শঙ্করআড়ায় ধর্মঘটের সমর্থনে রাস্তায় বিজেপি কর্মীরা।
বন্ধে মিশ্র প্রভাব পড়ল পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরে। কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন ‘রোড ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড সেফটি বিল’ বাতিলের দাবিতে আজ, বৃহস্পতিবার দেশ জুড়ে ২৪ ঘন্টার ধর্মঘট ডাকে সিটু, আইএনটিইউসি-সহ বেশ কয়েকটি কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠন। রাজ্য জুড়ে পুরভোটে শাসক দলের তাণ্ডবের প্রতিবাদে এ দিনই আবার সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দেয় বামফ্রন্ট। ধর্মঘট ডাকে বিজেপিও।
তমলুকেও বন্ধের মিশ্র প্রভাব দেখা দিল। শহরের বেশকিছু দোকানপাট এ দিন বন্ধ ছিল। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা আদালতে আইনজীবীদের উপস্থিতির হার ছিল কম। জেলার অধিকাংশ বেসরকারি বাস চলাচল বন্ধ থাকায় স্বাভাবিক জনজীবন ব্যাহত হয়। দক্ষিণ–পূর্ব রেলের হাওড়া-খড়্গপুর, পাঁশকুড়া–হলদিয়া, তমলুক-দিঘা রেলপথে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও অন্য দিনের তুলনায় যাত্রী ছিল কম। মেচেদা কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড থেকে বাস চালাচল প্রায় বন্ধ ছিল। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক অন্তরা আচার্য বলেন, ‘‘জেলা প্রশাসনিক অফিস-সহ সরকারি সমস্ত অফিসে সরকারি কর্মীদের উপস্থিতির হার ছিল ৯৮ শতাংশ। জেলার সব স্কুল-কলেজও খোলা ছিল। কোনও অশান্তির
ঘটনা ঘটেনি।’’
এ দিন সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন জায়গায় বন্ধের সমর্থনে কোথাও সিপিএম আবার কোথাও বিজেপি কর্মীরা পথে নামে। জোর করে অফিস ও দোকান বন্ধ করার চেষ্টার অভিযোগে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে মোট ৪০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বন্ধের সমর্থনে তমলুক শহরে পথে নামে বিজেপি নেতা-কর্মীরা। এ দিন সকালে প্রথমে তমলুক শহরের শঙ্করআড়ায় হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়ক অবরোধ করে বিজেপি সমর্থকরা। কিছুক্ষণ পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে অবরোধ উঠে যায়। এরপর বিজেপি নেতা-কর্মীরা মিছিল করে জেলা প্রশাসনিক অফিসের প্রবেশপথ আটকে বনধের সমর্থনে বিক্ষোভ দেখায়। জেলা প্রশাসনিক অফিস অবরোধকারীদের মধ্যে চার জন বিজেপিকে কর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করে। এরপরেই দলীয় কর্মীদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে ও তাঁদের ছেড়ে দেওয়া দাবিতে বিজেপি নেতা-কর্মীরা তমলুক থানার সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখায়।
এ দিন সকালে নন্দকুমারের খঞ্চি বাজারে বন্ধের সমর্থনে বিজেপি’র কর্মী-সমর্থকরা হলদিয়া-মেচেদা জাতীয় সড়ক অবরোধ করে। অবরোধ তুলতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে বলে অভিযোগ। নন্দকুমারের কল্যাণপুর ও কুমরচক গ্রাম পঞ্চায়েত অফিস জোর করে বন্ধ করার চেষ্টা করে বিজেপি সমর্থকরা। এ জন্য পুলিশ কয়েকজন বিজেপি সমর্থককে গ্রেফতার করে। এর প্রতিবাদে বিজেপি সমর্থকরা নন্দকুমার থানায় বিক্ষোভ দেখায়। অন্য দিকে, কোলাঘাটে পুলিশ বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের মিছিল করতে বাধা দেয় বলে অভিযোগ।
পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপার জানান, জেলার তমলুক, নন্দকুমার, পাঁশকুড়া, কোলাঘাট, চণ্ডীপুর ও পটাশপুর এলাকায় জোর করে গ্রাম পঞ্চায়েত অফিস, দোকানপাট বন্ধ করার চেষ্টার অভিযোগে মোট ৪০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে বন্ধকে কেন্দ্র করে কোথাও গোলামালের ঘটনা ঘটেনি। যদি সিপিএমের জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহির দাবি, পুলিশ-প্রশাসন ও তৃণমূল যৌথভাবে এ দিন বন্ধ ভাঙার চেষ্টা চালিয়েছে। তা সত্বেও জেলা জুড়েই বন্ধ অনেকাংশে সফল হয়েছে। এ দিন পাঁশকুড়া, চণ্ডীপুর, কোলাঘাট ও নাইকুড়ি থেকে পুলিশ আমাদের ২২ জন সমর্থককে গ্রেফতার করেছে।
এ দিন শিল্পশহরে বেসরকারি বাসের সংখ্যা ছিল হাতেগোনা। হলদিয়ার ব্রজলালচক ও সুতাহাটায় বন্ধ-এর সমর্থনে সিপিএম মিছিল করে। সুতাহাটার কৃষ্ণনগর ও সুতাহাটা বাজারে সিপিএম ও তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে বচসা ও ধস্তাধস্তি হয়। যদিও দু’জায়গাতেই পুলিশ গিয়ে দু’পক্ষকে হটিয়ে দেয়। হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদ-এর চেয়ারম্যান তথা তমলুকের সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘সাংসদ হওয়ার পর থেকে কখনও হলদিয়ায় কর্মনাশা বন্ধ করতে দিইনি। বাম, বিজেপি ও কয়েকটি শ্রমিক সংগঠনের ডাকা বন্ধকে মানুষ প্রত্যাখান করেছেন।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে অন্য দিনের মধ্যে স্বাভাবিক কাজ হয়েছে। কারখানাগুলিতে কর্মীদের উপস্থিতির হারও স্বাভাবিক ছিল।’’ যদিও সিপিএমের হলদিয়া (দক্ষিণ) জোনাল কমিটির সম্পাদক শ্যামল মাইতির দাবি, এ দিন বন্ধ সফল হয়েছে।
কাঁথি শহরেও বেসরকারি বাসের সংখ্যা ছিল কম। তবে অন্য দিনের মতোই রাস্তায় সরকারি বাস ছিল। যদিও শহরের দোকানপাট ছিল বন্ধ।
ঘাটাল মহকুমার বিভিন্ন প্রান্তেও বন্ধের মিশ্র প্রভাব দেখা গিয়েছে। এ দিন রাস্তায় বাসের সংখ্যা ছিল কম। দূরপাল্লার বাস সে ভাবে চোখে পড়েনি। ঘাটাল শহর, চন্দ্রকোনা, দাসপুরের রাস্তাঘাটও ছিল ফাঁকা। এগরার বিভিন্ন সরকারি অফিসে প্রথম দিকে উপস্থিতির হার ছিল ভাল। তবে দুপুর গড়াতেই অফিসগুলি প্রায় ফাঁকা হয়ে যায়। অন্য দিকে, ঝাড়গ্রামের বিভিন্ন অফিস ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দরজায় পতাকা লাগিয়ে দিয়েছিলেন বাম কর্মীরা। কিন্তু পথে নেমে সকাল থেকেই আগাগোড়া ‘যুদ্ধং দেহি’ মনোভাব নিয়ে সে সব খুলে ফেলে দেন তৃণমূলের লোকেরা।
ছবি: পার্থপ্রতিম দাস, সোহম গুহ, কৌশিক মিশ্র ও দেবরাজ ঘোষ।