Lynching

ডাইন ঠাওরে মার 

অপদেবতা তাড়ানোর ক্রিয়াকলাপের জন্য ৯০ হাজার টাকা দিতে হবে বলে জানায় মাতব্বরররা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বিনপুর শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২১ ০৬:১৯
Share:

প্রতীকী ছবি।

বিধায়ক তথা বন প্রতিমন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদার পৈতৃক গ্রামেই ডাইন সন্দেহে এক দিনমজুর প্রৌঢ়কে মারধর করে ফতোয়া দেওয়ার অভিযোগ উঠল। বিনপুরের মাগুরা গ্রামের ওই আদিবাসী পরিবারটিকে একঘরে করার ফতোয়াও দিয়েছেন গাঁয়ের মাতব্বররা। ৯০ হাজার টাকা জরিমানা ধার্য করা হয়েছে।

Advertisement

নিজের বিধানসভা এলাকার ওই ঘটনা জেনেই পুলিশকে জানিয়েছেন বিরবাহা। তিনি বলছেন, ‘‘ডাইন বলে কিছু হয় না। স্রেফ টাকা আদায়ের উদ্দেশ্যে একটি দুষ্টচক্র অন্ধবিশ্বাসকে হাতিয়ার করে ওই প্রৌঢ়ের পরিবারকে হয়রান করছে। কলকাতা থেকে ফিরে গ্রামে যাব।’’ ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপার বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, ‘‘তদন্ত হচ্ছে। কেউ এখনও গ্রেফতার হননি। ওই গ্রামে নজরদারি রয়েছে।’’

কিছুদিন আগে মাগুরা গ্রামের যুবক কার্তিক মান্ডির মৃত্যু হয় রক্তবমি করে। স্ত্রী আহ্লাদীর সন্দেহ, অপদেবতার প্রভাবে তাঁর স্বামীর মৃত্যু হয়েছে। কার্তিকের সম্পর্কিত ঠাকুরদা বছর পঞ্চান্নর ফাগু মান্ডির বাড়িতে অপদেবতা রয়েছে বলে মনে করা হয়। প্রতি বছর জ্যৈষ্ঠ পূর্ণিমায় ফাগুর বাড়িতে পারিবারিক পুজো হয়। গ্রামবাসীর একাংশের দাবি, ফাগু অপদেবতার পুজো করেন। তার প্রভাবেই কার্তিকের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার মাতব্বররা ফাগুর স্ত্রী ছিতামণি ও ছোট ছেলে ধনঞ্জয়কে ঝাড়খণ্ডের চাকুলিয়ায় এক জানগুরুর কাছে নিয়ে যান। জানগুরু মন্ত্র পড়ে ফাগুকে ডাইন সাব্যস্ত করে। জানিয়ে দেয়, ফাগুর বাড়িতেই অপদেবতার বাস। সন্ধ্যায় পাঁচ মাতব্বর গ্রামে সালিশি বসায়। ফাগুকে মারধর করা হয়। অপদেবতা তাড়ানোর ক্রিয়াকলাপের জন্য ৯০ হাজার টাকা দিতে হবে বলে জানায় মাতব্বরররা। জানগুরুর প্রণামী ও কার্তিকের পরিবারের ক্ষতিপূরণ বাবাদ আড়াই লক্ষ টাকাও দাবি করা হয়েছে।

Advertisement

ফাগু ভারী কাজ করতে অক্ষম। স্ত্রী ও দুই ছেলের দিনমজুরিতে সংসার চলে। অভিযোগ, হুমকিতে ঘরবন্দি হয়ে থাকায় তাঁরাও কাজে যেতে পারছেন না। বিরবাহার শরণাপন্ন হন। রাতেই গ্রামে পুলিশ গিয়ে দু’পক্ষের সঙ্গে কথা বলে। তারপর এ দিনও মাতব্বররা ফাগুর পরিবারকে জানিয়েছে, পুলিশে জানানোর ফল ভাল হবে না। ফাগু বলছেন, ‘‘চরম আতঙ্কে আছি। কেন আমাকে ডাইন দেগে দিয়েছে কারণ কিছুই বুঝতে পারছি না।’’ ছিতামণির বক্তব্য, ‘‘আমরা গরিব। জরিমানার টাকা দেওয়ার ক্ষমতা নেই।’’

বিজেপি পরিচালিত স্থানীয় বিনপুর পঞ্চায়েতের প্রধান রতন মুদি বলছেন, ‘‘আমি নিজেও আদিবাসী। কিন্তু একাংশের অন্ধবিশ্বাস কিছুতেই দূর করা যাচ্ছে না।’’ আজ, রবিবার গ্রামে পুলিশের উদ্যোগে সচেতনতা শিবির হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন