বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক সন্দেহে মহিলার গায়ে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে খুন করলেন প্রতিবেশীরা!

রাত ৮ টা নাগাদ ‘চোর’ ‘চোর’ চিৎকার শুনে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে দেখি সুমিত্রাদেবীকে সুশান্তর স্ত্রী, দুই ভাই, বৌদি ও বাবা মিলে মারধর করছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

তমলুক শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৮ ০১:০১
Share:

বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে সন্দেহে এক মহিলাকে মারধর করে গায়ে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে মারার অভিযোগ উঠল প্রতিবেশী একটি পরিবারের বিরুদ্ধে।

Advertisement

তমলুক শহরের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাপাসবেড়িয়ায় বুধবার রাতের ঘটনা। পুলিশ জানিয়েছে, সুমিত্রা বেরা (২৭) নামে ওই মহিলাকে খুনের অভিযোগে ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তমলুক জেলা হাসপাতালে মৃতদেহ ময়নাতদন্তে পাঠিয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। এমন ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে এলাকায়। স্থানীয় বাসিন্দারা অবিলম্বে অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবি তুলেছেন।

পুলিশ সূত্রে খবর, কাপাসবেড়িয়ার বাসিন্দা পেশায় রংমিস্ত্রি শ্যামল বেরার সঙ্গে বছর তেরো আগে বিয়ে হয় নিমতৌড়ির বাসিন্দা সুমিত্রা জানার। দম্পতির ১১ বছরের একটি ছেলে রয়েছে। সে মামাবাড়িতে থেকে পড়াশোনা করে। আর পাঁচটা দিনের মতো শ্যামলবাবু বুধবার নিমতৌড়িতে কাজে চলে যান। বাড়িতে একা ছিলেন সুমিত্রা। অভিযোগ, ওই দিন রাত ৮টা নাগাদ প্রতিবেশী সুশান্ত জানার বাবা খোকন জানা, স্ত্রী দ্বীপান্বিতা, তার দুই ভাই প্রশান্ত ও মন্টু এবং মা শিখাদেবী সহ ৫-৬ জন সুমিত্রাদেবীর বাড়িতে চড়াও হয়। বাড়ির সামনেই সুমিত্রাদেবীকে তারা মারধর করতে থাকে। তাদের হাত থেকে উদ্ধার পেতে সুমিত্রাদেবী ছুটে প্রতিবশী জয়হরি বেরার বাড়িতে ঢুকে পড়েন। সেখান থেকেও তাঁকে টেনে বের করে চলতে থাকে মারধর। এরপর কোনওরকমে সুমিত্রাদেবী নিজের বা়ড়িতে ঢুকে শিকল তুলে দেন। কিন্তু সুশান্তর পরিবারের লোকজন সুমিত্রাদেবীর বাড়ির জানালা ভেঙে ভিতরে ঢুকে তাঁর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। ঘটনার পরই অভিযুক্তরা এলাকা ছেড়ে পালায়। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে ঘটনাস্থল থেকে সুমিত্রাদেবীর অগ্নিদগ্ধ মৃতদেহ উদ্ধার করে। পরে তাঁর ভাই থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করেন।

Advertisement

সুমিত্রাদেবীর ভাই তারাপদ জানার অভিযোগ, ‘‘প্রতিবশী পেশায় গাড়ি চালক সুশান্ত জানার সঙ্গে দিদির বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে সন্দেহ করে সুশান্তর বাড়ির লোকেরা দিদিকে এ ভাবে খুন করেছে। অভিযুক্তদের কড়া শাস্তি চাই।’’

বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় ইটের দেওয়াল ও টালির চাল দেওয়া সুমিত্রাদেবীর বাড়ির বারান্দায় আগুনে পোড়া কাপড়ের টুকরো পড়ে রয়েছে। বাড়ির জানলা ভাঙা। বাড়ির ভিতরে গ্যাস সিলিন্ডার, কেরোসিনের বোতল পড়ে। সমস্ত জিনিসপত্র লন্ডভন্ড।

প্রত্যক্ষদর্শী জয়হরিবাবু বলেন, ‘‘রাত ৮ টা নাগাদ ‘চোর’ ‘চোর’ চিৎকার শুনে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে দেখি সুমিত্রাদেবীকে সুশান্তর স্ত্রী, দুই ভাই, বৌদি ও বাবা মিলে মারধর করছে। আমি বাধা দিলে আমাকেও মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এ সবের মধ্যেই সুমিত্রাদেবী কোনওরকমে ওদের হাত থেকে পালিয়ে নিজের বাড়িতে ঢুকে যান।’’

জয়হরিবাবুর অভিযোগ, ‘‘অভিযুক্তরা সুমিত্রাদেবীর বাড়ির জানালা ভেঙে ভিতরে ঢুকে সুমিত্রাদেবীর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। প্রতিবেশীদের নিয়ে বা়ড়িতে ঢুকে জল ঢেলে আগুন নেভাই।’’

সুমিত্রাদেবীর স্বামী শ্যামল বলেন, ‘‘স্ত্রীর সঙ্গে কারও সম্পর্ক ছিল বলে জানি না। শুধুমাত্র সন্দেহের বশে ওরা আমার স্ত্রীকে খুন করল।’’

সুমিত্রাদেবীর বাড়ি থেকে ২০০ মিটার দূরেই অভিযুক্তদের দোতলা বাড়ি। সেখানে এদিন গিয়ে দেখা যায় দরজায় তালা ঝুলছে। স্থানীয় কাউন্সিলার পৃথ্বীশ নন্দী ঘটনার তীব্র নিন্দা করে বলেন, ‘‘যে ভাবে ওই মহিলার উপরে অত্যাচার করে তাঁকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে তা জঘন্যতম অপরাধ। সুশান্তর বিরুদ্ধে আগেও নানা অভিযোগ উঠেছিল। পুলিশকে উপযুক্ত তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন