শিক্ষক তৈরিতে নয়া মডেল

দেখানো হয়, কীভাবে একটি স্কুলের নিচু ক্লাসের পড়ুয়াদের ক্লাস নিলে উঁচু ক্লাসের পড়ুয়াদের ব্যক্তিত্ব ও আত্মবিশ্বাস বাড়ে। এমনকী এতে নিচু ক্লাসের পড়ুয়াদেরও পড়াশোনায় উৎসাহ বাড়বে বলে দাবি করা হয়।

Advertisement

দেবমাল্য বাগচী

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৮ ০১:২০
Share:

শিক্ষক: পড়ুয়াদের পড়ানোর কৌশল শেখাতে শিবির আইআইটি-তে। ছবি: দেবরাজ ঘোষ

স্কুলে শিক্ষক দিবসের দিন নিচু ক্লাসের পড়ুয়াদের পড়ানোর স্মৃতি কম-বেশি অনেকেরই আছে। সেই সুযোগ মেলে বছরে একদিন। তবে নিয়মিত নিচু ক্লাসের পড়ুয়াদের ক্লাস নেওয়ার অভিজ্ঞতা একজন ছাত্র বা ছাত্রীর ব্যক্তিত্ব বিকাশে সাহায্য করবে বলে দাবি করছে খড়্গপুর আইআইটি।

Advertisement

বুধবার আইআইটি-র গার্গী অডিটোরিয়ামে এক শিবিরের আয়োজন হয়। জেলার ৯টি স্কুল শিবিরে যোগ দিয়েছিল। শিবিরে ‘সি মাইনাস ৪’ মডেলের মাধ্যমে ওই স্কুলের পড়ুয়ারা কীভাবে অন্য পড়ুয়াদের পড়াচ্ছে তা বোঝানো হয়। দেখানো হয়, কীভাবে একটি স্কুলের নিচু ক্লাসের পড়ুয়াদের ক্লাস নিলে উঁচু ক্লাসের পড়ুয়াদের ব্যক্তিত্ব ও আত্মবিশ্বাস বাড়ে। এমনকী এতে নিচু ক্লাসের পড়ুয়াদেরও পড়াশোনায় উৎসাহ বাড়বে বলে দাবি করা হয়।

এই ‘সি মাইনাস ৪’ কী?

Advertisement

আইআইটি-র দাবি, ‘সি’-র অর্থ ক্লাস। এই মডেল অনুযায়ী একজন পড়়ুয়া তার থেকে চার শ্রেণি নিচের একজন পড়ুয়াকে অনায়াসেই পড়াতে পারবে। তাই এই মডেলের নাম ‘সি মাইনাস ফোর’। দু’বছরের এই প্রকল্পে গবেষণার কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে। জেলার ১০টি স্কুলে এই মডেল চালু করা গিয়েছে। প্রথমে এই মডেলে নির্বাচিত স্কুলের একজন শিক্ষককে মেন্টর হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। একজন পড়ুয়াকে কীভাবে শিক্ষক হিসেবে গড়ে তোলা যায়, মেন্টরদের তারই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। আর পড়ুয়াদের শেখানো হয় নিচু ক্লাসের পড়ুয়াদের পড়ানোর কৌশল।

আইআইটি সূত্রে জানা গিয়েছে, ফ্রান্সের একটি সংস্থা তাঁদের ‘কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি’ তহবিল থেকে সামাজিক প্রকল্পে ব্যয়ের জন্য মাদ্রাজ আইআইটিকে কিছু অর্থ দিয়েছিল। মাদ্রাজ আইআইটির পক্ষ থেকে সেই টাকার কিছু অংশ খড়্গপুর আইআইটিকে দেওয়া হয়। এরপরেই খড়্গপুর আইআইটি-র একদল অধ্যাপক গ্রামের স্কুলে পড়ুয়াদের শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য এই মডেল নিয়ে গবেষণা শুরু করেন।

প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত আইআইটি-র ধাতুবিদ্যার অধ্যাপক তাপসকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশেও স্কুল স্তরে ‘সি মাইনাস ৪’ মডেল চালু রয়েছে। সেই মডেল একটু অন্যরকম। মাদ্রাজ আইআইটি-র অধ্যাপক পীযূষ ঘোষ তাঁকে এমন মডেল তৈরির জন্য গবেষণায় উৎসাহ দেন। সেই মতোই মডেল তৈরি করা হয়েছে। নিচু ক্লাসের পড়ুয়াদের পড়িয়ে খুশি ভাদুতলা হাইস্কুলের দশম শ্রেণির দিশারী ঘোষ, রাধামোহনপুরের দশম শ্রেণির আলাপন মাইতিরাও। তাঁরা বলছিল, “সামনে মাধ্যমিক। নিচু ক্লাসের পড়ুয়াদের যে বিষয়ে ক্লাস নিচ্ছি সেই বিষয়ে আমাকেও অনেক পড়াশোনা করতে হচ্ছে। ফলে একদিকে যেমন পরীক্ষার জন্য আত্মবিশ্বাস বাড়ছে, তেমনই নিজেও অনেক কিছু শিখতে পারছি।” বুধবারের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গোলপার্ক রামকৃষ্ণ মিশনের সম্পাদক স্বামী সুপর্নানন্দ, রাজ্য শিক্ষা দফতরের আধিকারিক বিশ্বরঞ্জন মান্না, কে এ সাদাত প্রমুখ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন