শনিবার সকালে নন্দীগ্রাম থানায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ছবি: সংগৃহীত।
নন্দীগ্রামের থানায় ঢুকে চড়া মেজাজে পুলিশকে হুঁশিয়ারি দিলেন স্থানীয় বিধায়ক তথা পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। দিনদুয়েক আগে তৃণমূলের ‘উন্নয়নের পাঁচালি’-র টোটো ভাঙচুরের ঘটনায় এক বিজেপি কর্মীকে গ্রেফতার করেছে নন্দীগ্রাম থানার পুলিশ। শুধু তা-ই নয়, ওই বিজেপি কর্মীর বাড়িতে গিয়ে তাঁর স্ত্রী-পুত্রকে হেনস্থার অভিযোগও উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। সেই ঘটনার প্রতিবাদেই শনিবার সকালে থানায় যান শুভেন্দু। পুলিশকে রীতিমতো হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ভবিষ্যতে ফল ভুগতে হবে!’’ থানায় গিয়ে কর্তব্যরত পুলিশকর্মীদের উদ্দেশে শুভেন্দু প্রশ্ন করেন, ‘‘কে গিয়েছিলেন? কে ওই মহিলাকে হেনস্থা করেছেন? কে বাচ্চাটিকে ফেলে দিয়েছেন? আমি জানতে চাই। থানায় কি গুন্ডা-মস্তানরা চাকরি করছে?’’
দিনদুয়েক আগে নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের ভেকুটিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূলের ‘উন্নয়নের পাঁচালি’-র টোটোর উদ্বোধন হয়। শাসকদলের অভিযোগ, সেই টোটোতে ভাঙচুর চালান স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব। ছিঁড়ে ফেলা হয় পোস্টার এবং ফ্লেক্স। ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পর নন্দীগ্রাম থানায় কয়েক জন বিজেপি নেতার নামে অভিযোগ দায়ের করে তৃণমূল। তারও ২৪ ঘণ্টা পর নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের ভেকুটিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতে মণ্ডল সভাপতির ভাইকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
তবে বিজেপির অভিযোগ, শুক্রবার রাতে ওই বিজেপি কর্মীর বাড়িতে যায় সাদা পোশাকের পুলিশ। তখন ওই বিজেপি কর্মী বাড়িতে ছিলেন না। তাঁকে না-পেয়ে তাঁর স্ত্রী-পুত্রকে হেনস্থা করা হয়। এমনকি, মারধরেরও অভিযোগ ওঠে। তার পরেই শনিবার সকালে নন্দীগ্রাম থানায় উপস্থিত হন শুভেন্দু। সঙ্গে ছিলেন ওই বিজেপি কর্মীর পরিবারের লোকেরা। এক মহিলা এবং শিশুকে ওই কর্মীর স্ত্রী-পুত্র বলে পরিচয় দিয়ে শুভেন্দু প্রশ্ন করেন, ‘‘মাঝরাতে কার অনুমতিতে মহিলার শাড়ি-ব্লাউজ় ছেঁড়া হল?”
শুভেন্দু নিজের সমাজমাধ্যমে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করেছেন। সেই ভিডিয়োয় (যদিও এই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার ডট কম) ওই মহিলা এবং শিশুটিকে দেখা যাচ্ছে। সেই ভিডিয়োয় শুভেন্দুকে পুলিশকে হুঁশিয়ারি দিতে দেখা যায়। থানায় দাঁড়িয়ে শুভেন্দু বলেন, “কোন মস্তান হামলা চালিয়েছে? ডিউটি অফিসার জবাব দিন। বাচ্চাটাকে কেন ফেলে দেওয়া হল?” তিনি সাফ জানান, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশকে দিয়ে ভয় দেখিয়ে বিজেপি কর্মীদের ‘তৃণমূলীকরণ’ করার চেষ্টা সফল হবে না। শুভেন্দু এ-ও জানান, এই ঘটনার শেষ দেখে ছাড়বেন। উচ্চ আদালতে যাবেন। প্রয়োজনে প্রত্যেক বিজেপি কর্মীর বাড়িতে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হবে।
একই সঙ্গে ওই বিজেপি কর্মীকে কেন গ্রেফতার করা হল, তার জবাবও চান শুভেন্দু। তাঁর দাবি, মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে বিজেপি কর্মীকে। ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়। তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজিত রায়ের পাল্টা অভিযোগ, ‘‘উনি (শুভেন্দু) উন্মাদ হয়ে গিয়েছেন। বিজেপি তৃণমূল কর্মীদের বাড়িতে চড়াও হলে মহিলাদের শ্লীলতাহানি করবে, তৃণমূলের টোটো ভাঙচুর করা হবে, আর পুলিশ-প্রশাসন চুপ থাকবে? চমকানো, ধমকানো ছাড়া আর কিছু নেই।’’