অনলাইনে ফর্মপূরণের সহায়তা কেন্দ্রে ভিড়। মেদিনীপুর কলেজের সামনে। —নিজস্ব চিত্র।
জেলার সাধারণ ডিগ্রি কলেজগুলোয় প্রথম বর্ষের আসন সংখ্যা মেরেকেটে প্রায় ২২ হাজার। অথচ উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছেন সাড়ে ৩৭ হাজার ছাত্রছাত্রী। ফলে, প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে পাশ করেও কলেজে ভর্তির সুযোগ মিলবে তো?
ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক থেকে শিক্ষকদেরও একাংশের আশঙ্কা, পশ্চিম মেদিনীপুরে কলেজে ভর্তির সমস্যা এ বার প্রকট হবে। ফর্মপূরণের ভিড়ও সেই ইঙ্গিত দিচ্ছে। সমস্যা মেটাতে সব কলেজে অন্তত ১০ শতাংশ আসন বাড়ানোর দাবি তুলেছে বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলো। ভর্তির ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা দেখা দিলে তা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনার আশ্বাস দিয়েছেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রঞ্জন চক্রবর্তী। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিকের অবশ্য মত, এমনিতেই বিভিন্ন কলেজে পরিকাঠামোগত কিছু সমস্যা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আসন সংখ্যা বাড়ানো হলে কলেজগুলোই সমস্যায় পড়বে।
এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে পাশের হারে রাজ্যের মধ্যে দ্বিতীয় হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর। গত বছর যেখানে পাশের হার ছিল ৮২ শতাংশ, এ বার তা বেড়ে হয়েছে ৮৮.৮৯ শতাংশ। এই সাফল্যেই ঘনীভূত হয়েছে আশঙ্কার মেঘ। জেলায় মোট ২৫টি সাধারণ ডিগ্রি কলেজ রয়েছে। কোনও কলেজে আসন সংখ্যা পনেরোশো, আবার কোথাও পাঁচশো। শিক্ষকদের একাংশ নিশ্চিত, সকলে পছন্দের কলেজে ভর্তি হতে পারবে না। অনেকে পছন্দের বিষয় নিয়েও পড়তে পারবে না। একাংশ শিক্ষকের আবার বক্তব্য, পাশের হারের সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের প্রাপ্ত নম্বরও এ বার বেড়েছে। ফলে, সমস্যা হবেই। তবে স্বস্তি একটাই, উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণদের সকলে সাধারণ ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হয় না। একাংশ জেলার বাইরে চলে যায়। অনেকে বৃত্তিমূলক শাখায় পড়াশোনা করে। তা-ও কলেজে কলেজে ভর্তি সমস্যার আশঙ্কা করছেন সকলেই।
মেদিনীপুর কমার্স কলেজের টিচার ইন-চার্জ বিবেকানন্দ দাস মহাপাত্র, কেশপুর কলেজের টিচার ইন-চার্জ সুশান্তকুমার দোলুই মানছেন, পাশের হার বাড়ায় এ বার প্রতিযোগিতা বেড়ে গিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সরব বিভিন্ন ছাত্র এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক সৌগত পণ্ডারও বক্তব্য, ‘‘আসন না বাড়ালে কলেজে ভর্তি সমস্যা প্রকট হবে। আমরা সব কলেজে ন্যূনতম ১০ শতাংশ আসন বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছি। উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ সকলে যাতে কলেজে পড়ার সুযোগ পায়, সেই ব্যবস্থা করার দায়িত্ব তো সরকারেরই।’’ ডিএসওর জেলা সভাপতি দীপক পাত্রও মানছেন, ‘‘প্রচুর ছাত্রছাত্রী পাশ করেছে। সকলের ভর্তির ব্যবস্থা করতে আমরা ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছি।’’ কলেজে আসন বৃদ্ধির দাবি তুলেছেন ছাত্র পরিষদের রাজ্য সহ-সভাপতি মহম্মদ সইফুলও। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি রমাপ্রসাদ গিরির অবশ্য বক্তব্য, কেউ পড়তে চাইলে পড়তে পারবে না, তা হবে না। এ নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই। তাঁর কথায়, ‘‘হয়তো পছন্দমতো কলেজে ভর্তি হতে পারবে না। তবে ভর্তির সুযোগ পাবে। পরে কোনও সমস্যা হলে উচ্চশিক্ষা দফতর নিশ্চয়ই তা সমাধানে উদ্যোগী হবে।’’
এ বার জেলায় নতুন পাঁচটি সরকারি কলেজও চালু হবে। ফলে, সমস্যার কিছুটা সুরাহা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। সাধারণ ডিগ্রি কলেজগুলোয় ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ফর্মপূরণ করে জমা দেওয়ার শেষ দিন ১০ জুন। মেধা তালিকা প্রকাশ হবে ১৩ জুন। ভর্তি শুরু হবে ১৮ জুন থেকে। মেধা তালিকা প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত অবশ্য উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণদের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। আনন্দপুর গার্লসের ছাত্রী রুম্পা বাগ উচ্চ মাধ্যমিকে ৪৫০ নম্বর পেয়েছেন। রুম্পা কেশপুর কলেজে বাংলা অনার্সে ভর্তি হতে চান। মৌপাল হাইস্কুলের মৌসুমী কোলে ৪০৯ নম্বর পেয়েছেন। তাঁর ইচ্ছে, মেদিনীপুর কলেজে ভূগোল অনার্স পড়া। ভাদুতলা হাইস্কুল থেকে ৪০০ নম্বর পাওয়া জয়া মুখ্যা আবার মেদিনীপুর কলেজে ইতিহাস অনার্সে ভর্তি হতে চান। বিদ্যাসাগর বিদ্যাপীঠের ছাত্র সৌরভ ভট্টাচার্য ৪২০ নম্বর পেয়ে গণিত অনার্স নিয়ে মেদিনীপুর কলেজে পড়তে চান। রাঙামাটি হাইস্কুলের ছাত্র সৌমেন হেলানী ৪১৪ নম্বর পেয়েছে। সৌমেনের ইচ্ছে মেদিনীপুর কলেজে ইতিহাসে অনার্স পড়া।
এঁদের কেউই কিন্তু নিশ্চিত হতে পারছেন পছন্দের বিষয় পড়ার সুযোগ পাবেন কিনা। আপাতত অবশ্য দিন গোনা ছাড়া উপায় নেই।