আক্রান্তদের অভিজ্ঞতার কথা শুনছেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।—নিজস্ব চিত্র।
নয়াগ্রামে এসে তৃণমূলের লোকেদের হাতে আক্রান্ত দলের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে দেখা করল রাজ্য রাজ্য বিজেপির এক প্রতিনিধি দল। গত ২৬ মে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন অর্ধেন্দু পাত্র। অর্ধেন্দুবাবু তৃণমূলের নয়াগ্রাম ব্লক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ওই দিন তৃণমূলের হাজার দেড়েক কর্মী-সমর্থকও দল ছাড়েন। বিজেপির অভিযোগ, এরপর থেকেই তৃণমূল সন্ত্রাসের মাত্রা বাড়িয়েছে। তৃণমূলের লোকেরা দলের কর্মী-সমর্থকদের ওপর চড়াও হচ্ছে। ঘরবাড়ি ভাঙচুরও করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু এলাকায় এমন ঘটনা ঘটেছে। সরেজমিনে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে রবিবার নয়াগ্রামে আসে রাজ্য বিজেপির এক প্রতিনিধি দল। সাত সদস্যের এই দলে ছিলেন দলের রাজ্য কমিটির মুখপাত্র রীতেশ তিওয়ারি, বিজেপির রাজ্য সহ-সভাপতি সুশান্ত পাল, তাপস চট্টোপাধ্যায়, প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দেবশ্রী চৌধুরী প্রমুখ।
রবিবার সাত সদস্যের রাজ্য বিজেপির প্রতিনিধি দলটি প্রথমে গোপীবল্লভপুর-২ এর তপসিয়া স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যায়। অনাদি খামরই নামে বিজেপির এক কর্মী এখানে চিকিত্সাধীন রয়েছেন। তৃণমূলের হামলায় জখম কর্মীর শারীরিক পরিস্থিতির খোঁজখবর নেওয়ার পর দলটি আসে নয়াগ্রামের নিগুইতে। সেখান থেকে চালতাবেড়া হয়ে নরসিংহপুরে। এই সব এলাকাতেও দলের কর্মী-সমর্থকদের ওপর আক্রমণ হয়েছে বলে অভিযোগ। মহিলারা জানান, নয়াগ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তথা তৃণমূলের নয়াগ্রাম ব্লক সভাপতি উজ্জ্বল দত্তের নেতৃত্বেই সন্ত্রাস চলছে। রাজ্য বিজেপির প্রতিনিধি দলের আসার খবর পেয়ে এ দিন একাধিক এলাকায় জমায়েত করে তৃণমূলের লোকেরা। তপসিয়া স্বাস্থ্য কেন্দ্রের অদূরে জমায়েত ছিল। নিগুই, চালতাবেড়াতেও জমায়েত ছিল। বাঁশ-লাঠিসোঁটা নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা। তবে পুলিশ মোতায়েন থাকায় জমায়েত ঘিরে অনভিপ্রেত কোনও ঘটনা ঘটেনি।
সমস্ত কিছু ঘুরে দেখার পর রীতেশ বলেন, “আমাদের কর্মী-সমর্থকদের ওপর আক্রমণ হচ্ছে। অথচ, পুলিশ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। মহিলাদের বলা হচ্ছে, বিজেপি করলে অন্যত্র পাচার করে দেওয়া হবে। এ সব বেশি দিন চলতে পারে না। আমরা দিল্লিতে রিপোর্ট পাঠাচ্ছি।” তিনি আরও বলেন, “নয়াগ্রামের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে মনে হল, তৃণমূল আতঙ্কের বাতাবরণ তৈরি করতে চাইছে। আতঙ্কের বাতাবরণ তৈরি করার জন্যই ওদের এই সন্ত্রাস। আমাদেরই তিনটি জায়গায় বাধা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। তৃণমূলের জমায়েত থেকে আমাদের উদ্দেশে অশ্লীল কথাবার্তাও বলা হয়। মানুষ রুখে দাঁড়াতে শুরু করেছে। তাই তৃণমূল আরও ভয় পাচ্ছে।”
বস্তুত, পশ্চিম মেদিনীপুরেও এ বার বিজেপির ভোট বেড়েছে। জেলার সর্বত্র বিজেপির তেমন সংগঠন নেই। কার্যত বিনা সংগঠনেই এ বার লোকসভায় গড়ে ১০ শতাংশ ভোট পেয়েছে দল। বিজেপি নেতৃত্বের অভিযোগ, জেলায় ভোটবৃদ্ধিতে আতঙ্কিত হয়েই তৃণমূলের লোকেরা দলের কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে আন্দোলন কর্মসূচি আরও তীব্রতর করতেই রাজ্য বিজেপির প্রতিনিধি দলের পশ্চিম মেদিনীপুর সফর বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। এ দিন সকালে মেদিনীপুর সদর ব্লকের পাচরায় বিজেপির এক মিছিল হওয়ার কথা ছিল। খবর পেয়েই তৃণমূলের কর্মীরা এলাকায় হামলা চালায়। মৃগাঙ্ক পাত্র নামে বিজেপির এক কর্মীকে জখম অবস্থায় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শনিবার পিংলার দুজিপুরে দলের কর্মী-সমর্থকদের ওপর আক্রমণ হয়েছিল। এ দিন বিজেপির জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল সেখানে যান। আক্রান্তদের সঙ্গে দেখা করেন। বিজেপির জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায়ের তোপ, “মানুষকে সঙ্গে নিয়েই আন্দোলনের পথে যাব।”