তছনছ: চন্দ্রকোনার বিধায়কের বাড়িতে ভাঙচুরের পর। নিজস্ব চিত্র
পঞ্চায়েত নিবার্চনের জন্য শাসকদলের কোর কমিটির বৈঠক চলছে। হঠাৎই এক নেতা একজনকে লক্ষ্য করে কাগজ ভর্তি ব্যাগ ছুড়লেন। শুরু হল ধুন্ধমার। ঘরে ঢুকে দরজা আঁটলে ন বিধায়ক।
মঙ্গলবার রাতে চন্দ্রকোনার তৃণমূলের বিধায়ক ছায়া দোলইয়ের বাড়িতে একটি বৈঠক হয়। আচমকাই দলেরই ব্লকের সহ-সভাপতি হীরালাল ঘোষ ব্লক সভাপতি অমিতাভ কুশারীকে লক্ষ্য করে কাগজ ভর্তি একটি ব্যাগ ছুড়ে মারেন। অল্প আহত হন অমিতাভবাবু। ঘটনাটি চাউর হতেও দেরি হয়নি। নিমেষেই ব্লক সভাপতির অনুগামীরা জড়ো হন বিধায়কের ভাড়া বাড়িতে। শুরু হয় ভাঙচুর। দলেরই কর্মীদের আতঙ্কে প্রাণে বাঁচতে ঘরে ঢুকে দরজা এঁটে দেন বিধায়ক। হীরালাল-সহ ব্লক সভাপতিকে হেনস্থায় জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিতে রাতভর মিছিল হয় চন্দ্রকোনা জুড়ে। থানা ঘেরাও করে চলে বিক্ষোভ। পুলিশের হস্তক্ষেপে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলেরই এক ব্লক কমিটির সদস্য বললেন, “মঙ্গলবার যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, পুলিশ নাক না গলালে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে খুনোখুনির সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছিল।” অভিযোগ অস্বীকার করে হীরালাল বলেন, ‘‘আমি মারধর করিনি। বৈঠক চলাকালীন বচসা হয়েছিল।’’ দলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতির কথায়, “চন্দ্রকোনার পরিস্থিতির উপর আমরা নজর রাখছি। দ্রুতই হস্তক্ষেপ করে মিটিয়ে দেওয়া হবে।”
বুধবারও থমথমে ছিল চন্দ্রকোনা। গন্ডগোল এড়াতে ছিল পুলিশি টহল। এ দিন সকালেই দলের জেলা সভাপতি এবং রাজ্য সম্পাদক সুব্রত বক্সীর কাছে গিয়ে নালিশ জানান বিধায়ক। সূত্রের খবর, এ দিন ঘনিষ্ঠমহলে তিনি তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। যদিও সংবাদমাধ্যমের কাছে কোনও মন্তব্য করতে চাননি ছায়াদেবী। তাঁর কথায়, “আমি যা বলার জেলা ও রাজ্য নেতৃত্বকে জানিয়েছি।”
ক’দিন ধরেই বন্যায় চাষের ক্ষতিপূরণ নিয়ে একটা চাপা উত্তেজনা ছিল চন্দ্রকোনায়। তৃণমূলের অন্দরের খবর, কৃষি দফতরে ভাঙচুর, ডেপুটেশন ঘিরে দলেরই মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ চলছিল। আড়াআড়ি ভাবে ভাগ হয়ে যান ব্লক সভাপতির গোষ্ঠী ও বিধায়কের অনুগামীরা। দলের জেলা নেতৃত্বদের নির্দেশেই গোটা পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে মঙ্গলবার চন্দ্রকোনা-২ ব্লকের কোর কমিটির বৈঠক ডেকেছিলেন ছায়াদেবী। চন্দ্রকোনা শহরেই তাঁর ভাড়া বাড়িতেই চলছিল বৈঠক। পঞ্চায়েত ভোট সহ বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার মাঝেই উত্তেজনা ছড়ায়। আক্রমণে অমিতাভবাবুর নাক দিয়ে রক্ত ঝরতে থাকে।
সূত্রের খবর, বিধায়কের সামনেই দলেরই নেতৃত্বের কাছে মারধরের বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ ব্লক সভাপতি। যদিও প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে চাননি অমিতাভবাবু। তিনি বলেন, “আমি কোনও মন্তব্য করব না। সময়েই সব জানতে পারবেন।” পঞ্চায়েতের আগে এতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন দলেরই নিচুতলার কর্মীরা। তাঁদের বক্তব্য, কর্মীদের ভয়ে বিধায়ককে ঘরে ঢুকে পড়তে হচ্ছে। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়?