Tamluk

পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ার ‘দখল’ সাসপেন্ড বিধায়কের

চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের এক আধিকারিককে মারধরের ঘটনায় নাম জড়ায় শহিদ মাতঙ্গিনী পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দিবাকর জানার। ৯ ফেব্রুয়ারি কোলাঘাট থানায় আত্মসমর্পণ করে গ্রেফতার হন দিবাকর। তাঁকে  অনির্দিষ্ট কালের জন্য দল থেকে সাসপেন্ড করে তৃণমূল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

তমলুক শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২০ ০৬:৫৮
Share:

শুক্রবার দিবাকর (ডানদিকে)। নিজস্ব চিত্র।

ব্যবধান মাত্র আট মাসের। ফের শহিদ মাতঙ্গিনী পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারে বসে পড়লেন তৃণমূলের সাসপেন্ড হওয়া নেতা দিবাকর জানা। দলীয় নির্দেশ উপেক্ষা করে শুক্রবার পদে ফিরেই ঘোষণা করলেন, ‘‘মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর নির্দেশ মতোই চলবে পঞ্চায়েত সমিতি।’’ দিবাকরের এমন কাজে দলের শৃঙ্খলা ভাঙায় ক্ষুব্ধ তৃণমূলের একাংশ।

Advertisement

চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের এক আধিকারিককে মারধরের ঘটনায় নাম জড়ায় শহিদ মাতঙ্গিনী পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দিবাকর জানার। ৯ ফেব্রুয়ারি কোলাঘাট থানায় আত্মসমর্পণ করে গ্রেফতার হন দিবাকর। তাঁকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য দল থেকে সাসপেন্ড করে তৃণমূল। জেলা তৃণমূলের নির্দেশে সহ সভাপতি শোভা সাউ ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব নেন। গত ২০ ফেব্রুয়ারি জামিনে ছাড়া পান দিবাকর।

স্থানীয় সূত্রে খবর, কয়েক দিন ধরেই গুঞ্জন উঠেছিল দিবাকর ফের সভাপতির পদে ফেরার জন্য জেলা প্রশাসন ও দলের কাছে দরবার করছেন। এদিন সকাল ১১টা নাগাদ শতাধিক অনুগামী নিয়ে মিছিল করে পঞ্চায়েত সমিতির অফিসে গিয়ে সভাপতির চেয়ারে বসে পড়েন দিবাকর। শোভা সাউয়ের নেমপ্লেটের ওপর দিবাকরের নাম ও পদের কাগজ লাগিয়ে দেন তাঁর অনুগামীরা। চেয়ারে ফিরে দিবাকর বলেন, ‘‘কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে একটি গণ্ডগোলকে কেন্দ্র করে আমি ১৩ দিন অফিস আসিনি। পরে জানলাম সহ-সভাপতিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘ব্লকের সমস্ত প্রধান, পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য, জেলা পরিষদ সদস্য ও নেতারা মিটিং করে আমাকে সভাপতি পদে বসতে বলেছেন। জেলাশাসক এবং মহকুমাশাসককেও লিখিতভাবে জানিয়েছি। মহকুমাশাসক অনুমতি দিয়েছেন।’’ এ ব্যাপারে মহকুমাশাসকের বক্তব্য জানতে বার বার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থেকে ফের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পদে ফেরার ক্ষেত্রে বাধা নেই। এমনকী তিনি কোনও মামলায় অভিযুক্ত হলেও।’’

Advertisement

এ দিন পদে ফিরেই দিবাকর ঘোষণা করেন, ‘‘যে কয়েক বছর এই বোর্ড থাকবে, মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর নির্দেশ মতোই চলবে। আমি তাঁর সঙ্গে দেখাও করব। তিনি আমার সব।’’ কিন্তু দল থেকে সাসপেন্ড হওয়ার পর কী ভাবে দলের অনুমতি ছাড়া সভাপতির চেয়ারে বসলেন? দিবাকরের জবাব, ‘‘আমি জেলা সভাপতি এবং শুভেন্দুবাবুকে মেসেজ করে জানিয়েছি। ওঁরা কোনও উত্তর দেননি। দলের কোনও একজনের আবেদনে আমি এতদিন চুপ করে ছিলাম।’’

তৃণমূলে সাম্প্রতিক রদবদলে দলের থেকে শুভেন্দুর একটা ‘দূরত্ব’ তৈরি হয়েছে বলে ইতিমধ্যেই জেলা তথা রাজ্যে জল্পনা তৈরি হয়েছে। এমনকী তাঁর বিজেপিতে যোগদানের সম্ভাবনা নিয়েও রাজনৈতিক মহলে চর্চা শুরু হয়েছে। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে দিবাকর সাসপেন্ড হয়েছেন। অথচ সেই তিনি দলের নির্দেশ অমান্য করে কী ভাবে জোর করে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির চেয়ারে বসেন এবং শুভেন্দু নির্দেশমতো চলার কথা ঘোষণা করেন তা নিয়ে দলের মধ্যেই প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।

দিবাকরের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সবচেয়ে বেশি সরব হয়েছিলেন শহিদ মাতঙ্গিনী পঞ্চায়েত সমিতির খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ জয়দেব বর্মন। এদিনের ঘটনায় তাঁর মন্তব্য, ‘‘দলে সাসপেন্ড হওয়া একজন কী করে সভাপতির পদে বসতে পারেন? আমরা দলীয় নেতৃত্বকে জানিয়েছি। তাঁদের নির্দেশের অপেক্ষায় আছি।’’

তৃণমূলের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সভাপতি শিশির অধিকারী কী বলছেন? দিবাকরের এমন কাণ্ড নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘সভাপতির চেয়ারে বসার ব্যাপারে আমরা কেউ কিছুই জানি না। অত্যন্ত অন্যায় কাজ করেছে।’’

শাসক দলের এমন ঘটনায় কটাক্ষ করতে ছাড়েনি গেরুয়া শিবির। বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলা সভাপতি নবারুণ নায়েক বলেন, ‘‘মানুষ তৃণমূলের সার্কাস বুঝে গিয়েছে। ২০২১ সালে তৃণমূল দলটাই থাকবে না। ওদের এখন মুষল পর্ব চলছে। বখরা নিয়ে কোন্দল চলছে। তাই কখনও কাউকে চেয়ারে বসাচ্ছে, আবার কাউকে তুলে দিচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন