এগনো যাবে না।” তাই শুধু পড়ুয়া নয়, সংস্কৃত জানাটা অন্যান্য বিষয়ের ছাত্র-শিক্ষক-গবেষকদের কাছেও জরুরি। সেই লক্ষ্যেই বিশেষ ক্লাসের ব্যবস্থা করেছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ।

বিশেষ ক্লাসে সাড়াও মিলছে ভালই। ইতিমধ্যেই ক্লাসের ছাত্র সংখ্যা ১১০জনে পৌঁছেছে। আরও অনেকে এই ক্লাসে যোগ দেওয়ার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলে কলেজ সূত্রে দাবি। গিরিধারীবাবুর কথায়, “সকলকেই যাতে সুযোগ দেওয়া যায়, সেই চেষ্টা করছি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘সংস্কৃতে লিখতে পারা, বলতে পারা- অভ্যাসে পরিণত হলে আরও অনেকেই এ বিষয়ে উৎসাহ পাবে। সংস্কৃত বিষয় নিয়ে পড়ার জন্য আরও অনেকে অনুপ্রাণিত হবেন। বাড়বে চাকরির ক্ষেত্রেও সাফল্যের হারও।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন