খুচরো গুনছেন দোকানিরা। —নিজস্ব চিত্র।
গ্রামে চায়ের দোকান আছে তাঁর। সেই দোকানের রোজগারেই সংসার চলে। সন্তানদের পড়াশোনার খরচও সেখান থেকেই মিটিয়েছেন। তবে তাঁদের শখ-আহ্লাদ খুব একটা পূরণ করতে পারেননি বলে আফসোস ছিল। বছর চারেক আগে তাঁর মেয়ে স্কুটার চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই সময় দিতে পারেননি। যদিও সংকল্প করেছিলেন মেয়ের শখ পূরণ করবেনই। সেই থেকে রোজগার থেকেই তিল তিল করে খুচরো টাকা জমাতে শুরু করেন। শেষপর্যন্ত সেই জমানো খুচরো দিয়েই মেয়েকে স্কুটার কিনে দিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের বাচ্চু চৌধুরী।
পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোণার এক নম্বর ব্লকের মৌলা গ্রামের বাসিন্দা বাচ্চু। গত ২৪ বছর ধরে ওই গ্রামেই চায়ের দোকান চালান। সেই দোকান থেকে যা রোজগার হত তাঁর, তা দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতেন বাচ্চু। সেই রোজগার থেকে মেয়ের জন্য স্কুটি কিনে দেওয়া সম্ভব ছিল না। তবে চার বছর ধরে রোজ খুচরো জমিয়ে মেয়ের শখপূরণ করতে পেরে খুশি বাচ্চু। তাঁর কথায়, ‘‘তখন দিতে পারিনি। তবে ঠিক করেছিলাম এক দিন না এক দিন ঠিক দেব। সেটাই আজ পূর্ণ করলাম।’’
জমানো খুচরো একটি জারে ভরে গাড়িতে চাপিয়ে চন্দ্রকোণা টাউনের গোঁসাইবাজারের এক বাইকের শোরুমে যান বাচ্চু। দোকানিদের জানান, স্কুটার কিনতে চান। পছন্দ করার পর তিনি জানান স্কুটার নেবেন খুচরো দিয়ে! প্রথমে দোকানিরা বিশ্বাস করেননি বিষয়টি। তবে ওই ড্রাম এনে দোকানের মেঝেয় উল্টে দিলেই তা থেকে বার হয় কাঁড়িকাঁড়ি খুচরো। হতবাক হয়ে যান দোকানিরা। কত টাকা আছে? দোকানিদের প্রশ্নে বাচ্চু জানান, হাজার চল্লিশেক হবে। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে দোকানের আট জন কর্মী মিলে ওই খুচরো গোনার কাজ শেষ করেন। দেখেন, সেখানে ৬৯ হাজার টাকা আছে! স্কুটারে বাকি টাকাও জমানো অর্থ থেকেই দেন বাচ্চু। এক লক্ষ ১০ হাজার টাকা দিয়ে মেয়ের জন্য স্কুটার কিনে বাড়ি ফেরেন তিনি।
স্থানীয়দের দাবি, খুচরো জমানো বাচ্চুর অনেক দিনের অভ্যাস। অতীতে এমন ভাবে টাকা জমিয়ে বড় মেয়ের বিয়েও দেন। এ বার ছোট মেয়ের শখ পূরণ করলেন মৌলা গ্রামের চা বিক্রেতা।